দীপাবলির উত্সবের মেজাজে এখন মাতোয়ারা হুগলি জেলার বিভিন্ন প্রান্ত। আলোয় ভাসছে শহর থেকে গ্রাম। আতসবাজি হাতে তৈরি ছোটরা।
শ্রীরামপুরের বল্লভপুর সর্বজনীন শ্মশানকালীর পুজোর এ বার ১৬৫ তম বছর। মঙ্গলবারেই পুজোর উদ্বোধন করেছেন বরাহনগর রামকৃষ্ণ মিশনের মহারাজ স্বামী দিব্যরসানন্দ। ভক্তিগীতি পরিবেশন করেন শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়। প্রতিবারই এই পুজোয় লক্ষাধিক ভক্তের সমাগম হয়। এ বারও তেমনটাই প্রত্যাশা করছেন উদ্যোক্তারা। তাঁরা জানান, পুজোর দিন মায়ের গলায় ভক্তদের দেওয়া মালা পরানো হয়। ঘণ্টা তিনেক সেই পর্ব চলে। ভক্তদের দান করা অলঙ্কারে সেজে ওঠেন দেবী। গোটা চত্বর আলোয় ঝলমল করে। মন্দিরের অছি পরিষদের সদস্য আলোকরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পুজো কমিটির সম্পাদক প্রকাশ চক্রবর্তী জানালেন, আগে ছাগ বলির প্রথা ছিল। গত কয়েক বছর ধরে তা বন্ধ। তার পরিবর্তে বর্তমানে আখ, কুমড়ো বলি দেওয়া হয়। প্রণামী হিসেবে পাওয়া হাজার দেড়েক শাড়ি বেলুড় মঠ, আঁটপুর রামকৃষ্ণ মঠ এবং শ্রীরামপুর আর্ত সেবা সমিতির মাধ্যমে দরিদ্রদের দেওয়া হয়।
শহরের তারাপুকুর এলাকায় পাঁচ দশকের পুরনো শিবাজি সঙ্ঘের পুজোয় জাঁকজমকের অভাব নেই। উদ্যোক্তারা জানান, এ বার পাহাড়ের আদলে মণ্ডপ তৈরি হয়েছে। ভিতরে থাকবেন দেবী। থাকছেন বিশাল আকৃতির মহাদেব। চাতরা মুখার্জিপাড়ার মুখার্জিবাড়ির পুজোর এ বার ৫০ বছর। পরিবারের তরফে সোমনাথ মুখোপাধ্যায় জানান, পুজোর দিন ভক্তিগীতির আয়োজন করা হয়েছে। এখানেও আগে বলির প্রথা থাকলেও বর্তমানে তা বন্ধ। পঞ্চাননতলা সর্বজনীন কালীপুজোর এ বার সুবর্ণ জয়ন্তী বর্ষ। বুধবার পুজোর উদ্বোধন হয়েছে।
শেওড়াফুলিতে গঙ্গা লাগোয়া নিস্তারিণী কালিবাড়িতে মায়ের নিত্যপূজা হয়। এখানকার দেবী জাগ্রত হিসেবে পরিচিত। কালীপুজোর সময় হাজার-হাজার মানুষ আসেন এখানকার দেবী দর্শনে। স্বভাবতই মন্দির চত্বরও সাজিয়ে তোলা হয়। মন্দিরের পুরোহিত অরুণ ভট্টাচার্য জানান, বাংলার ১২৩৪ সালে দেবীর প্রতিষ্ঠা করেন বর্ধমানের পাটুলির রাজা হরিশ্চন্দ্র রায়। দেবী পঞ্চমুণ্ডীর আসনে অধিষ্ঠিতা। সেই সময় থেকেই রাজ পরিবারের উত্তরসূরীরা মায়ের সেবা করে আসছেন। কালীপুজোকে ঘিরে মঙ্গলবার থেকেই কার্যত মেলার পরিবেশ।
একই কথা প্রযোজ্য বাঁশবেড়িয়ার হংসেশ্বরী মন্দির বা পাণ্ডুয়ার সিমলাগড় কালীবাড়ির ক্ষেত্রেও। এই দুই মন্দিরেই সারা বছর ধরে অসংখ্য মানুষ আসেন। কালীপুজোর সময় প্রচুর ভিড় হয়। হংসেশ্বরী মন্দির পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের তালিকাভুক্ত। পর্যটন মানচিত্রে জায়গাটিকে তুলে ধরতে মন্দির চত্বর ঢেলে সাজতে উদ্যোগী হয়েছে জেলা প্রশাসন। কালীপুজোকে কেন্দ্র করে এই মন্দির চত্বর এখন আক্ষরিক অর্থেই সেজে উঠেছে। চারদিক আলোর বন্যায় ভাসছে। ভক্তদের ঢল নামতে শুরু করেছে।
ভদ্রকালী কিশোর-তরুণ সঙ্ঘ এ বার থিম পুজো করছে। তাদের থিম— কৈলাস। মণ্ডপ আর আলোকসজ্জার প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে। অন্যবারের মতোই ভদ্রকালী ফ্রেন্ডস ক্লাবের পুজোয় এ বারেও জাঁকজমকের অভাব নেই। দু’টি জায়গাতেই বহু মানুষ ঠাকুর দেখতে আসেন। হরিপাল স্টেশনের কাছে সানস্টোন ক্লাবের পুজো এ বার ৪০ বছরে পা দিল। মণ্ডপ তৈরি হয়েছে আদ্যাপীঠের মন্দিরের অনুকরণে। মণ্ডপে খড় ও বাঁশের বাখারির কাজ নজর কাড়বে। আলোয় সাজানো হয়েছে মণ্ডপের চারপাশ। চণ্ডীতলার বেগমপুর কুইক অ্যাসোসিয়েশনের পুজোর এ বার ৫৩ তম বর্ষ। এ বার তাদের থিম ‘স্বর্গের দেবী, মর্তের মা’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy