পুরভোটের দিনক্ষণ এখনও নির্দিষ্ট হয়নি। কিন্তু ইতিমধ্যেই উলুবেড়িয়ায় আসন্ন পুরভোটে গতবারের চেয়ে বাড়তি আসনে লড়ার পরিকল্পনা করেছে ফ্রন্ট শরিক ফরওয়ার্ড ব্লক।
এর আগের পুর নির্বাচনগুলিতে বড় শরিক সিপিএমের সঙ্গে আসন রফা নিয়ে ফরওয়ার্ড ব্লকের বিবাদ ছিল সর্বজনবিদিত। ফরওয়ার্ড ব্লকের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা তথা উলুবেড়িয়া দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক প্রয়াত রবীন ঘোষ তাঁর সময়েও সিপিএমের কাছ থেকে বাড়তি আসন আদায় করতে পারেননি। ২০১০ সালের নির্বাচনে তাঁরা ১১টি ওয়ার্ডে প্রার্থী দিয়েছিলেন। পুরসভায় বর্তমানে মোট ওয়ার্ড ২৯টি। সীমানা পুনর্বিন্যাসের ফলে ওই পুরসভায় এ বার ওয়ার্ডসংখ্যা বেড়ে ৩২ হতে চলেছে। ভোট হবে ৩২টি ওয়ার্ডেই। তারা বর্ধিত ৩টির মধ্যে ২টি ওয়ার্ড দাবি করবে বলে ফরওয়ার্ড ব্লক সূত্রের খবর। ঘরোয়া আলোচনায় ফরওয়ার্ড ব্লক নেতারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এই দাবি জেলা বামফ্রন্টের বৈঠকে তাঁরা পেশ করবেন এবং দাবিতে অনড় থাকবেন। সিপিএমকে বোঝাতে হবে তারা যেন অতীতের মনোভাব থেকে সরে আসে এবং শরিকদের প্রাপ্য মর্যাদা দিয়ে বৃহত্তর বাম ঐক্যকে শক্তিশালী করে।
জেলার রাজনৈতিক মহলের অনুমান, এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই তৃণমূলের দাপটে বামফ্রন্টের ক্ষয় রোধ করা যাচ্ছে না। পরিবর্তিত পরিস্থিতির সুযোগ নিয়েই বড় শরিক সিপিএমের উপরে ‘ঝোপ বুঝে কোপ’ মারতে উদ্যত হয়েছে ছোট শরিক ফরওয়ার্ড ব্লক।
সিপিএমের জেলা নেতাদের কয়েক জন ঠারেঠোরে মেনেও নিয়েছেন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ফরওয়ার্ড ব্লক বাড়তি আসন চাইতেই পারে। তবে, দলের পক্ষ থেকে অবশ্য এ বিষয়ে সরাসরি মন্তব্য করা হয়নি। দলের জেলা সম্পাদক বিপ্লব মজুমদার প্রথমে বলেন, “ওরা দাবি করুক। তার পরে দেখা যাবে।” তাঁর সংযোজন, “পুর নির্বাচনের দিনক্ষণই ঘোষণা হয়নি। প্রার্থী নিয়ে যা কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে জেলা বামফ্রন্টের বৈঠকেই।”
২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বামফ্রন্টের পতন হলেও তাদের ক্ষয় শুরু হয় আগেই। ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের পর থেকে। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনেও তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। পুর এলাকাটি পড়ে মূলত উলুবেড়িয়া পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রে। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে তৃণমূলের কাছে সিপিএম প্রার্থী বিপুল ভোটে পিছিয়ে যান। তার আগে থেকেই অবশ্য সিপিএম ছেড়ে অন্য দলে (বিশেষ করে বিজেপিতে) চলে যাওয়ার ঢল নামে। ফলে, দ্রুত শক্তি হারাতে থাকে তারা। জেলার রাজনৈতিক মহলের ধারণা, সিপিএম দুর্বল হয়ে পড়াতেই ফরওয়ার্ড ব্লকের মতো ছোট শরিক আরও প্রভাব খাটানোর সুযোগ নিতে চাইছে।
ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা নেতাদের একাংশ অবশ্য জানিয়েছেন, বর্ধিত আসন দাবি করার বিষয়টি ‘ঝোপ বুঝে কোপ মারা’ নয়। বরং বামফ্রন্টের নীতি মেনেই তাঁরা বর্ধিত আসন চাইবেন। তাঁদের যুক্তি: যে সব ওয়ার্ড ভেঙে বাড়তি ৩টি ওয়ার্ড তৈরি করা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে ১০ এবং ১৯ নম্বর ওয়ার্ড। এই দু’টি ওয়ার্ডে বরাবর ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী লড়েন। ফলে, এই দু’টি ওয়ার্ড ভাঙা হলে বর্ধিত আসন দু’টিও ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রাপ্য হয়। ফ্রন্টের ঘোষিত নীতি হল, যে আসনে যে দল প্রার্থী দেয়, নতুন করে আসন বিন্যাস হলে বাড়তি আসনগুলিতেও সেই দলই প্রার্থী দেবে।
এটা যদি নীতিই হয় তা হলে তো নিজে থেকেই বর্ধিত আসন দু’টি ফরওয়ার্ড ব্লকের হাতে চলে আসার কথা। সে জন্য দাবি করতে হবে কেন?
প্রশ্নের উত্তরে ফরওয়ার্ড ব্লকের হাওড়ার জেলা নেতাদের একাংশ জানান, সিপিএম যদি অতীতের মনোভাব দেখিয়ে ছোট শরিকদের উপরে ‘দাদাগিরি’ ফলায়, তা হলে কিন্তু বর্ধিত আসন দু’টি সহজে পাওয়া যাবে না। কারণ বড় দল হিসাবে সিপিএম বহুবারই আসন বণ্টনের ক্ষেত্রে বামফ্রন্টের নীতির ধার ধারেনি। এ বার যাতে তা না হয়, নজর রাখা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy