মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা আগামী ৩১ মার্চ। মেয়াদ আরও বাড়ানো হবে কিনা সে ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও নির্দেশিকার আসার আগেই হুগলি জেলার জাতীয় শিশু শ্রমিক কল্যাণ প্রকল্পের অধীন স্কুলগুলির ছাত্রছাত্রীদের মূলস্রোতের স্কুলে ভর্তি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসন থেকে।
এর ফলে কাজ হারানোর আশঙ্কায় দিশাহারা ওই সব স্কুলের প্রশিক্ষক ও কর্মীরা। কীসের প্রেক্ষিতে জেলাশাসক এই নির্দেশ দিয়েছেন সেই প্রশ্ন তুলে বিক্ষোভে সামিল হয়েছেন জেলার শিশু শ্রমিক স্কুলগুলির প্রশিক্ষক এবং কর্মীরা। তাঁদের স্কুলগুলি থেকে ছাত্রছাত্রী তুলে না নেওয়ার দাবিতে পুরসভা-ব্লক-মহকুমাশাসকের অফিস ছাড়াও জেলা শাসকের দফতরেও ধর্নায় সামিল হয়েছেন তাঁরা। তাঁদের অভিযোগ, জেলা প্রশাসন নিজেদের গাফিলতি ঢাকতে অন্যায়ভাবে প্রকল্পটিকে তুলে দিতে চাইছে।
যদিও জাতীয় শিশু শ্রমিক কল্যাণ প্রকল্পের (এনসিএলপি) হুগলি জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক সুমি বিশ্বাস বলেন। “কেন্দ্রীয় সরকারের এই প্রকল্পটি বন্ধ করার প্রশ্নই নেই। হুগলিতে প্রকল্পটির মেয়াদ ২০১৫ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত। তার আগে শিশুদের মূলস্রোতের স্কুলগুলিতে আনতে চাইছি আমরা। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লে তখন সেইমত পদক্ষেপ করা হবে।”
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জাতীয় শিশু শ্রমিক কল্যাণ প্রকল্পের অধীনে ২০০৬ সাল থেকে হুগলিতে মোট ৬৮টি স্কুল চলছিল। বর্তমানে চলছে ৬৫টি। ইটভাটা, হোটেল, চায়়ের দোকান বা পরিচারিকার মতো বিভিন্ন পেশায়় যুক্ত থাকা ছেলেমেয়েদের এই স্কুলগুলিতে পড়ার কথা। চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত এই সব স্কুলপিছু ৫০ জন ছাত্রছাত্রী এবং প্রশিক্ষক এবং কর্মী মিলিয়ে ৪ জন রয়েছেন। ওই সব স্কুলের ছাত্রভাতা মাথা পিছু ১৫০ টাকা এবং প্রশিক্ষক ও কর্মীদের বেতন যথাক্রমে ৪ হাজার ও ২ হাজার টাকা। ওই টাকার পুরোটাই দেয় কেন্দ্র। প্রতি ৬ মাস অন্তর স্কুলগুলির মেয়াদ বাড়ানো হয়। হুগলির ক্ষেত্রে সেই মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ২০১৫ সালের ৩১ মার্চ। তার আগেই গত ১৭ ডিসেম্বর জেলাশাসক মনমিত নন্দার স্বাক্ষর করা একটি চিঠি সমস্ত ব্লক-পুরসভা এলাকা এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে জেলার ৬৫টা শিশু শ্রমিক স্কুলের সমস্ত ছাত্রছাত্রীদের কাছাকাছি মূলস্রোতের স্কুলে ভর্তি করতে হবে। কিন্তু প্রশাসনিক নানা মহলের অভিযোগ, স্কুলগুলির প্রশিক্ষকদের অসহযোগিতায় শিশু শ্রমিক স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের মূলস্রোতে আনার কাজ প্রায় হয়নি বললেই চলে। যদিও শিশুশ্রমিক স্কুলের প্রশিক্ষক আরামবাগের চন্দন নন্দী, সিঙ্গুরের সৌম্য দত্ত, গোঘাটের তাপস বাগ, শ্রীরামপুরের দেবাশিস দে’র দাবি, তাঁরা কোথাও কোনওরকম বাধা দেননি। শুধুমাত্র প্রশাসনের কাছে জানতে চেয়েছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের এই প্রকল্প কেন্দ্রের কোনও নির্দেশিকা ছাড়াই জেলা প্রশাসন বন্ধ করতে পারে কি না।
তাঁদের আরও অভিযোগ, জেলা প্রশাসনের গাফিলতির কারণেই এক বছর ধরে তাঁরা বেতন পাচ্ছেন না। শ্রমিক স্কুলের শিশুরা মাসে দেড়শো টাকা করে যে ভাতা পেত তাও বন্ধ। প্রতিমাসে একদিন চিকিৎসকের এসে ছাত্রছাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার কথা। কিন্তু সেটাও হয়নি একবছর ধরে। তাঁদের অভিযোগ, প্রকল্প সংক্রান্ত হিসাবনিকাশ বা কাগজপত্র জেলা প্রশাসন ঠিক সময়ে কেন্দ্রের কাছে না পাঠানোতেই এই বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। আর তা থেকে বাঁচতেই প্রকল্পটি চালাতে চাইছে না জেলা প্রশাসন।
অভিযোগ অস্বীকার করে প্রকল্পটির হুগলি জেলার ডিরেক্টর আনন্দমোহন মজুমদার বলেন, “হিসাব পাঠানো নিয়ে কোথাও কোনও অসঙ্গতি নেই। পরিকল্পিতভাবেই জাতীয় শিশু শ্রমিক প্রকল্পের অধীন শিশুদের সর্বশিক্ষা মিশন প্রকল্পের আওতায় আনা হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy