এখানেই ফিল্মসিটি হওয়ার কথা ছিল। —ফাইল চিত্র
মুখ্যমন্ত্রীর ‘স্বপ্নের’ ফিল্মসিটি শেষ পর্যন্ত হচ্ছে না উত্তরপাড়ায়।
সরকারি সূত্রের দাবি, উত্তরপাড়া থেকে প্রকল্প সরার প্রধান কারণগঙ্গার ভাঙন। তবে শাসক দলের অন্দরের খবর, প্রস্তাবিত ফিল্মসিটির জন্য চিহ্নিত এলাকায় কলকাতা পুরসভার জমি থেকে দখলদার সরানো নিয়ে দলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘাত সামলানো মুশকিল হচ্ছিল প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত নেতাদের পক্ষে। সেটাও প্রকল্প সরার পিছনে অন্যতম কারণ হতে পারে।
কেন প্রকল্প সরছে সে জবাব এড়িয়ে কলকাতা পুরসভার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বুধবার বলেছেন, “উত্তরপাড়ায় ওই প্রকল্প হচ্ছে না। এটুকুই বলতে পারি।” কলকাতা পুরসভা এবং রাজ্য তথ্যসংস্কৃতি দফতর সূত্রের খবর, দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুরে ওই ফিল্মসিটি করার ব্যাপারে সরকারি স্তরে ভাবনাচিন্তা চলছে।
উত্তরপাড়ায় জিটি রোড এবং গঙ্গার মাঝখানে শিবতলার শ্মশান লাগোয়া জমি রয়েছে কলকাতা পুরসভার। রাজ্যে ক্ষমতায় এসেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, ওই জমিতে প্রায় ৪০০ বিঘা জুড়ে ফিল্মসিটি তৈরি হবে। সভা-সমাবেশেও ফিল্মসিটির কথা ‘স্বপ্নের প্রকল্প’ বলেই উল্লেখ করে থাকেন মুখ্যমন্ত্রী। সরকারি ঘোষণার পরে একাধিক বার ওই জমি পরিদর্শন করেছেন টালিগঞ্জের অভিনেতা-অভিনেত্রী, কলাকুশলীরা। কিন্তু সে জমির দখল নিতে গিয়ে বেগ পায় স্থানীয় প্রশাসন।
বাধা আসে ওই জমিতে চলা ইটভাটা মালিকদের থেকে। তাঁরা দাবি করেন, জমির মালিকানা তাঁদের। তারই মধ্যে অন্তত ৬০ লক্ষ টাকা খরচ করে টিনের প্রাচীর দিয়ে জমি ঘিরে ফেলে রাজ্য সরকার। কিন্তু ইটভাটার মালিকেরা কলকাতা হাইকোর্টে যান। হাইকোর্ট চলতি বছরের ১০ মার্চ পর্যন্ত ওই জমি দখলের প্রক্রিয়ার উপরে স্থগিতাদেশ দেয়। সে মামলা এখনও চলছে।
ইতিমধ্যে রাজ্য সরকার একটি বেসরকারি সংস্থাকে ওই জমিতে ফিল্মসিটি তৈরির সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে সমীক্ষা করার নির্দেশ দেয়।
প্রশাসন সূত্রের খবর, দিন কয়েক আগে সেই সংস্থা যে রিপোর্ট দিয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, গঙ্গার ভাঙনে ওই জমির ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। পরিকাঠামোগত কিছু অসুবিধার কথাও রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। এর পরেই রাজ্য সরকার উত্তরপাড়ায় ফিল্মসিটি তৈরির বিষয়টি থেকে সরে আসার ব্যাপারে মনস্থির করে বলে জানিয়েছেন রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা।
তবে তৃণমূল সূত্রের দাবি, ফিল্মসিটির জমি থেকে ইটভাটা মালিকদের সরানো নিয়ে দলের দুই জেলা নেতার দ্বন্দ্ব চরমে উঠেছিল। উত্তরপাড়া-কোতরং পুরসভার চেয়ারম্যান-ইন-কাউন্সিল তথা জেলা যুব তৃণমূলের সভাপতি দিলীপ যাদব ফিল্মসিটির কাজ দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছিলেন। আবার উপপুরপ্রধান পিনাকী ধামালি ইটভাটা মালিকদের একাংশের প্রতি ‘সহানুভূতিশীল’ বলে দলেরই একাংশ মনে করে।
এই দু’পক্ষের ঝামেলা ঠেকাতে গিয়ে বেকায়দায় পড়ছিলেন শাসক দলের জেলা স্তরের নেতারাও। প্রস্তাবিত ফিল্মসিটি উত্তরপাড়া থেকে সরে যাওয়ার পিছনে সেই গণ্ডগোলও অন্যতম কারণ হতে পারে বলে দলেরই অনেকে তাই মনে করছেন। পিনাকীবাবু বলেছেন, “আমাদের দ্বন্দ্বের জন্য ফিল্মসিটি সরল, এ ব্যাখ্যা ঠিক নয়।”
দলের জেলা তৃণমূল সভাপতি তপন দাশগুপ্তও বলেছেন, “মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের ফিল্মসিটি এখানে হলে দলের কারও আপত্তি ছিল বলে আমার জানা নেই। অনেকে অনেক রকম বলবে। তাতে গুরুত্ব দিলে চলে না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy