Advertisement
০২ জুন ২০২৪
শুকিয়ে গিয়েছে মান্দারিয়া খাল

ডিভিসি-র জল না পেয়ে মাথায় হাত আমতার বোরোচাষিদের

রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় আশ্বাস দিয়েছিলেন বোরো ধান চাষের ক্ষেত্রে ডিভিসি-র জল পেতে কোনও সমস্যা হবে না। হাওড়া জেলায় ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে বোরো ধান চাষের মরসুম। কিন্তু মন্ত্রীর আশ্বাস সত্ত্বেও ডিভিসির জল অধরাই থেকে গিয়েছে চাষিদের কাছে। ফলে সমস্যায় পড়ছেন আমতা-২ ব্লকের ৫-৬টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার কয়েক হাজার চাষি।

জল নেই। আমতায় সেচের অন্যতম প্রধান সহায় মান্দারিয়া খাল। ছবি: সুব্রত জানা।

জল নেই। আমতায় সেচের অন্যতম প্রধান সহায় মান্দারিয়া খাল। ছবি: সুব্রত জানা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
জয়পুর শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:৪২
Share: Save:

রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় আশ্বাস দিয়েছিলেন বোরো ধান চাষের ক্ষেত্রে ডিভিসি-র জল পেতে কোনও সমস্যা হবে না। হাওড়া জেলায় ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে বোরো ধান চাষের মরসুম। কিন্তু মন্ত্রীর আশ্বাস সত্ত্বেও ডিভিসির জল অধরাই থেকে গিয়েছে চাষিদের কাছে। ফলে সমস্যায় পড়ছেন আমতা-২ ব্লকের ৫-৬টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার কয়েক হাজার চাষি। তাঁদের অভিযোগ, জলের দাবিতে বারবার ব্লক প্রশাসনের সঙ্গে তাঁরা যোগাযোগ করলেও কোনও আশ্বাস পাচ্ছেন না।

প্রতি বছর জেলায় যেখানে এক হাজারের বেশি হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়, সেখানে চলতি বছরে বহু চাষি জল না পাওয়ার আশঙ্কায় হাজার হাজার টাকা ব্যয় করে বীজ বুনতেও সাহস পাচ্ছেন না। অনেকে আবার আশায় বুক বেঁধে বীজ বুনছেন। কিন্তু বীজ রোপণ করতে পারবেন কি না তা ভেবে কুল পাচ্ছেন না। চাষিদের দাবি, ধানচাষ ছাড়াও জলের অভাবে এখন মার খাচ্ছে সবজি চাষ।

সেচ দফতর ও স্থানীয় চাষিদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, হাওড়ার এই এলাকায় বোরো চাষ সম্পূর্ণ নির্ভর করে ডিভিসি-র ছাড়া জলের ওপরে। আমতা-২ ব্লকের জয়পুর, ঝিখিরা, থলিয়া, বিনলা-কৃষ্ণবাটি, অমরাগুড়ি এই সব এলাকার এক হাজার একরেরও বেশি জমিতে চাষিরা ধান ছাড়াও আলু, সরিষা, ও নানা সবজি চাষ করেন। কিন্তু জলের অভাবে সেই সব চাষও তারা ঠিকমতো করতে পারছেন না। কারণ, বিভিন্ন খাল এখন প্রায় জলশূন্য। ধানচাষের মরসুম শুরু হয়ে গিয়েছে। ডিসেম্বরে চাষিরা বীজ বোনেন ও জানুয়ারির শুরুর দিক থেকে বীজ রোপণ করেন। ওই সময় থেকেই প্রচুর জলের প্রয়োজন হয়। সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই সব এলাকায় চাষের জল পাওয়ার জন্য মুণ্ডেশ্বরী নদীর ওপর চিংড়া, শশাপোতা, গরুপোড়া-সহ বিভিন্ন জায়গায় নদীর উপরে বাঁধ দিয়ে জল ধরে রেখে তা বিভিন্ন সেচখালে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। চিংড়ার বাঁধের ফলে হুগলির খানাকুলের বিস্তীর্ণ এলাকার চাষিরা জল পান। আর শশাপোতা ও গরুপোড়া এলাকায় বাঁধ দেওয়ার ফলে হাওড়ার আমতা-২ ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকার চাষিরা জল পান। চাষিদের দাবি, প্রথমে হুগলি চিংড়ায় বাঁধ বেঁধে জল নেয়। পরে শশাপোতা ও গরুপোড়ায় বাঁধ দিয়ে হাওড়ার চাষিরা জল নেন। কিন্তু ডিভিসি যদি পর্যাপ্ত জলই না ছাড়ে, সে ক্ষেত্রে হাওড়ার চাষিরা কার্যত বোরো চাষই করতে পারবেন না বলে তাঁদের দাবি।

ঝিখিরার এক চাষি রাধানাথ চট্টোপাধ্যায় ৫ বিঘা জমিতে চাষ করেন। এবারে তিনি মাত্র কয়েক বিঘায় চাষের মতো বীজ বুনেছেন। তিনি বলেন, “জল না পেলে ওইটুকুও চাষ করতে পারব না। কী হবে কিছুই বুঝতে পারছি না।”

জয়পুরের চাষি নিতাই দাসেরও ৫ বিঘা জমি রয়েছে ঝামটিয়া এলাকায়। তিনি বলেন, “জলের অভাবের ভয়ে এবারে এখনও পর্যন্ত বীজ বুনতেই পারিনি। কবে বীজ বুনব আর কবেই তা রোপণ করব জানি না। এবার হয়তো চাষই করা হবে না।”

একই সমস্যা অমরাগড়ের দিলীপ দাস, বিনোলা কৃষ্ণবাটির রবীন বন্দ্যোপাধ্যায়, অনিল দলুইদেরও। তবে এই সমস্যার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকেই দায়ী করেছেন হাওড়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি অজয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “কেন্দ্র বিমাতৃসুলভ আচরণ করে চাষের সময় ডিভিসি থেকে জল দেওয়া বন্ধ রাখতে চাইছে। এটা চক্রান্ত। আমরা প্রশাসনিক পর্যায়ে আলোচনা করছি সমস্যা সমাধানের জন্য।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

dvc jaipur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE