Advertisement
১১ মে ২০২৪
টাকা না পেয়ে বধূকে খুন

যাবজ্জীবন সাজা পাঁচ অভিযুক্তের

বাপের বাড়ি থেকে দাবিমতো টাকা এনে না দেওয়ায় এক বধূকে প্রথমে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছিল। তার পরে হাত-পা বেঁধে, ইট জড়িয়ে দেহ ডুবিয়ে রাখা হয়েছিল পুকুরে। খুনের দায়ে স্বামী-সহ শ্বশুরবাড়ির পাঁচ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিল আদালত। সোমবার চুঁচুড়া আদালতের ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে বিচারক চৌধুরী হেফাজত করিম ব্যান্ডেল দেবানন্দপুরের বাসিন্দা শম্ভু মালিক, তার বাবা সতীশ মালিক, মা রবিদেবী ও শম্ভুর দুই দাদা সুকুমার ও বাপিকে ওই সাজা শোনান।

যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পাঁচ। চুঁচুড়া আদালতে।

যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পাঁচ। চুঁচুড়া আদালতে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:৪৪
Share: Save:

বাপের বাড়ি থেকে দাবিমতো টাকা এনে না দেওয়ায় এক বধূকে প্রথমে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছিল। তার পরে হাত-পা বেঁধে, ইট জড়িয়ে দেহ ডুবিয়ে রাখা হয়েছিল পুকুরে। খুনের দায়ে স্বামী-সহ শ্বশুরবাড়ির পাঁচ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিল আদালত। সোমবার চুঁচুড়া আদালতের ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে বিচারক চৌধুরী হেফাজত করিম ব্যান্ডেল দেবানন্দপুরের বাসিন্দা শম্ভু মালিক, তার বাবা সতীশ মালিক, মা রবিদেবী ও শম্ভুর দুই দাদা সুকুমার ও বাপিকে ওই সাজা শোনান।

শম্ভুর বাড়ি চন্দনপুর গ্রামে। ২০০৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর সকালে বাড়ির পাশের পুকুর থেকে শম্ভুর স্ত্রী বাসন্তী মালিকের (২৮) দেহ মেলে। তাঁর হাত-পা পিছমোড়া করে বাঁধা ছিল। সেই বাঁধনের সঙ্গে ছিল ইটও। তার ১১ দিন আগে থেকেই বাসন্তীর খোঁজ মিলছিল না। দেহ উদ্ধারের পরে বাসন্তীর মা রেবাদেবী জামাইয়ের নামে মেয়েকে খুনের অভিযোগ করেন। সেই অভিযোগে তিনি জানান, বিয়ের পর থেকেই মেয়ের উপরে টাকার দাবিতে অত্যাচার চলছিল। শম্ভুকে পুলিশ গ্রেফতার করে।

পুলিশের দাবি, জেরায় ধৃত শম্ভু অপরাধের কথা কবুল করে জানায়, বাপের বাড়ি থেকে ৫০ হাজার টাকা এনে না দেওয়ায় স্ত্রীকে সে গামছা দিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করে মা-বাবার সামনেই। স্ত্রীর দেহ বাঁধতে এবং পুকুরে ডুবিয়ে দিতে সাহায্য করেছিল তার দুই দাদা। এই জেরার পরেই পুলিশ শম্ভুর বাবা-মা এবং দুই দাদাকে গ্রেফতার করে। পরে সকলে জামিন পায়। শনিবার অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করে আদালত।

এই মামলার সরকারি আইনজীবী কালীপ্রসাদ সিংহরায় এবং মৌমিতা ঘোষ বলেন, “টাকা না পেয়ে ওই বধূকে খুনের দায়ে পাঁচ জনকে সশ্রম যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন বিচারক। প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেছেন। অনাদায়ে আরও এক বছরের জেল। জরিমানার ৬০ শতাংশ টাকা হত বধূর ছেলেকে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।”

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বাসন্তীর বাড়ি দেবানন্দপুর নলডাঙায়। বিয়ের বেশ কয়েক মাস আগেই শম্ভুর সঙ্গে তাঁর আলাপ। দু’জনের সম্পর্কও গড়ে ওঠে। শম্ভু নানা ছোটখাটো ব্যবসা করত। কিন্তু বিয়ের পরেই সে ব্যবসা করার জন্য শাশুড়ি রেবা মুখোপাধ্যায়ের কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে বসে। কিন্তু অর্থাভাবের কারণে রেবাদেবী সেই টাকা দিতে পারেননি। এর পরেই শ্বশুরবাড়িতে বাসন্তীর উপরে নির্যাতন শুরু হয়। দেবানন্দপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে গোলমাল মেটানোরও চেষ্টা হয়। কিন্তু শম্ভু স্ত্রীর উপরে অত্যাচার কমায়নি। সে স্ত্রীকে মারার হুমকি দেয়। ভয় পেয়ে বাসন্তী বাপের বাড়িতে চলে যান। কিন্তু বাপের বাড়ির লোকজন তাঁকে বুঝিয়ে শ্বশুরবাড়িতে পাঠিয়ে দেন। তার পরেও বাসন্তীর উপরে অত্যাচার থামেনি। ২০০৬ সালের ১৫ ডিসেম্বর শম্ভু নলডাঙায় গিয়ে শাশুড়িকে বলে বাসন্তী নিখোঁজ। বাসন্তীর পরিবারের লোকজন তাঁর খোঁজ না পেয়ে চুঁচুড়া থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। পরে ২৮ ডিসেম্বর সকালে বাসন্তীর দেহ উদ্ধার করেন ব্যান্ডেল পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন ইনচার্জ প্রদীপ দা।ঁ মেয়ের দেহ শনাক্ত করেন রেবাদেবীই।

এ দিন বাসন্তীর কাকা অলোক মুখোপাধ্যায় দোষীদের সাজা শুনে তিনি খুশি। তিনি এ দিন বলেন, “যে অন্যায় ওরা করেছে, তার কোনও ক্ষমা নেই। উচিত সাজাই হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE