জিটি রোডে ভোগান্তির চেনা ছবি।
এ যেন গোদের উপর বিষফোঁড়া!
এমনিতেই বর্ষায় জল জমা ও ভাঙা রাস্তা ছিল বাসিন্দাদের ফি বছরের যন্ত্রণা। তা লাঘব করতে গিয়ে এ বার রাস্তার নীচ দিয়ে যাওয়া পানীয় জলের পাইপলাইন, টেলিফোন কেবল ও নিকাশি ব্যবস্থার মতো গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবাকে স্থায়ী ভাবে প্রায় ৮ ইঞ্চি কংক্রিট দিয়ে ঢেকে ফেলা হল। যার ফলে পানীয় জলের পাইপ লাইনে বা টেলিফোনের কেব্ল লাইনে ভবিষ্যতে কোনও গোলমাল হলে সহজে যেমন সারাবার কোনও উপায় রইল না, তেমনি কোনও রাস্তা থাকল না নিকাশি সংস্কারেরও।
এমনই অবস্থা হাওড়া শহরের ‘লাইফ লাইন’ জিটি রোডের। আর এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে জেলা প্রশাসন, রাজ্য পূর্ত দফতর, হাওড়া পুরসভা ও বিএসএনএল-এর মধ্যে শুরু হল চাপান-উতোর। জেলা প্রশাসনের বক্তব্য, ওই কাজ শুরু হওয়ার অনেক আগে জন-পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত সংস্থাগুলির সঙ্গে বৈঠক করে মাটির নীচে থাকা জলের লাইন, কেবল ও নিকাশি ব্যবস্থা সরিয়ে ফেলতে বলা হয়েছিল। অন্য দিকে জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত সংস্থাগুলির দাবি, এ নিয়ে বৈঠক হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু কাজ করার জন্য পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হয়নি। পাশাপাশি, সঙ্কীর্ণ জিটি রোডে আলাদা জায়গাও মেলেনি। ফলে উত্তর হাওড়ার জরুরি পরিষেবার একটা অংশ স্থায়ী ভাবে কংক্রিটের নীচে চলে গিয়েছে।
প্রতি বর্ষায় জল জমে উত্তর হাওড়া এলাকার জিটি রোডের প্রায় ২ কিলোমিটার অংশ ভয়াবহ হয়ে উঠত। গুরুত্বপূর্ণ ওই রাস্তা জুড়ে তৈরি হত ছোট-বড় ভয়ঙ্কর গর্ত। যানবাহন চলা তো দুরের কথা, ওই রাস্তায় মানুষের হাঁটাচলাই দায় হয়ে উঠত। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, জিটি রোডের ওই বেহাল অংশ নিয়ে রাজ্য সরকারের কাছে বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তি অভিযোগ জানালে নড়েচড়ে বসে পূর্ত দফতর। গত বছর কয়েক কোটি টাকায় ম্যাস্টিক অ্যাসফল্ট দিয়ে পুরো জিটি রোড ঝাঁ-চকচকে করে তোলা হয়। কিন্তু এর পরেই পূর্ত দফতর সিদ্ধান্ত নেয় সত্যবালা আইডি হাসপাতালের কাছে যে দু’কিলোমিটার অংশে জল জমে, সেখান থেকে ম্যাস্টিক আসফল্ট তুলে স্থায়ী ভাবে কংক্রিটে বাঁধিয়ে দেওয়া হবে। এ জন্য খরচ ধরা হয় চার কোটি টাকা। পুজোর আগেই কাজ শেষ হওয়ার কথা বলা হয়।
চলছে কংক্রিট করার কাজ।
জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার আগে হাওড়া পুরসভা-সহ প্রতিটি সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, যাদের পাইপ লাইন বা কেবল লাইন মাটির নীচ দিয়ে গিয়েছে, তাদের নিয়ে জেলাশাসকের অফিসে একটি বৈঠক হয়। এ বিষয়ে হাওড়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক আরসাদ হাসান ওয়ার্দি বলেন, “বৈঠক করে সকলকে দ্রুত জলের ও কেব্ল লাইন সরিয়ে নিতে বলা হয়েছিল। কেউ সরিয়েছিলেন কি না, জানা নেই। এটা দেখার দায়িত্ব পূর্ত দফতরের।”
কিন্তু প্রশাসনের এই নির্দেশ পুরসভা কার্যকর করল না কেন? হাওড়া পুরসভার রাস্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার উত্পল চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমরা কাজ শুরু করার আগেই পূর্ত দফতর কংক্রিট ঢালাইয়ের কাজ শুরু করে। ফলে জলের পাইপ লাইন থেকে নিকাশির, কিছুই সরানো যায়নি।”
জিটি রোডের যে অংশে এই কাজ হচ্ছে, তার মধ্যেই রয়েছে বিএসেএনএল-এর হাওড়ার প্রধান দফতর। এ বিষয়ে হাওড়া জেলা বিএসএনএল এমপ্লয়িক ইউনিয়নের সম্পাদক প্রবীর দত্ত বলেন, “এই কাজ করতে আমাদের সময় দেওয়া হয়নি। তার উপর না জানিয়েই কংক্রিটের কাজ শুরু করে দেওয়া হয়েছে।”
কিন্তু জরুরি পরিষেবা মাটির নীচ থেকে না সরিয়ে কেন পাকাপোক্ত ভাবে রাস্তা কংক্রিট করা হল? জিটি রোডের দায়িত্বপ্রাপ্ত হাওড়া পূর্ত দফতরে এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সৌম্যজিত্ মাইতি বলেন, “জেলা শাসকের বাংলোয় বৈঠক করে আগেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল ওই জায়গায় মাটির নীচে থাকা সমস্ত জরুরি পরিষেবা সরিয়ে ফেলবে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলি। কেন সরানো হয়নি জানি না। আমরা সরকারি নির্দেশ মেনে কংক্রিটের কাজ শুরু করেছি।”
ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy