Advertisement
০১ মে ২০২৪

তিন মাস পার, শুরুই হল না বকপোতা সেতু সারানোর কাজ

মাস তিনেক আগে বকপোতা সেতু বসে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল যান চলাচল। দ্রুত সারানোর আশ্বাস দিয়েছিল প্রশাসন। কিন্তু তিন মাস পেরিয়ে গেলেও দামোদরের উপরে হুগলির জাঙ্গিপাড়া এবং হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের মধ্যে সংযোগরক্ষাকারী ওই সেতু সারানোর কাজ এখনও শুরুই হল না। ফলে, পুজোর মুখে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন দুই জেলার কয়েক হাজার মানুষ। অ্যাম্বুল্যান্স না চলায় বিপাকে পড়ছেন রোগীরা। সমস্যায় সব্জি-বিক্রেতারাও।

ভাঙা সেতু দিয়েই চলছে যাতায়াত।

ভাঙা সেতু দিয়েই চলছে যাতায়াত।

মনিরুল ইসলাম
উদয়নারায়ণপুর শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:২৫
Share: Save:

মাস তিনেক আগে বকপোতা সেতু বসে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল যান চলাচল। দ্রুত সারানোর আশ্বাস দিয়েছিল প্রশাসন। কিন্তু তিন মাস পেরিয়ে গেলেও দামোদরের উপরে হুগলির জাঙ্গিপাড়া এবং হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের মধ্যে সংযোগরক্ষাকারী ওই সেতু সারানোর কাজ এখনও শুরুই হল না। ফলে, পুজোর মুখে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন দুই জেলার কয়েক হাজার মানুষ। অ্যাম্বুল্যান্স না চলায় বিপাকে পড়ছেন রোগীরা। সমস্যায় সব্জি-বিক্রেতারাও।

সেতুটি সারানোর কথা পূর্ত দফতরের। হাওড়া জেলা পূর্ত দফতরের নির্বাহী ইঞ্জিনিয়ার চন্দন সেন বলেন, “আমি সেতুটির হাল দেখেছি। যান চলাচলের পরিস্থিতি নেই। সারানোর বিষয়টি নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে। তবে, প্রস্তাবিত নতুন সেতুর কাজই দ্রুত শুরু করা হবে। আপাতত সে দিকেই জোর দেওয়া হচ্ছে।” উদয়নারাণপুরের তৃণমূল বিধায়ক সমীর পাঁজা অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, পুরনো সেতুটির কিছু সংস্কারের ব্যাপারে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলবেন এবং নতুন সেতুটি দ্রুত তৈরির ব্যবস্থা করবেন।

পূর্ত দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ৪১ বছরের পুরনো বকপোতা সেতুতে বারবার নানা সমস্যা দেখা দেওয়ায় পাশেই একটি নতুন সেতু তৈরির পরিকল্পনা করা হয় ২০০৮ সালে। গত ৮ জুন পুরনো সেতুটি বসে যায়। পর দিন থেকে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় প্রশাসন। পরিদর্শনে আসেন ইঞ্জিনিয়াররা। তাঁদের নির্দেশে সেতুর দু’প্রান্ত পাঁচিলে ঘেরা হয়। ফলে, এখন শুধু হেঁটেই যাতায়াত করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। অথচ, এই সেতুরা মাধ্যমে দুই জেলার মানুষের নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। তাঁরা স্কুল-কলেজ, অফিস-কাছারি, হাটবাজার-সহ নিত্য প্রয়োজনে উদয়নারায়ণপুর ও জাঙ্গিপাড়ায় যাতায়াত করেন এই সেতু দিয়েই। এ ছাড়াও, উদয়নারায়ণপুর থেকে বোড়ল হয়ে হাওড়া পর্যন্ত বাস যায়। কিন্তু সেতু দিয়ে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বহু নিত্যযাত্রী সমস্যায় পড়ছেন।

কেন আশ্বাস দেওয়া সত্ত্বেও সেতুটি বসে যাওয়ার পরে দ্রুত সারানোর কাজে হাত দিল না পূর্ত দফতর?


সংস্কারের বদলে ‘বিপজ্জনক’ লিখেই দায় সেরেছে প্রশাসন।

ওই দফতরের দাবি, বর্ষার মরসুমে দামোদরে জল বেশি থাকায় কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না। জল কমলে ভাবনাচিন্তা করা হবে। তবে, দফতরের ইঞ্জিনিয়ারদের একাংশের দাবি, সেতুর যা হাল, তাতে সারানো সম্ভব নয়। নতুন যে সেতুটি তৈরির প্রক্রিয়া চলছে, সেটাকেই দ্রুত শেষ করা হবে। তবে, প্রস্তাবিত সেতুর জন্য এখনও জমি অধিগ্রহণ শেষ হয়নি। সেই কাজ শেষ করে নতুন সেতু গড়তে বেশ কয়েক বছর লাগবে।

বর্তমানে উদয়নারায়ণপুর থেকে অটো বা ভাড়া গাড়িতে চড়ে পুরনো সেতু পর্যন্ত আসছেন বহু মানুষ। তার পরে সেতু হেঁটে পেরিয়ে বাস ধরছেন। ফলে, তাঁদের খরচও বেশি হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি অসুবিধায় পড়ছেন রোগীরা। জাঙ্গিপাড়ার বহু মানুষ চিকিৎসার প্রয়োজনে উদয়নারায়ণপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে আসেন। কিন্তু সেতুতে অ্যাম্বুল্যান্স উঠতে না পারায় বহু রোগী এখন হাসপাতালে যেতে পারছেন না।

লোকসান হচ্ছে চাষিদেরও। দুই এলাকা থেকেই চাষিরা সেতু পেরিয়ে গিয়ে সব্জি বিক্রি করেন দীর্ঘদিন ধরে। কিন্তু সেতু বসে যাওয়ার পর থেকে বহু সব্জি-বিক্রেতাই যাতায়াত কমিয়ে দিয়েছেন। খেত থেকেই তাঁরা সব্জি বিক্রি করে দিচ্ছেন। যেমন, উদয়নারায়ণপুরের চাষি অমিত সামন্ত বলেন, “দু’বার গাড়ি পাল্টে সব্জি বাজারে নিয়ে যেতে খরচ অনেক বেশি হচ্ছে। তাই, ফড়েদেরই বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছি।”

ছবি: সুব্রত জানা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE