Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

নরম পানীয়ের বোতলে মিলল লোহার পাত, জরিমানার নির্দেশ

দোকান থেকে কেনা নরম পানীয়ের বোতলে মিলেছিল লোহার পাত। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট পানীয় প্রস্তুতকারী সংস্থায় গাফিলতির অভিযোগ নিয়ে যোগাযোগ করেও সুবিচার পাননি বৈদ্যবাটির সুশান্ত মুখোপাধ্যায়। দ্বারস্থ হয়েছিলেন হুগলি জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের।

নিজস্ব সংবাদদাতা
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৪ ০১:৩৫
Share: Save:

দোকান থেকে কেনা নরম পানীয়ের বোতলে মিলেছিল লোহার পাত। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট পানীয় প্রস্তুতকারী সংস্থায় গাফিলতির অভিযোগ নিয়ে যোগাযোগ করেও সুবিচার পাননি বৈদ্যবাটির সুশান্ত মুখোপাধ্যায়। দ্বারস্থ হয়েছিলেন হুগলি জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের। বুধবার আদালতের প্রধান বিচারক নারায়ণচন্দ্র চক্রবর্তী ওই সংস্থার তিন আধিকারিক এবং এক ডিস্ট্রিবিউটরকে মোট ৯৫ হাজার টাকা জরিমানার নির্দেশ দিয়েছেন।

বিচারক মন্তব্য করেন, পানীয় খাওয়ার আগেই সুশান্তবাবু পাতটি না দেখলে বড় ধরনের বিপদ হতে পারত। আদালতে ওই সংস্থার পক্ষ থেকে অবশ্য পানীয় প্রস্তুতিতে গাফিলতির অভিযোগ মানা হয়নি।

২০১২ সালের ৭ অক্টোবর সুশান্তবাবু ৬০০ মিলিলিটারের ওই নরম পানীয়ের বোতলটি কেনেন বৈদ্যবাটি-চৌমাথার একটি পানের স্টল থেকে। আদালতকে তিনি জানিয়েছেন, ছিপি খোলার আগেই ‘সিল’ করা বোতলে লোহার পাতটি দেখে তিনি দোকানদারকেও তা দেখান। যোগাযোগ করেন পানীয় প্রস্তুতকারী সংস্থায়। সংস্থার দুর্গাপুর কারখানার অ্যাকাউন্টস বিভাগের দু’জন প্রতিনিধি সুশান্তবাবুর বাড়িতে এসে বোতলটি দেখে যান। কিন্তু ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে সংস্থাটি কিছুই করেনি বা গাফিলতির অভিযোগও মানেনি। ডিস্ট্রিবিউটরও গুরুত্ব দেয়নি। এর পরেই ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দ্বারস্থ হন সুশান্তবাবু। ওই সংস্থার চেয়ারম্যান-সহ তিন আধিকারিক এবং ডিস্ট্রিবিউটরের বিরুদ্ধে মামলা করেন। হলফনামাও জমা দেন।

আদালতে অভিযুক্ত পক্ষ অবশ্য অভিযোগের সারবত্তা স্বীকার করেনি। তাঁদের বক্তব্য, অভিযোগকারী বোতলটি কেনার সময়ে দোকান থেকে ক্যাশমেমো নেননি। সংস্থার অফিসাররা তদন্তের জন্য বোতলটি চাইলেও তিনি দেননি। তা ছাড়া, ওই পানীয়ের জন্য অভিযোগকারী বা তাঁর পরিবারের কারও কোনও ক্ষতি হয়নি। এই সব কারণে ওই ব্যক্তি ক্ষতিপূরণ পাওয়ার যোগ্য নন। তাঁদের অভিযুক্ত করা হলে কেন সংশ্লিষ্ট দোকানদার বা বটলিং সংস্থাকে অভিযুক্ত করা হয়নি, সেই প্রশ্নও তোলা হয় পানীয় প্রস্তুতকারী সংস্থার তরফে। তা ছাড়া, পরীক্ষার জন্য ওই পানীয় ল্যাবরেটরিতে পাঠানো উচিত ছিল বলেও তাঁরা আদালতকে জানান। অভিযুক্তদের ধারণা, সংস্থার বদনাম করতে কেউ ছিপি খুলে কিছু ঢুকিয়ে দিয়ে থাকতে পারে অথবা সংস্থাকে চাপে ফেলে টাকা আদায়ের জন্যও এমনটা করতে পারে।

আদালত অবশ্য অভিযোগকারীদের এই বক্তব্যের সারবত্তা নেই বলেই মনে করে। আদালতের বক্তব্য, একটি ছোট বোতল নরম পানীয় কিনতে কার্যত কেউই ক্যাশমেমো নেন না। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ক্রেতা নন। পাতটি চোখে না পড়লেই বিপদ হতে পারত। শুনানির সময়ে আদালতে বোতলটি দেখান অভিযোগকারী। বিচারক জানিয়ে দেন, এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সংস্থার গাফিলতি রয়েছে। খোলা চোখেই যেখানে পাতটি পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে, তাই ওই পানীয় পরীক্ষাগারে পাঠানোর প্রয়োজন নেই। এই ধরনের জিনিস বাজারে পাঠানোর আগে সংস্থার আরও বেশি সতর্ক হওয়া প্রয়োজন ছিল বলে মন্তব্য করেন বিচারক। বুধবার রায় ঘোষণার সময় বিচারক জানান, অভিযোগকারীর মামলা লড়ার খরচ বাবদ ৫ হাজার টাকা দিতে হবে অভিযুক্তদের। এ ছাড়াও, ওই ব্যক্তির মানসিক যন্ত্রণা, উদ্বেগ এবং হয়রানির জন্য ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৯০ হাজার টাকা দিতে হবে। সব মিলিয়ে ৯৫ হাজার টাকা এক মাসের মধ্যে মিটিয়ে দিতে হবে। অন্যথায় ৯% হারে সুদ দিতে হবে।

রায় শুনে খুশি সুশান্তবাবু। তিনি বলেন, “বোতলে লোহার পাতটি চোখে পড়ায় আমি ও পরিবার বিপদ থেকে বেঁচেছি। সংস্থার লোকজন বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে চাননি। ডিস্ট্রিবিউটরও ক্ষেপে যান। ওই বোতল তাঁর কাছ থেকে বিক্রি হয়নি বলেও দাবি করেন। শেষে আদালতে সুবিচার পেলাম।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

iron plate cold drink compensation southbengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE