বর্ষায় এমন কর্দমাক্ত পথ দিয়েই পৌঁছতে হয় স্কুলে। ছবি: সুব্রত জানা।
দশ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। কিন্তু রাস্তা তৈরি হয়নি। তাই তিন বছরেও ৪০ কোটি টাকার জওহর নবোদয় স্কুলের নির্মাণকাজ শুরুই হল না সাঁকরাইলে।
কেন্দ্রীয় ওই স্কুলটি তৈরির যাবতীয় খরচ দেয় কেন্দ্র সরকার। কিন্তু রাস্তাঘাট নির্মাণ-সহ অন্যান্য পরিকাঠামোগত সহায়তা দেওয়ার কথা রাজ্য সরকারের। নিয়ম অনুযায়ী, কোনও জেলায় কেন্দ্রীয় এই স্কুল গড়তে হলে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনকেই জমির ব্যবস্থা করতে হয়। কিন্তু হাওড়া জেলা প্রশাসন জমির ব্যবস্থা করতে পারেনি। শেষমেশ, সাঁকরাইলের গঙ্গাধরপুরে দানের জমি মিললেও সংলগ্ন প্রায় ৫০০ মিটার মাটির রাস্তাটি সংস্কার করা হয়নি। ফলে, স্কুল ভবন তৈরির জন্য ক্রেন-সহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি নিয়ে নির্মাণ সংস্থার কাজ করার সমস্যার জন্যই ভবন তৈরি করা যাচ্ছে না বলে দাবি স্কুল কর্তৃপক্ষের। স্কুলের পঠন-পাঠন চলছে অন্যত্র।
স্কুলটির অধ্যক্ষা বিজয়া নায়েক বলেন, “জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সব সময়েই সমন্বয় রেখে কাজ করছি। স্কুল ভবন তৈরির জন্য জেলা প্রশাসনের ছাড়পত্রও পেয়েছি। স্কুল ভবনটি তৈরির জন্য ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। কিন্তু রাস্তা না হওয়ায় ভবন তৈরি করা সম্ভব নয়। টাকা পড়ে রয়েছে।”
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি বছরের গোড়ায় গঙ্গাধরপুর এবং জুজারসাহা পঞ্চায়েতকে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে ৫ লক্ষ করে মোট ১০ লক্ষ টাকা খরচ করে প্রস্তাবিত স্কুল ভবনের সামনের রাস্তাটি পাকা করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে গঙ্গাধরপুর পঞ্চায়েত দায়সারা ভাবে কয়েক ঝুড়ি মাটি ফেলে কাজ সেরেছে এবং অন্য পঞ্চায়েতটি টাকা না থাকায় কাজ করতে পারবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে, এমনই দাবি স্কুল কর্তৃপক্ষের। তাঁরা চান, রাস্তাটি পিচ বা কংক্রিট দিয়ে বাঁধিয়ে অন্তত ১২ ফুট চওড়া করা হোক।
হাওড়ার জেলাশাসক শুভাঞ্জন দাস ওই স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতিও। তাঁর আশ্বাস, ওই রাস্তা অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তৈরির জন্য সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “কেন পঞ্চায়েত দু’টি রাস্তা তৈরির কাজ করতে পারল না, সে ব্যাপারে খোঁজ নেব। টাকার অভাব থাকলে পঞ্চায়েত দু’টিকে তা দিয়ে দেওয়া হবে।”
হাওড়ায় জওহর নবোদয় স্কুল তৈরির প্রকল্প নেওয়া হয় ২০০০ সালের গোড়ায়। এর জন্য কম করে ৩০ বিঘা জমি লাগে। ২০০৬ সালে বাগনানে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ঘরে স্কুলটি সাময়িক ভাবে চালু করে দেওয়া হয়। ২০১১ সালের গোড়ায় ওই স্কুলের জন্য জমি দান করেন স্থানীয় বাসিন্দা, শিক্ষানুরাগী সন্তোষ দাস। সন্তোষবাবুরই তৈরি করা একটি আবাসিক কলেজের ছাত্রাবাসে ওই স্কুলের ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত এখন পড়ানো হয়। কিন্তু স্কুলের নিজস্ব ভবন তৈরি না হওয়ায় পঠন-পাঠন চালাতে সমস্যায় পড়ছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। অন্য দিকে, সমস্যায় পড়েছে কলেজটিও। তারা ছাত্রাবাস ব্যবহার করতে পারছে না। কোনও উপায় না দেখে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন দফতরের দ্বারস্থ হওয়ার কথা ভাবছেন সন্তোষবাবু।
সন্তোষবাবু বলেন, “বোঝাই যাচ্ছে বর্ষা এসে যাওয়ায় রাস্তার কাজ আর হবে না। আমি ৪ কোটি টাকার জমি দিলাম। মাত্র কয়েক লক্ষ টাকার একটি রাস্তা, সেটাও প্রশাসন তিন বছরে করতে পারল না। এই উদাসীনতা নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই। কেন্দ্রকেই চিঠি লিখব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy