দিনভর এ ভাবেই চলে জলের হাহাকার। ছবি: সুব্রত জানা।
একদিকে পানীয় জলের পাইপ লাইন বসানোর কাজ খেনও শেষ না হওয়ায় পুর এলাকার সর্বত্র পরিশ্রুত পানীয় জলের অভাব, অন্যদিকে বিকল্প ব্যবস্থা রূপে নলকূপের সংখ্যাও পর্যাপ্ত নয়। এই অবস্থায় গরম পড়তে না পড়তেই হাওড়ার উলুবেড়িয়া মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকায় পানীয় জলের সমস্যায় প্রকট হতে শুরু করেছে। পুর এলাকায় কমপক্ষে ৮-১০টি ওয়ার্ডের কয়েক হাজার বাসিন্দা ইতিমধ্যেই জল সঙ্কটে ভুগছেন। বেশ কিছু এলাকায় আবার জলের পাই লাইনই নেই। সেখানে নলকূপগুলির অধিকাংশ খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, বছরভরই এলাকায় জলের সমস্যা রয়েছে। কিন্তু গরমে তা চরমে উঠলেও সমস্যার সমাধানে প্রশাসনের কোনও তৎপরতা দেখা যায় না।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৪ সালে তৎকালীন বাম পুরবোর্ড পানীয় জলের সমস্যার সমাধানে জল প্রকল্প তৈরির পরিকল্পনা করে। ২০০৬ সাল নাগাদ প্রকল্পের কাজও শুরু হয়। কেন্দ্র, রাজ্য, কেএমডিএ এবং পুরসভার আর্থিক সহায়তায় কাজটি হওয়ার কথা। ঠিক হয়েছিল তিনটি পর্যায়ে কাজ হবে। ২০১১ সালে কিছু এলাকায় পাইপ লাইন-সহ জল প্রকল্পের কাজের সূচনা হয়। ২০১৪ সাল নাগাদ পাইপ লাইন পাতা-সহ অন্যান্য কাজ থমকে যায়। ফলে বিভিন্ন জায়গায় জলের সঙ্কট মেটার যে আসা দেখা গিয়েছিল তাও থমকে যায়। পুরসভা সূত্রের খবর, পূর্বতন ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের শ্যামসুন্দরচক, ২২ নম্বর ওয়ার্ডের বউলখালি, ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের রামেশ্বর নগর এলাকায় পাইপ লাইন বসানোর কাজ শেষ হলেও এখনও এই সব লোকায় পানীয় জলের সংযোগ দেওয়া হয়নি। আবার ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের ময়লপুকুর, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের তাঁতিবেড়িয়া-সহ হু জায়গায় পাইপ লাইনই বসানো হয়নি। ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের চেঙ্গাইল আইটিআই কলেজ লাগোয়া এলাকাতেও পাইপ লাইন বসলেও জলের সংযোগ হয়নি। বাউড়িয়া ফোর্ট গ্লস্টার এলাকায় সামান্য কিছু অংশে পাইপ লাইন পাতা হয়েছে। কিন্তু এখানেও জলের সংযোগ না থাকায় নলকূপই ভরসা। কিন্তু সেগুলির অনেকটাই অকেজো হওয়ায় এই সব এলাকাতেও পানীয় জলের সমস্যা চরমে। এমনকী পানীয় জল নিয়ে মারামারিও রোজকার ঘটনা।
জগদীশপুর ২ নম্বর কলোনি এলাকায় জলের পাইন লাইন না থাকার পাশাপাশি নলকূপের বেশিরভাগই খারাপ। ফলে সামনের গরমে কী করবেন তা নিয়েই আশঙ্কায় বাসিন্দারা।
পুর এলাকায় জলসঙ্কটের কথা স্বীকার করেছেন পুরসবার বিদায়ী চেয়ারম্যান পারিষদ (জল) আকবর শেখ। যদিও এর জন্য কেন্দ্রের ঘাড়েই দোষ চাপিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকার দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের প্রায় ২৩ কোটি টাকা বাতিল করে দিয়েছে। ফলে কাজ আটকে গিয়েছে। শুধু তাই নয়, তৃতীয় পর্যায়ের ৪৭ কোটি টাকার কাজও বাতিল করে দিয়েছে।” এই অবস্থায় তাঁরা রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করলে রাজ্য সরকার কিছু টাকা দিয়েছে। সেই টাকায় কাজ হবে। তবে পুরো টাকা না পেলে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করা সম্ভব নয় বলে তিনি জানান।
অন্যদিকে জলপ্রকল্প নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে মন্তব্য করেছেন বিজেপির হাওড়া গ্রামীণ এলাকার সভাপতি গৌতম রায়। তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূল পুরবোর্ড যে টাকা পেয়েছে জল প্রকল্পের জন্য তার যথাযথ ব্যবহার করেনি। বহু দুর্নীতি হয়েছে। এমনকী ওরা ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট দেয়নি। তাই বরাদ্দ আটকে গিয়েছে বলে জানতে পেরেছি।” জলপ্রকল্প নিয়ে তৃণমূল পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছে কংগ্রেস ও বামেরাও।
তবে বাসিন্দাদের এ সব নিয়ে কোনও মাথাব্যথা নেই। তাঁদের অভিযোগ, সব দলই ক্ষমতায় আসার আগে জল সমস্যা মেটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু দেখা গিয়েছে সবই মিথ্যা। রামেশ্বর নগরের বাসিন্দা শুভ পাড়ুই, ফোর্ট গ্লস্টার লোকার জাফর মোল্লার তাই একটাই দাবি, পুরবোর্ডে যারাই আসুক এলাকার মানুষের পানীয় জলের সমস্যার যেন সমাধান হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy