বন্ধ কারখানার জমি খাস করার দাবি আদায়ে সফল হয়েছেন শ্রমিকরা। এ বার সেই জমি শ্রমজীবী হাসপাতালকে বিক্রি করার দাবিতে তাঁরা পথে নামছেন। উদ্দেশ্য : ওই হাসপাতালের সম্প্রসারণ। ১৫ ফেব্রুয়ারি ‘শ্রমজীবী হাসপাতাল সহযোগী মঞ্চ’-এর উদ্যোগে বেলুড়ের লালবাবা কলেজে নাগরিক কনভেনশন হতে চলেছে। মঞ্চের তরফে ভারতীয় ফুটবল দলের প্রাক্তন অধিনায়ক সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “শ্রমজীবী হাসপাতাল বাণিজ্য করে না। দীর্ঘ দিন ধরে তারা জনকল্যাণমূলক কাজ করে আসছে। জমিটা পেলে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবেন।”
বন্ধ ইন্দো-জাপান স্টিল কারখানার শ্রমিক, কিছু তরুণ চিকিৎসক এবং এলাকার মানুষের মিলিত প্রচেষ্টায় ওই কারখানারই এক চিলতে জমিতে বছর ত্রিশেক আগে গড়ে ওঠে শ্রমজীবী হাসপাতাল। সেখানে নিম্নবিত্ত মেহনতী মানুষের সাধারণ, জটিল সব ধরনের রোগের চিকিৎসা হয় যথাযথ মূল্যে। কিন্তু রোগীর সংখ্যা ক্রমাগত বেড়ে চলায় হাসপাতালে স্থানাভাবে সকলের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করা যাচ্ছে না। ২০০৫-এ কার্ডিয়াক সার্জারি ইউনিট শুরু করেও স্থানাভাবে তা বন্ধ করে দিতে হয়। স্থান সংকুলান করতে অন্যত্র জমি কিনে হাসপাতাল সম্প্রসারণ করতে বাধ্য হচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ১৯৯৬-এ ইন্দো-জাপান স্টিল কারখানা বন্ধ হওয়ার পর তাদের ১৪ বিঘা জমি অব্যবহৃত পড়ে। সেখানেই হাসপাতাল সম্প্রসারণ করা গেলে রোগীদের সুবিধা হয়। তাই ওই জমি কিনতে উদ্যোগী হয়েছে ‘শ্রমজীবী হাসপাতাল সহযোগী মঞ্চ’।
১৯৫৫-এর জমি আইনে বলা আছে, শিল্পের জন্য চিহ্নিত সরকারি জমিতে সংশ্লিষ্ট শিল্প না হলে বা গড়ে উঠেও বন্ধ হলে সরকার তাকে খাস জমি বলে ঘোষণা করবে। কিন্তু ইন্দো-জাপান স্টিল কারখানার ক্ষেত্রে সরকারকে এই আইন মানাতে আন্দোলনে নামতে হয় শ্রমিকদের।
জিটি রোডের ধারে ওই জমি প্রোমোটারদের কাছে যথেষ্ট লোভনীয়। ফলে কারখানা বন্ধের ছ’ মাসের মধ্যে প্রোমোটাররা অসাধু কিছু সরকারি কর্মীর সাহায্যে বেআইনি ভাবে জমির চরিত্র বদলে অন্য একটি সংস্থার নামে চিহ্নিত করে। ইন্দো-জাপান স্টিল এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন-এর সম্পাদক ফণিগোপাল ভট্টাচার্যের অভিযোগ, “যে সংস্থার নামে জমির চরিত্র বদল করা হয়, তার এখন অস্তিত্বই নেই।”
এই অবস্থায় শ্রমিকরা ভূমি দফতরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, জমিটি খাস। সেই সত্য সরকারকে মানাতে ২০১১-তে আন্দোলনে নামেন শ্রমিক এবং স্থানীয়রা। ঘেরাও হয় বিএলআরও অফিস। আন্দোলনের চাপে ভূমি দফতর ২০১৪-তে ওই জমিকে খাস বলে মানে। এখন ইন্দো-জাপানের শ্রমিকদের দাবি, ওই খাস জমি শ্রমজীবী হাসপাতালকে সরকারি দামে বিক্রি করা হোক। যাতে সেখানে হাসপাতাল সম্প্রসারণ করা যায়। কিন্তু সরকারের তরফে ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। তাই শ্রমিকদের পথে নামার সিদ্ধান্ত। হাওড়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) নিশীথ অধিকারী বলেন, “ওই জমি পেতে শ্রমজীবী হাসপাতালকে আইন মেনে আবেদন করতে হবে। তার পর সরকার তা বিবেচনা করে দেখবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy