ডানকুনির একদা নিকাশি এই খাল এখন ‘গোবর খাল’ বলে পরিচিত।
বয়স মেরে কেটে পাঁচ। কিন্তু শুরুতেই যেন অকাল বার্ধক্যের ছোঁওয়া শরীরে। পুরসভার নানা কাজ নিয়ে অসন্তোষের শেষ নেই ডানকুনির মানুষের।
ডানকুনি পঞ্চায়েত থেকে পুরসভায় উন্নীত হয়েছে পাঁচ বছর আগেই। কিন্তু এলাকার শ্রী সেইভাবে ফেরেনি। নতুন পুরসভা গঠনের পর মানুষের যে প্রত্যাশা ছিল তা পূরণে পুর কর্তৃপক্ষকে সে ভাবে যত্নবান হতে দেখা যায়নি। ফলে পুরসভার তকমা পাওয়ার পরে এলাকায় উন্নয়নের ধারাবাহিকতার যে উজ্জ্বল ছবি আশা করা গিয়েছিল তা বর্তমানে অনেকটাই ফিকে।
কেন্দ্রীয় সরকারের পুর এলাকায় বস্তি উন্নয়ন প্রকল্পে ৭৮ কোটি টাকা অনুমোদন হয় কয়েক বছর আগে। সেই টাকায় কাজও শুরু হয়। কিন্তু প্রকল্পের বাকি টাকা এ পর্যন্ত আসেনি। ফলে মাঝপথেই থমকে গিয়েছে বস্তি উন্নয়ন প্রকল্প। চাকুন্দি, খড়িয়াল, গোবরা-সহ বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি হয়েছে। অথচ বাড়ির ছাদ হয়নি। হয়নি শৌচাগার। প্রবল শীতে ওই অবস্থাতেই অসহনীয় ভাবে দিন কাটাচ্ছেন মানুষ। গোবরা এলাকার ভুক্তভোগী মানুষদের বক্তব্য, “আমাদের ঘরের সমস্যা ছিল। পুরসভার আশ্বাসে টাকা জমা দিলাম ঘরের আশায়। কিন্তু এখন কোথায় কী? পরিস্থিতি যা তাতে খুব তাড়াতাড়ি সমস্যা মেটারও কোনও লক্ষণ দেখছি না। এই ঠান্ডায় আমাদের অবস্থার কথা কেউ ভাবে?”
পুর কর্তৃপক্ষ সূত্রের খবর, রাজ্য পুর ও নগর উন্নয়ন দফতরের গাফিলতিতেই বস্তি উন্নয়নের বকেয়া টাকা আসছে না। কেন না ওই প্রকল্পের জন্য রাজ্য সরকারের তরফে যে টাকা দেওয়ার কথা তা তারা দেয়নি। পুরসভার তরফে দরবার করেও বিশেষ ফল হয়নি। ফলে বকেয়া বরাদ্দ না মেলায় কাজও আটকে রয়েছে। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, ম্যাচিং গ্র্যান্ট রাজ্য সরকার না দেওয়াতেই এই সমস্যা। ফলে পুরসভার কাজে টাকা মিলছে না।”
যে কোনও উন্নত শহরের প্রাথমিক শর্ত তার নাগরিক পরিষেবা। রাস্তাঘাটের পাশাপাশি উন্নত নিকাশি ব্যবস্থাও যার মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু উন্নত দূরঅস্ত, ন্যূনতম নিকাশি ব্যবস্থাও গড়ে ওঠেনি ডানকুনিতে। প্রাকৃতিক যে সমস্ত ব্যবস্থা এক সময় এলাকার জল সরে যেতে সাহায্য করত, কালক্রমে সেগুলিও অকেজো হয়ে গিয়েছে। তার উপর নাগরিক চাহিদার কারণে ডানকুনিতে জনসংখ্যার চাপ ক্রমশ বাড়ছে। জমিতে টান পড়ায় অবধারিতভাবে এলাকার পুকুরগুলি এখন প্রোমোটারদের নজরে। আর পুকুর বোজানো হলে নিকাশি ব্যবস্থায় তার প্রভাব যে পড়বে তা বলাই বাহুল্য। পাশাপাশি ডানকুনি পুরসভার নিজস্ব কোনও নিকাশি ব্যবস্থা নেই। যে নিকাশি নালা রয়েছে তা এলাকার বেআইনি খাটালের দাপটে গোবরে স্রেফ বুজে গিয়েছে। ফলে এলাকায় জল নামার জায়গা নেই। সামান্য বৃষ্টিতেই তাই জল থইথই পরিস্থিতি।
স্থানীয় এক বাসিন্দার অভিযোগ, “শুধু যে গোবরে নিকাশি নালা বুজে গিয়েছে তাই নয়, দিনের পর দিন কোনও সংস্কার নেই। তার উপর খাটালের গরুগুলিকে ইঞ্জেকশনের নিত্য কয়েক হাজার সূচ পড়ে নালায়। যা অবস্থা দাঁড়িয়েছে তাতে যন্ত্র ছাড়া সংস্কারের কাজ সম্ভব নয়। লোক লাগিয়ে সংস্কার করতে গেলে হাতে-পায়ে সূচ ফুঁড়ে অনর্থ ঘটে যেতে পারে।”
টাকা না থাকায় অসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে পুরসভার আবাসন প্রকল্প।
খাল সংস্কারে কিছুটা উদ্যোগ দেখা গিয়েছিল সাম্প্রতিক অতীতে। এর জন্য ৩৭ কোটি টাকার একটি প্রকল্প তৈরি করে রাজ্য সরকারকে জমা দেওয়া হয়। কিন্তু সেই প্রকল্পের টাকা রাজ্য অনুমোদন করেনি। ফলে আপাতত নিকাশির সমস্যা সমাধানের কোনও সম্ভাবনাও নেই।
মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা, স্থানীয় এলাকা উন্নয়নে বিধায়ক কোটার কাজ। রাস্তাঘাট থেকে নিকাশি সব ক্ষেত্রেই নিম্নমানের কাজের অভিযোগ তুলে বাসিন্দারা ওই সব কাজের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারকে এলাকায় ঢুকতে দিচ্ছেন না। ফলে কাজ বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। তার উপর সময়ে নির্বাচন না হওয়ায় পুরসভার যাবতীয় দায়ভার এখন প্রশাসকের উপর। স্থানীয় ১৯ জন কাউন্সিলারই আপাতত ক্ষমতায় নেই। ফলে ভুগছেন বাসিন্দারা। সব মিলিয়ে পুরসভা পেলেও পুর পরিষেবায় এখনও তিমিরেই ডানকুনি।
নির্বাচন হয়ে কবে ফের পুরসভা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে এখন সে দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন ডানকুনির মানুষ।
(চলবে)
ছবি: দীপঙ্কর দে।
কেমন লাগছে আমার শহর? নিজের শহর নিয়ে আরও কিছু বলার থাকলে আমাদের জানান। ই-মেল পাঠান district@abp.in-এ। subject-এ লিখুন ‘আমার শহর ডানকুনি’। ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া জানান: www.facebook.com/anandabazar.abp অথবা চিঠি পাঠান ‘আমার শহর’, হাওড়া ও হুগলি বিভাগ, জেলা দফতর, আনন্দবাজার পত্রিকা, ৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০০০১ ঠিকানায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy