Advertisement
০৪ মে ২০২৪

কাজের দিন কমানোয় কাজ বন্ধ করে বিক্ষোভে শ্রমিকরা

হুগলির চটকলে শ্রমিক অসন্তোষ কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না। কাজের দিন কর্তৃপক্ষ কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় শুক্রবার কাজ বন্ধ করে ভদ্রেশ্বরের শ্যামনগর নর্থ চটকলের শ্রমিকেরা বিক্ষোভ দেখালেন। ফলে, এ দিন কোনও উত্‌পাদনই হল না। বিষয়টি নিয়ে শ্রমিক এবং মালিক পক্ষের মধ্যে চাপান-উতোর শুরু হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ভদ্রেশ্বর শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:৩৩
Share: Save:

হুগলির চটকলে শ্রমিক অসন্তোষ কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না। কাজের দিন কর্তৃপক্ষ কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় শুক্রবার কাজ বন্ধ করে ভদ্রেশ্বরের শ্যামনগর নর্থ চটকলের শ্রমিকেরা বিক্ষোভ দেখালেন। ফলে, এ দিন কোনও উত্‌পাদনই হল না। বিষয়টি নিয়ে শ্রমিক এবং মালিক পক্ষের মধ্যে চাপান-উতোর শুরু হয়েছে।

কাজের দিন বা শিফট কমিয়ে দেওয়া এবং শ্রমিকদের বসিয়ে দেওয়া নিয়ে হুগলির বিভিন্ন চটকলে ইদানীং শ্রমিক অসন্তোষ লেগেই রয়েছে। শ্রমিকেরা কাজে নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন। এর ফলে, তাঁরা মারমুখী হয়ে উঠেছেন কোথাও কোথাও। একই কারণে রিষড়ার হেস্টিংস জুটমিল, শ্রীরামপুরের ইন্ডিয়া জুটমিল, ভদ্রেশ্বরের অ্যাঙ্গাস, ভিক্টোরিয়া বা নর্থব্রুক-সহ বিভিন্ন চটকলে অশান্তি চরমে উঠেছে।

শ্যামনগর নর্থ চটকলের পরিস্থিতি এখনও ততটা ঘোরালো না হলেও কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, শ্রমিকেরা বেআইনি ভাবে কাজ বন্ধ করায় উত্‌পাদন ব্যাহত হচ্ছে। তাঁরা কাজে যোগ না দিলে মিল চালু রাখা সম্ভব নয়।

চটকলের চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার কল্যাণ মিত্র বলেন, “আমরা চটকল বন্ধ করিনি। শ্রমিকেরাই কাজ বন্ধ করেছেন। ফলে, উত্‌পাদন ব্যাহত হচ্ছে। শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।” মিলের ‘ব্যাচিং’ বিভাগের কর্মী তথা তৃণমূল সমর্থিত শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি নেতা লালবাবু সিংহ বলেন, “মিলের অবস্থা ভালই ছিল। শুধু কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালিপনায় পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। বর্তমানে চটশিল্পে ভরাডুবির কারণ কর্তৃপক্ষের তুঘলকি সিদ্ধান্ত।”

চন্দননগরের উপ-শ্রম কমিশনার তীর্থঙ্কর সেনগুপ্ত বলেন, “চটকল কর্তৃপক্ষ আমাদের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই কাজের দিন কমানোর বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন। ওই বিজ্ঞপ্তিতে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা যাতে হয়, সে দিকে নজর রাখা হচ্ছে।”

চটকল সূত্রের খবর, বরাত না থাকায় বেশ কিছু দিন ধরেই মন্দা চলছে। সেই কারণে সপ্তাহে প্রতি দিন শ্রমিকদের কাজ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এমনিতে সপ্তাহে ৬ দিন কাজ হচ্ছিল। বৃহস্পতিবার রাতে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়, ছ’দিনের পরিবর্তে সপ্তাহে পাঁচ দিন কাজ হবে। আগামী ২৮ ডিসেম্বর থেকে ওই নির্দেশ কার্যকর হবে। কাঁচা পাটের দামবৃদ্ধি এবং কম উত্‌পাদনশীলতার কারণেই এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন কর্তৃপক্ষ।

ওই বিজ্ঞপ্তি দেখে শ্রমিকদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। রাতের শিফটে কর্মরত ‘ব্যাচিং’ বা তাঁত বিভাগের শ্রমিকেরা কাজ বন্ধ করে বেরিয়ে যান। দু’পক্ষের মধ্যে বিরোধ বাড়ে। শুক্রবার সকালে কিছু শ্রমিক কাজে যোগ দিতে আসেন। তাঁরাও ওই বিজ্ঞপ্তি দেখে খেপে ওঠেন। তাঁদের আশঙ্কা, এ ভাবে কাজের দিন কমিয়ে দেওয়ায় আখেরে তাঁদের রোজগারে টান পড়বে। অবিলম্বে ওই বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার করে সপ্তাহে ছ’দিনই কাজ চালুর দাবিতে শ্রমিকেরা এ দিন কাজে যোগ দেননি। তাঁরা বিক্ষোভ দেখান।

বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, মিল কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালিপনায় পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। স্থায়ী শ্রমিকদের কাজ না দিয়ে অনৈতিক ভাবে বাইরে থেকে কম পয়সায় ঠিকা শ্রমিক এনে কাজ চালানোর বন্দোবস্ত করতেই নানা ফন্দিফিকির করছে‌ন। সিপিএম প্রভাবিত শ্রমিক সংগঠন সিটু’র নেতা নরেশ সাউ বলেন, “কর্তৃপক্ষের ভুল সিদ্ধান্তের ফলে চটশিল্প ডুবতে বসেছে।” স্প্রিং বিভাগের কর্মী লালন রায় বলেন, “ছ’দিনের জায়গায় পাঁচ দিন কাজ হলে বেতন কমবে। সংসার চালানো দুষ্কর হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE