প্রযুক্তি খরচ কমিয়ে ইন্দিরা আবাস যোজনায় গৃহ নির্মাণ প্রকল্পের দ্রুত অগ্রগতির জন্য তৎপর হল হুগলি জেলা প্রশাসন।
একদিকে সরকারি বরাদ্দ ৭০ হাজার টাকায় এই প্রকল্পে ঘর তৈরির কাজ শেষ করা নিয়ে উপভোক্তাদের ক্ষোভ রয়েছে। কারণ পুরো টাকা খরচ হয়ে গেলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাড়ি নির্মাণ সম্পূর্ণ হচ্ছে না। অন্যদিকে প্রকল্পের টাকার বেহিসাবি খরচ নিয়ে উপভোক্তাদের বিরুদ্ধেও নানা অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে উদ্বিগ্ন জেলা প্রশাসন। এই দুই সঙ্কট কাটিয়ে প্রকল্পের যাতে দ্রুত যথাযথ রূপায়ণ হয় সে জন্য সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট ব্লক এবং পঞ্চায়েত আধিকারিকদের নিয়ে প্রশিক্ষণ হয়ে গেল হুগলি ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে। হুগলির সঙ্গে হাওড়া জেলারও সংশ্লিষ্ট ব্লক এবং পঞ্চায়েত আধিকারিকরা ওই প্রশিক্ষণ কর্মসূচীতে যোগ দিয়েছিলেন।
হুগলির অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) সুমন ঘোষ বলেন, “ইন্দিরা আবাস যোজনায় বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে সরকারি আধিকারিকদের অন্ধকারে রেখে উপভোক্তারা অনেকেই পরিকল্পনাহীন খরচ করে ফেলছেন। বরাদ্দ টাকা যাতে সদ্ব্যবহার হয় সেই উদ্দেশ্যেই নির্মাণ কাজে নয়া প্রযুক্তি নিয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হয়েছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সরকারি আধিকারিকরা নতুন প্রযুক্তি নিয়ে উপভোক্তাদেরও সচেতন করবেন।”
প্রকল্প রূপায়ণের ক্ষেত্রে উপভোক্তা এবং বিভিন্ন জেলা প্রশাসনের অভাব অভিযোগগুলির গুরুত্ব বুঝে কেন্দ্রীয় পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের ব্যবস্থাপনায় এই প্রশিক্ষণ বলে হুগলি জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, বিভিন্ন ব্লকের সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার ও পঞ্চায়েত স্তরের নির্মাণ সহায়কদের গত ১৩-১৭ জানুয়ারি প্রশিক্ষণ দেন কলকাতার ‘ফোরাম অব সায়েন্টিস্ট, ইঞ্জিনিয়ারস অ্যান্ড টেকনোলজিস্ট (ফসেট)-এর বিশেষজ্ঞরা।
নয়া প্রযুক্তিতে বাড়ি নির্মাণে গুনগতমান বজায় রেখেও গড়ে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ খরচ কমানো যাবে বলে জানিয়েছেন ফসেট-এর বিশেষজ্ঞ অনাদি শঙ্কর বসু। তিনি বলেন, “নতুন প্রযুক্তি তত্ত্বগুলির অন্যতম, ১০ ইঞ্চি ইটের গাঁথনি মধ্যে ইঁদুর ফাঁদের (rat trap bond) মতো ফাঁক রাখা। এতে ২০ শতাংশ ইট কম খরচ হবে। ফলে মশলা কম লাগবে এবং সার্বিকভাবে দেওয়ালের ওজন কম হয়ে ভিত নির্মাণের খরচও কমে যাবে। এ ছাড়া ছাদ নির্মাণের ক্ষেত্রে কংক্রিটের বদলে টালি ব্যবহার করে খরচ সাশ্রয় করা যেতে পারে।” সর্বোপরি বিশেষ পদ্ধতিতে ট্রিটমেন্ট করা বাঁশের মাঁচা তৈরি করে তার উপর প্লাস্টার করে বাড়ি নির্মাণ করলে খরচ অনেক কমে যাবে এবং বাড়িও অন্তত ৩০ বছর ভাল থাকবে বলে অনাদিবাবু জানান।
প্রসঙ্গত, হুগলির ক্ষেত্রে গত আর্থিক বছরে অনুমোদিত ১১ হাজার ২১৬টি (লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১২ হাজার ৮৭৬) বাড়ির মধ্যে অর্ধেকের বেশি উপভোক্তা তৃতীয় কিস্তি পাওয়ার শর্তই পূরণ করতে পারেননি। প্রকল্পে মোট বরাদ্দ ৭০ হাজার টাকার প্রথম কিস্তিতে দেওয়া হয় ১৭ হাজার ৫০০ টাকা, দ্বিতীয় কিস্তিতে ৪২ হাজার টাকা, আর তৃতীয় কিস্তিতে ১০ হাজার ৫০০টাকা। উপভোক্তার নাম অনুমোদন হলেই প্রথম কিস্তির টাকা দেওয়া হয়। দ্বিতীয় কিস্তি দেওয়ার আগে দেখার কথা লিন্টন পর্যন্ত কাজ হয়েছে কিনা। আর তৃতীয় তথা শেষ কিস্তির টাকা দেওয়া হয় বাড়ির ছাদ ঢালাই হওয়ার ছবি পেলে। অর্থাৎ বাড়ি প্রায় সম্পূর্ন হতে হবে।
প্রকল্পে ২১৫ স্কোয়ার ফুট জায়গা নিয়ে স্বাস্থ্যসম্মত বাড়ি নির্মাণের কথা বলা হয়েছে। প্রকল্পে যে ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়েছে তাতে প্রকল্পের নিয়ম মেনে যথাযথ বাড়ি তৈরি অসম্ভব বলে মত উপভোক্তাদের। তাঁদের দাবি, প্রথম দুই কিস্তির টাকায় বাড়ি নির্মাণ কার্যত অসম্ভব। জানালা পর্যন্ত গাঁথনির আগেই টাকার বড় অংশ খরচ হয়ে যায়।
সেই কারণেই ২০১৪ সালের জুলাই মাস নাগাদ এই প্রকল্পের সঙ্গে ১০০ দিন কাজ প্রকল্পের সমন্বয় সাধন করা হয়। এর ফলে বাড়ির ছাদ ঢালাই পর্যন্ত মজুরি বাবদ (৯০টি) ১৬৯ টাকা করে ১৫ হাজার ২১০ টাকা পাবেন উপভোক্তা। সম্প্রতি স্বচ্ছ ভারত অভিযান প্রকল্পের সঙ্গেও সমন্বয় সাধন হয়েছে ইন্দিরা আবাসের। ফলে শৌচাগারের জন্য ১২ হাজার টাকা পাবেন উপভোক্তা। ফলে তিন প্রকল্পের সমন্বয়ে বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে মোট তহবিল পাওয়া যাচ্ছে ৯৭ হাজার ২১০ টাকা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy