Advertisement
০৮ মে ২০২৪
ধনেখালিতে অভিযুক্ত তৃণমূল

বন্‌ধে গরহাজির শ্রমিকদের মারধর

ধমর্ঘটের দিন কাজে হাজির হতে পারেননি কয়েকজন শ্রমিক। সেই ‘অপরাধের শাস্তি’ হিসাবে তাঁদের আর কাজে নেওয়া যাবে না। কারখানা কর্তৃপক্ষের উপরে এমন ফরমান চাপিয়ে ওই শ্রমিকদের মারধরের অভিযোগ উঠল তৃণমূলের কর্মীদের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার হুগলির ধনেখালির একটি বিয়ার কারখানায় এমন ঘটনার পর সেখানে উৎপাদন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তৃণমূল নেতৃত্বের পক্ষ থেকে অবশ্য যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।

হামলাকারীদের হঠাতে লাঠি হাতে গ্রামবাসীরা (বাঁদিকে)। আহত শ্রমিককে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।-নিজস্ব চিত্র।

হামলাকারীদের হঠাতে লাঠি হাতে গ্রামবাসীরা (বাঁদিকে)। আহত শ্রমিককে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।-নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ধনেখালি শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০২:১৭
Share: Save:

ধমর্ঘটের দিন কাজে হাজির হতে পারেননি কয়েকজন শ্রমিক। সেই ‘অপরাধের শাস্তি’ হিসাবে তাঁদের আর কাজে নেওয়া যাবে না। কারখানা কর্তৃপক্ষের উপরে এমন ফরমান চাপিয়ে ওই শ্রমিকদের মারধরের অভিযোগ উঠল তৃণমূলের কর্মীদের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার হুগলির ধনেখালির একটি বিয়ার কারখানায় এমন ঘটনার পর সেখানে উৎপাদন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তৃণমূল নেতৃত্বের পক্ষ থেকে অবশ্য যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কারখানা চত্বরে মারপিট শুরু হয়ে যায় তৃণমূল সমর্থক এবং শ্রমিকদের একাংশের মধ্যে। পরে গ্রামবাসীরাও ওই গণ্ডগোলে জড়িয়ে পড়েন। মারপিটে কারখানার এক শ্রমিক ছুরির আঘাতে জখম হন। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। গণ্ডগোলে কারখানার কাজ বন্ধ হয়ে যায়। কারখানায় স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে প্রায় ৪০০ শ্রমিক আছেন।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবারের ধর্মঘটে ওই বিয়ার কারখানার বেশকিছু শ্রমিক কাজে অনুপস্থিত ছিলেন। এর ফলে কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হয়। এদিন সকালের শিফটে ওই শ্রমিকেরা প্রতিদিনের মতো কাজে যোগ দিতে আসেন। তাঁদের অভিযোগ, সেই সময় তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্বের কয়েকজন এসে দাবি তোলেন, যাঁরা বুধবার কারখানায় আসেননি তাদের কাজে যোগ দিতে দেওয়া যাবে না।’ এর বিরোধিতায় নামেন কিছু শ্রমিক। সেই নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি থেকে বচসা, তারপর মারপিট শুরু হয়ে যায়। অভিযোগ, দু’পক্ষের মারপিটের মধ্যেই তৃণমূলের একজন হঠাৎই ছুরি বের করে সুজয় মালিক নামে কারখানার প্যাকেজিং বিভাগের এক কর্মীকে আঘাত করে। সুজয়বাবু নিজেকে বাঁচাতে গেলে ছুরির আঘাতে তাঁর হাত কেটে রক্ত ঝরতে থাকে। রক্তাক্ত অবস্থায় সুজয়বাবুকে দেখে অন্য শ্রমিকেরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। কারখানা চত্বরে চড়াও হওয়া তৃণমূল কর্মীদের পাল্টা পেটাতে শুরু করেন তাঁরা। শ্রমিকদের প্রতিরোদে বেগতিক বুঝে পালাতে শুরু করেন তৃণমবলের কর্মী-সমর্থকেরা। কেউ কেউ সুযোগ বুঝে কারখানার ভিতরেই গা-ঢাকা দেন। কারখানায় গোলমালের খবর ছড়ালে আশপাশ থেকে জড়ো হন বাসিন্দারা। তাঁরাও লাঠিসোটা নিয়ে তৃণমূলের লোকজনদের তাড়া করেন। পরে ধনেখালি থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশের পক্ষ থেকে বিবাদমান দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বৈঠকের প্রস্তাবের দেওয়া হয়। যদিও শ্রমিকেরা সাফ জানিয়ে দেন, সব শ্রমিক কাজে যোগ দিতে পারলে তবেই তাঁরা বৈঠকে রাজি আছেন, অন্যথায় নয়। অন্যদিকে, বুধবার যাঁরা কাজে আসেননি তাদের কারখানায় যোগ দিতে না দেওয়ার প্রশ্নে অনড় থাকে তৃণমূলও। দু’পক্ষই অনড় থাকায় কারখানায় শেষ পর্যন্ত এদিন উৎপাদন হয়ে যায়।

শ্রমিকদের উপর তৃণমূলের হামলার যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে ধনেখালির তৃণমূল বিধায়ক অসীমা পাত্র বলেন, ‘‘ওই বিয়ার কারখানায় নিয়ম আছে, এক সঙ্গে পাঁচ বা তার অধিক সংখ্যায় শ্রমিকেরা কাজে অনুপস্থিত থাকলে তাঁদের তিন দিন বসিয়ে দেওয়া হয়। যে সব শ্রমিকদের বসিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল, তাঁরাই রটিয়ে দেয় তৃণমূলের জন্য কাজে যোগ দিতে দেওয়া হচ্ছে না।’’ তিনি আরও জানান, এরপরই গ্রামের লোকেদের তৃণমূলের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলে মারধর করা হয়। গণেশ ব্যান্দ্যোপাধ্যায় নামে দলের স্থানীয় এক নেতাকে গ্রামবাসীরা বেধড়ক মারে। কারখানা কর্তৃপক্ষের ওই সিদ্ধান্তে তৃণমূলের কোনও ভূমিকা নেই।’’

বস্তুত দলীয় বিধায়ক অস্বীকার করলেও বছর কয়েক আগে ওই কারখানার শুরু থেকেই নানা রকম দাবি দাওয়া নিয়ে তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে কর্তৃপক্ষের বিবাদ শুরু হয়। এক সময় কারখানায় নিজেদের লোকজন ঢোকানো নিয়েও কারখানা কতৃর্পক্ষের সঙ্গে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের বিবাদ বাধে। তবে এদিনের ঘটনা নিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষ মুখ খুলতে চাননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE