এমনই বেহাল অবস্থা বেলিলিয়াস রোডের। —নিজস্ব চিত্র
প্রদীপের নীচেই অন্ধকার!
রাস্তার দু’পাশ যখন ত্রিফলার সাদা আলোর বন্যায় ভেসে যাচ্ছে তখন রাস্তার পিচ-খোয়া উঠে বড়বড় গর্ত ভরে রয়েছে নদর্মার দুর্গন্ধযুক্ত পাঁকজলে। কয়েকটি রাস্তায় আবার খোয়া ফেলে ক্ষত ঢাকার চেষ্টা হলেও টানা বৃষ্টির জেরে সমস্ত খোয়া উঠে বিপজ্জনক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তার উপর দিয়ে যেতে গিয়ে প্রায়শই দুর্ঘটনা ঘটছে। পড়ে গিয়ে আহত হচ্ছেন মোটরবাইক আরোহী বা পথচারীরা।
পুজোর মরসুমে হাওড়া শহরের অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার এটাই হল বাস্তব চিত্র। যদিও পুরসভা সূত্রে খবর, আগে যেখানে পুজোর মুখে রাস্তা সারাইয়ের জন্য ব্যয়বরাদ্দ ধরা হত সাকুল্যে ২৫-৩০ লক্ষ টাকা, এ বার তা ধরা হয়েছিল ৭৫ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে প্রতিটি ওয়ার্ডকে এই খাতে গড়ে দেওয়া হয়েছে দেড় লক্ষ টাকা করে।
কিন্তু তা সত্ত্বেও পুজোর আগে গর্তে কয়েক ঝুড়ি খোয়া ফেলা ছাড়া কিছু করা হল না কেন?
পুরসভার অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার (রাস্তা) উৎপল চট্টোপাধ্যায় বলেন, “পুজোর আগে ভাঙা রাস্তা কিছুটা মেরামত করা হয়েছিল। মূলত বৃষ্টির জন্য কাজ করা যায়নি। তবে যে সব বড় রাস্তা খারাপ আছে, তা আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ভাল ভাবে সারিয়ে ফেলা হবে।”
মেয়র রথীন চক্রবর্তীর অবশ্য দাবি, “হাওড়ার অধিকাংশ রাস্তা সারিয়ে ফেলা হয়েছে। এর আগে এত কাজ হয়নি। যে কয়েকটি বড় রাস্তা খারাপ অবস্থায় আছে, তা-ও দ্রুত সারিয়ে ফেলা হবে।’’
পুর-কর্তৃপক্ষ এ দাবি করলেও মধ্য হাওড়ার ড্রেনেজ ক্যানাল রোড, পঞ্চাননতলা রোড, বেলিলিয়াস রোড এবং উত্তর হাওড়ার লিলুয়া, সালকিয়া-সহ মালিপাঁচঘরার বহু অলিগলির চিত্র অন্য কথা বলে। যেমন ধরা যাক কোনা এক্সপ্রেসওয়ের সংযোগকারী ড্রেনেজ ক্যানাল রোড। এই রাস্তায় ত্রিফলা লাগানোর পরে রাস্তার সৌন্দর্যায়নের জন্য কয়েক কোটি টাকা ব্যয় করে রাস্তার মাঝখানে তৈরি হচ্ছে বুলেভার্ড। যার মধ্যে থাকছে নানা মনীষীর মূর্তি, ঝর্না ও বাগান।
অথচ এই গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার কয়েকটি জায়গা ভেঙেচুরে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। হেঁটে যাওয়া দূরের কথা, ওই রাস্তা দিয়ে যানবাহন চলাচল করছে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই রাস্তাটি দিয়ে ট্রাম কোম্পানি-সহ একাধিক রুটের বাস চলে। পুজোর আগে দায়সারা গোছের খোয়া ফেলে গর্ত বোজানোর চেষ্টা হলেও পুজোর পরেই তা উঠে গিয়ে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সামনেই কালীপুজো। এর মধ্যে রাস্তা না সারালে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে এলাকাবাসীদের আশঙ্কা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার বাসিন্দা ও একটি বড় বাজেটের কালীপুজোর উদ্যোক্তা বলেন, “প্রতি পুজোর আগে এই এলাকার সব ক’টি রাস্তা মেরামত য়। কিন্তু এই প্রথম দেখলাম ষষ্ঠীর দিন সন্ধ্যায় কয়েক ঝুড়ি খোয়া ফেলে দায় সারল পুরসভা।”
মধ্য হাওড়ায় সব থেকে ভয়াবহ অবস্থা বেলিলিয়াস রোডের। ওই রাস্তার নিচ দিয়ে নিকাশির পাইপলাইন বসানোর জন্য গত সাত বছর যানবাহন চলাচলই বন্ধ। সম্প্রতি রাস্তার একটি ছোট অংশ ছাড়া পাইপলাইন বসানোর কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত সাত বছর ধরে নরক-যন্ত্রণা ভোগ করার পরে ভাবা গিয়েছিল রাস্তাটি মেরামতির কাজ শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু অভিযোগ, পুরসভা রাস্তার উপরে খোয়া ফেলে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। বৃষ্টির জলে খোয়া উঠে গিয়ে মারণফাঁদ তৈরি হয়েছে। মোটরবাইক বা সাইকেল আরোহীরা পড়ে আহত হওয়ার মতো ঘটনা ঘটছে।
এই দু’টি রাস্তা ছাড়াও পুরসভার ৫০টি ওয়ার্ডের আরও কয়েকটি রাস্তা পুজোর আগে রুটিন মাফিক যে সংস্কারের কাজ হত, তা এ বার হয়নি বলে অভিযোগ। যেমন ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা গণস্বাক্ষর করা চিঠি দিয়ে ধর্মতলা এলাকার রাস্তা নিয়ে পুর-কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ জানিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, এলাকার রাস্তার অবস্থা এতটাই খারাপ যে মানুষ হাঁটাচলা করতে পারছেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy