Advertisement
১৭ জুন ২০২৪

মেলে না উন্নত বীজ, হতাশ চাষিরা

এলাকার চাষিদের বিভিন্ন ফসলের উন্নত মানের বীজের চাহিদা পূরণ করার জন্যই কৃষি-খামার। কিন্তু আরামবাগের কৃষি-খামারটি এখন চাষিদের সেই চাহিদা পূরণে ব্যর্থ। প্রয়োজনীয় শ্রমিক নেই। খামারে চাষের জায়গাও কমছে। কিছু ওলবীজ পাওয়া ছাড়া পরিষেবা সে ভাবে মেলে না জানিয়ে এ ব্যাপারে কৃষি দফতরের বিরুদ্ধেই উদাসীনতার অভিযোগ তুলেছেন এলাকার চাষিরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আরামবাগ শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:০৬
Share: Save:

এলাকার চাষিদের বিভিন্ন ফসলের উন্নত মানের বীজের চাহিদা পূরণ করার জন্যই কৃষি-খামার। কিন্তু আরামবাগের কৃষি-খামারটি এখন চাষিদের সেই চাহিদা পূরণে ব্যর্থ। প্রয়োজনীয় শ্রমিক নেই। খামারে চাষের জায়গাও কমছে। কিছু ওলবীজ পাওয়া ছাড়া পরিষেবা সে ভাবে মেলে না জানিয়ে এ ব্যাপারে কৃষি দফতরের বিরুদ্ধেই উদাসীনতার অভিযোগ তুলেছেন এলাকার চাষিরা।

উদাসীনতার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মহকুমা কৃষি আধিকারিক অশ্বিনী কুম্ভকার। একই সঙ্গে অবশ্য তিনি স্বীকার করেছেন সমস্যার কথা। তিনি বলেন, “খামারে কৃষি-শ্রমিক কমে যাওয়ায় সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। স্থায়ী শ্রমিকের পদ ছিল ২০টি। তাঁদের অবসর গ্রহণের পর নতুন নিয়োগ না হওয়ায় বর্তমানে মাত্র ১০ জন শ্রমিক আছেন। জেলা দফতরে বিষয়টি জানানো হয়েছে।” হুগলির উপ-কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) সতীনাথ পালিত বলেন, “কর্মী-নিয়োগে আমাদের হাত নেই। কয়েকটি কারণে খামারের জায়গা কিছুটা কমেছে। এরপরেও যে জায়গা রয়েছে এবং যে কর্মী অবশিষ্ট আছেন তাঁদের নিয়েই কাজ চালানো হচ্ছে।”

হুগলি জেলায় মোট ন’টি কৃষি-খামারের মধ্যে অন্যতম আরামবাগের পল্লিশ্রীতে দ্বারকেশ্বর নদীর ধারে ২৫ একর জায়গার উপরে গড়ে ওঠা কৃষি-খামারটি। নানা ধরনের বীজ চাষ হত প্রায় ১৮ একর জমিতে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে ভাঙনের ফলে সেই জমির একাংশ একটু একটু করে চলে গিয়েছে দ্বারকেশ্বর নদীর গর্ভে। সম্প্রতি ব্লকের কিষান-মান্ডির জন্য রাজ্য সরকার ওই কৃষি-খামারের ৫ একর জায়গা নিয়েছে। এ ছাড়া খাদ্য ও সরবরাহ দফতরের গুদাম নির্মাণের জন্য নেওয়া হয়েছে আরও দুই একর জমি। এখন সব মিলিয়ে চাষ হয় মাত্র ১০ একর জমিতে।

কিন্তু এলাকার চাষিদের অভিযোগ, ওই কৃষি-খামার থেকে দু’একটা বীজ মেলে। তা-ও উন্নত প্রজাতির নয়। এবং তা সময়েও মেলে না। ফলে, সেই বীজে চাষ করে লাভের চেয়ে লোকসান বাড়ে। চাষিদের মধ্যে আরামবাগের সালেপুর এলাকার সমর বারুই বলেন, “কৃষি-খামারে গেলে খালি সরষে এবং ওলবীজ মেলে। তাই ইদানীং আর যাই না। সব ধরনের বীজ মিললে আমরা উপকৃত হতাম। এ ব্যাপারে কৃষি দফতরের নজর নেই।” গোঘাটের বালি গ্রামের চাষি দেবীপ্রসাদ গুঁইও বলেন, “খামারে সে ভাবে বীজ মেলে না। তাই বাজার থেকে বেশি দামে বীজ কিনতে হয়। ওই খামারের বীজে আমাদের কোনও উপকার হয় না।”

কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই খামারে কৃষি-শ্রমিকের পদ রয়েছে ২০টি। ২০১০ সাল পর্যন্ত সেখানে পুরোমাত্রায় কাজ হত। ওই বছর পর্যন্ত বিভিন্ন প্রজাতির বীজ বিক্রি করে বছরে গড়ে ৬ থেকে ৮ লক্ষ টাকা অব্দি পাওয়া গিয়েছে। তার পর থেকে ধীরে ধীরে শ্রমিক কমে এখন দাঁড়িয়েছে মাত্র ১০ জনে। নতুন নিয়োগ হয়নি। এখন বীজ বিক্রি বাবদ জমা পড়ে বছরে গড়ে ৪ লক্ষ টাকা।

খামারের এই দুরবস্থা নিয়ে কৃষি-খামারের শ্রমিকেরা জানান, এখন চাষ বলতে মূলত ধান এবং ওলবীজ উৎপাদন চলে। কিছু বাদাম-বীজ নিয়ে পরীক্ষা চলে। বন্ধ রয়েছে আলু এবং হলুদ-সহ আরও কিছু ফসলের বীজ অভিযোজনের (আরামবাগের মাটিতে কার্যকর কিনা পরীক্ষা) কাজ। যে সব বীজ এখানে উৎপাদন হয় তার নমুনা গবেষণাগার থেকে পরীক্ষা হয়ে আসতে সময় লেগে যায় চার-পাঁচ মাস। সংশ্লিষ্ট ফসলের মরসুম অধিকাংশ সময়ই পেরিয়ে যায়। ফলে, তা নিতে অনীহা প্রকাশ করেন চাষিরা। খামারে পড়ে থাকা বীজ কম দামে নিলাম করে দিতে হয়। তা ছাড়া বীজ সংরক্ষনের ব্যবস্থা আদ্যিকালের। সেই বীজের গুণমান নিয়েও সংশয় থাকে চাষিদের। একই বক্তব্য খামারের সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ আধিকারিক সুব্রত মুখোপাধ্যায়েরও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE