Advertisement
০৩ মে ২০২৪

নেই বেঞ্চ-আলো-পাখা, মাটিতে বসে পাঠ পড়ুয়াদের

ছাত্রছাত্রী ২৩০০। শিক্ষক-শিক্ষিকা মাত্র ২২ জন। ক্লাসরুম আছে। কিন্তু বেঞ্চ নেই। আলো-পাখা নেই। পড়তে হয় মাটিতে বসে। শিক্ষকের অভাবে অনেক সময়েই বন্ধ থাকে ক্লাস। এ ভাবেই দিনের পর দিন পঠন-পাঠন চলছে বাঁশবেড়িয়ার একমাত্র হিন্দি মাধ্যম স্কুল গ্যাঞ্জেস উচ্চ বিদ্যালয়ে। আর এই পরিকাঠামোগত সমস্যা এবং নানা অনিয়মে পঠন-পাঠনের মান দিনের পর দিন খারাপ হচ্ছে বলে অভিযোগ অভিভাবক এবং ছাত্রছাত্রীদের।

মেঝেয় বসেই চলছে পড়াশোনা।-নিজস্ব চিত্র।

মেঝেয় বসেই চলছে পড়াশোনা।-নিজস্ব চিত্র।

তাপস ঘোষ
বাঁশবেড়িয়া শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৪ ০০:৩৪
Share: Save:

ছাত্রছাত্রী ২৩০০। শিক্ষক-শিক্ষিকা মাত্র ২২ জন।

ক্লাসরুম আছে। কিন্তু বেঞ্চ নেই। আলো-পাখা নেই। পড়তে হয় মাটিতে বসে।

শিক্ষকের অভাবে অনেক সময়েই বন্ধ থাকে ক্লাস।

এ ভাবেই দিনের পর দিন পঠন-পাঠন চলছে বাঁশবেড়িয়ার একমাত্র হিন্দি মাধ্যম স্কুল গ্যাঞ্জেস উচ্চ বিদ্যালয়ে। আর এই পরিকাঠামোগত সমস্যা এবং নানা অনিয়মে পঠন-পাঠনের মান দিনের পর দিন খারাপ হচ্ছে বলে অভিযোগ অভিভাবক এবং ছাত্রছাত্রীদের।

বাঁশবেড়িয়ার গ্যাঞ্জেস জুটমিল কর্তৃপক্ষ ওই স্কুলভবনটি তৈরি করেন ১৯৯৯ সালে। বাকি দায়িত্ব গিয়ে বর্তায় রাজ্য সরকারের উপর। ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনা সরকারি অনুদানেই চলে। স্কুলটির এই পরিস্থিতিতে সরকারি উদাসীনতারও অভিযোগ তুলেছেন অভিভাবকেরা। স্কুলটিতে পড়াশোনার পরিবেশ তৈরির জন্য একাধিকবার কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদনও জানিয়েছেন তাঁরা।

আর্থিক কারণে পরিকাঠামোগত সব সমস্যা এখনই সমাধান করা যাচ্ছে না বলে মেনে নিয়েছেন প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ তিওয়ারি। একই সঙ্গে অবশ্য তিনি দাবি করেছেন, “সাংসদ ও বিধায়ক তহবিলের টাকায় স্কুলের কিছু উন্নয়ন হয়েছে। বাকি সরঞ্জাম কিনতে গেলে যে টাকার প্রয়োজন, তা স্কুলের তহবিলে নেই। ধীরে ধীরে সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।”

হুগলি জেলা স্কুল পরিদর্শক স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, স্কুল কর্তৃপক্ষ সমস্যার কথা লিখিত জানালে প্রয়োজন মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয় ওই স্কুলে। এলাকায় হিন্দিভাষী মানুষের সংখ্যা বেশি হওয়ায় স্কুলটিতে ছাত্রছাত্রীদের চাপ থাকে। চলতি বছরে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে আসনসংখ্যার অনুপাতে বেশি ছাত্রছাত্রী ভর্তি নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এ জন্য এখন সপ্তাহে তিন দিন ছেলেদের, বাকি তিন দিন মেয়েদের ক্লাস হয় বলে স্কুল সূত্রেই জানা গিয়েছে। শিক্ষা দফতরের হিসেবে ৮০ জন পড়ুয়াপিছু এক জন শিক্ষক প্রয়োজন। কিন্তু এই স্কুলে ২৩০০ ছাত্রছাত্রীকে পড়ানোর জন্য ২২ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ছাড়া রয়েছেন দু’তিন জন অস্থায়ী শিক্ষক। তাঁদের কোনও এক জন অনুপস্থিত থাকলে ক্লাস বন্ধ থাকে।

অভিভাবকদের অভিযোগ, ভর্তির সময়ে স্কুলে বসার জায়গা, আলো-পাখা কেনার খরচ বাবদ স্কুল কর্তৃপক্ষ ফি নেন। কিন্তু পরে সেই পরিষেবা মেলে না। পরিকাঠামো না থাকা সত্ত্বেও বেশি মাত্রায় ছাত্রছাত্রীকে কেন ভর্তি করানো হচ্ছে, সে প্রশ্নও তুলেছেন কেউ কেউ। এক অভিভাবক বলেন, “নানা অনুষ্ঠানে স্কুলের ঘর ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ আয় করছেন। কিন্তু স্কুলের উন্নয়নে তা খরচ করা হচ্ছে না। মিড ডে মিলও নিম্ন মানের দেওয়া হচ্ছে।”

প্রধান শিক্ষক এই সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর দাবি, “স্কুলের খরচ চালানোর জন্যই ঘর ভাড়া দেওয়া হয়। এলাকার ছাত্রছাত্রীদের চাপ থাকার জন্য বেশি সংখ্যায় ভর্তি নেওয়া হয়।” তবে, জেলা স্কুল পরিদর্শক জানিয়েছেন, বেআইনি ভাবে অনুষ্ঠানের জন্য স্কুলের ঘর ভাড়া দেওয়া হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্কুলের উন্নয়ন সংক্রান্ত বৈঠকে হাজির থাকেন বাঁশবেড়িয়ার উপ-পুরপ্রধান অমিত ঘোষ। তিনিও স্কুলের সমস্যার কথা জানেন। স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা চলছে বলে তাঁর আশ্বাস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE