Advertisement
০৬ মে ২০২৪

পুকুর লিজের টেন্ডার বাতিল, ক্ষোভ দুই সংস্থার

জেলা প্রশাসন চায়, একটাও পুকুর যেন পড়ে না থাকে। সব পুকুরই কাজে লাগানো হোক। অথচ, সেই হুগলি জেলা প্রশাসনই শ্রীরামপুরের একটি পুকুর ‘লিজ’ দেওয়ার দরপত্র ডেকেও তা বাতিল করে দিল কোনও কারণ না দেখিয়েই। স্বভাবতই সর্বোচ্চ দর দেওয়া সংস্থা বিষয়টিকে স্বাভাবিক বলে মানতে পারছে না। ফলে, এ নিয়ে চাপান-উতোরও শুরু হয়েছে। মল্লিকপাড়ার রাজ্যধরপুর গভর্নমেন্ট কলোনি এলাকায় ত্রাণ ও পুনর্বাসন দফতরের হাতে বেশ কয়েকটি পুকুর রয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:০৪
Share: Save:

জেলা প্রশাসন চায়, একটাও পুকুর যেন পড়ে না থাকে। সব পুকুরই কাজে লাগানো হোক। অথচ, সেই হুগলি জেলা প্রশাসনই শ্রীরামপুরের একটি পুকুর ‘লিজ’ দেওয়ার দরপত্র ডেকেও তা বাতিল করে দিল কোনও কারণ না দেখিয়েই। স্বভাবতই সর্বোচ্চ দর দেওয়া সংস্থা বিষয়টিকে স্বাভাবিক বলে মানতে পারছে না। ফলে, এ নিয়ে চাপান-উতোরও শুরু হয়েছে।

মল্লিকপাড়ার রাজ্যধরপুর গভর্নমেন্ট কলোনি এলাকায় ত্রাণ ও পুনর্বাসন দফতরের হাতে বেশ কয়েকটি পুকুর রয়েছে। স্থানীয় কিছু লোক কমিটি গড়ে দীর্ঘদিন ধরে পুকুরগুলি ভোগদখল করছেন বলে অভিযোগ। কিছু দিন আগে জেলা প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেয়, ন’টি পুকুর ‘লিজ’ দেওয়া হবে। সেই মতো জেলা সদর চুঁচুড়ায় সংশ্লিষ্ট দফতরে টেন্ডার ডাকা হয়। সর্বনিম্ন দর ডাকা হয় ৩২ হাজার টাকা। যে কমিটি এত দিন পুকুরগুলিতে মাছ চাষ করে আসছে তারা ২৭ হাজার টাকার টেন্ডার জমা দেয়। শ্রীরামপুরেরই অন্য একটি সংস্থা সর্বোচ্চ ৮৫ হাজার টাকা এবং তাদের সহযোগী অন্য একটি সংস্থা ৭৫ হাজার টাকা জমা দেয়। স্বভাবতই ২৭ হাজার টাকার টেন্ডার জমা দেওয়া কমিটির ডাক বাতিল হয়ে যায়। নিয়ম অনুযায়ী সর্বোচ্চ দর ডাকা সংস্থার হাতে পুকুরের ‘লিজ’ তুলে দেওয়ার কথা। কিন্তু এর পরেই সংশ্লিষ্ট দফতরের অফিসার ইনচার্জ চিঠি দিয়ে জানান, জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই দরপত্র বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু এর পিছনে কোনও কারণ বা যুক্তি দেখানো হয়নি। ফলে, ক্ষুব্ধ সর্বোচ্চ টেন্ডার জমা দেওয়া দু’টি সংস্থাই। বিশেষ কাউকে সুবিধা পাইয়ে দিতেই গোটা প্রক্রিয়া বানচাল করা হল কিনা, ফের টেন্ডার ডাকা হবে কি না এ সব প্রশ্নও তারা তুলেছেন।

টেন্ডার বাতিলের বিষয়ে প্রশাসনের কর্তারা মন্তব্য করেননি। অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি রাজস্ব এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসন) আয়েশা রানি বলেন, ‘‘ছুটিতে ছিলাম। টেন্ডার কেন বাতিল হয়েছে, বলতে পারব না। তবে, ওই পুকুরগুলির ব্যাপারে ফের নতুন করে টেন্ডার ডাকা হচ্ছে।”

সর্বোচ্চ দর দেওয়া সংস্থার কর্মকর্তা সৌরেন মজুমদারের ক্ষোভ, ‘‘এ ভাবে টেন্ডার বাতিল করা যায়? টেন্ডারে কি কোনও বেনিয়ম হয়েছিল? তা হলে সেটা প্রকাশ করা হোক। ওই দফতর তো আমাদের কিছুই জানাচ্ছে না। তথ্যের অধিকার আইনে সব জানতে চেয়েছি।’’ অন্য সংস্থাটির সদস্যদের অভিযোগ, মাছ চাষের নাম করে কিছু লোক পুকুরে নিজেদের অধিকার ফলাচ্ছেন। সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে না। পুকুরে নর্দমার জল ফেলা হচ্ছে। পুকুরে দূষণ হচ্ছে। ‘লিজ’ দিলে সরকারের ঘরেই তো রাজস্ব জমা পড়বে। এটা এত দিন হয়নি। এখন ব্যবস্থা করেও তা বাতিল করা হল কেন?

এলাকার দু’টি পুকুরে সাঁতার শেখানোর জন্য গত এক বছর ধরে প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে দৌড়ঝাঁপ করছে সর্বোচ্চ দর দেওয়া সংস্থা দু’টি। পুরসভার মাধ্যমে এ নিয়ে তোড়জোড়ও হচ্ছিল। কিন্তু মৎস্যজীবী কমিটির নামে কিছু লোক তা বানচাল করে দেন বলে অভিযোগ। এলাকার অনেকেই বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ। শ্রীরামপুর পুরসভার চেয়ারম্যান অমিয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওখানে সুইমিং পুল তৈরির চেষ্টা করেছিলাম। আলোচনাও হয়েছিল। কিন্তু কিছু বাধা আসায় বিষয়টি আর এগোয়নি।” মৎস্যজীবীদের নামে কমিটির অবশ্য দাবি, প্রশাসনের থেকে অনুমতি নিয়েই তাঁরা পুকুর ভোগ করছেন। এই মর্মে এলাকায় ‌লিফলেটও ছড়ানো হয়েছে কমিটির তরফে। কমিটির কর্মকর্তা গোপাল দে অবশ্য বলেন, “এখন এ ব্যাপারে আলোচনা করতে চাইছি না। কমিটিতে আলোচনা করে জানাব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE