Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

শিল্পী খুনে আলোর নকশা নিয়ে চিন্তায় চন্দননগর

জগদ্ধাত্রী পুজোর মুখে নিজের স্টুডিও থেকে বাড়ি ফেরার পথে খুন হয়ে গেলেন চন্দননগরের এক আলোক-শিল্পী। গলার নলিকাটা এবং পেটে গুলি লাগা অবস্থায় রঞ্জন সরকার (৩৬) নামে বাগবাজার এলাকার ওই আলোক-শিল্পীর দেহ মঙ্গলবার ভোরে তাঁর মধ্যাঞ্চলের একটি গলির সামনে পড়ে ছিল। স্থানীয় বাসিন্দারা দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেন।

নিহত শিল্পী।

নিহত শিল্পী।

তাপস ঘোষ
শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৪ ০১:১০
Share: Save:

জগদ্ধাত্রী পুজোর মুখে নিজের স্টুডিও থেকে বাড়ি ফেরার পথে খুন হয়ে গেলেন চন্দননগরের এক আলোক-শিল্পী।

গলার নলিকাটা এবং পেটে গুলি লাগা অবস্থায় রঞ্জন সরকার (৩৬) নামে বাগবাজার এলাকার ওই আলোক-শিল্পীর দেহ মঙ্গলবার ভোরে তাঁর মধ্যাঞ্চলের একটি গলির সামনে পড়ে ছিল। স্থানীয় বাসিন্দারা দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেন। রঞ্জনের স্ত্রী সঙ্গীতার অভিযোগ, দাবিমতো তোলা না দেওয়ায় দুষ্কৃতীরাই তাঁর স্বামীকে খুন করে। পুলিশের কাছে এ নিয়ে লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছেন তিনি।

মাস খানেক ধরে শহরে চুরি-ছিনতাই বেড়েছে। রাতে বিভিন্ন এলাকায় পুলিশি টহল চললেও তা বন্ধ হচ্ছে না। দিন কয়েক আগেই মানকুণ্ডু স্টেশনে নেমে মোটরবাইক নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে আলতারার কাছে এক মোবাইল সংস্থার কর্তার কাছ থেকে তাঁর বাইক ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল দুষ্কৃতীরা। না পেরে তাঁকে গুলিতে জখম করে। তার দু’দিন আগে রাতে একই ভাবে এক ওষুধ ব্যবসায়ীর কাছ থেকেও টাকা ছিনিয়ে নেয় দুষ্কৃতীরা।

এ বার উঠল তোলা না দেওয়ায় খুনের অভিযোগ। পুজোর মুখে এই খুনের ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে আলোক-শিল্পী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে। রঞ্জন আলোক-শিল্পের জন্য ভাল আঁকতেনও (বোর্ডের উপরে আঁকা ছবির উপরেই আলো বসিয়ে ফ্রেম তৈরি করা হয়)। তাঁর এ ভাবে মৃত্যুতে আলোক-শিল্পের বড় ক্ষতি হল বলেও মনে করছেন অনেকে। কেননা দু’তিনজন মাত্র শিল্পী স্কেচ করতেন। তাঁদেরই একজন ছিলেন রঞ্জন।

এসডিপিও (চন্দননগর) সৈকত ঘোষ বলেন, “ঠিক কী কারণে খুন হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নিহতের স্ত্রী তোলা না দেওয়ায় খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন। তার ভিত্তিতে খুনের মামলা রুজু করা হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করা হবে।” আলোক-শিল্পের পাশাপাশি মাস কয়েক ধরে রঞ্জন পুরনো বাড়ি ভাঙার কাজও করছিলেন। সেই সংক্রান্ত কোনও বিবাদের জেরে তাঁকে খুন করা হয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রঞ্জন আদতে লালবাগান-বোসপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তাঁর স্টুডিও রয়েছে তালপুকুর ধার সেকেন্ড লেনে। কাজের সুবিধার জন্য বছর চারেক ধরে তিনি স্ত্রী ও শিশুকন্যাকে নিয়ে বাগবাজার এলাকায় একটি ভাড়াবাড়িতে থাকছিলেন। প্রায় ১১ বছর ধরে তিনি আলোর কাজ করছিলেন। বছর কয়েক ধরে শুরু করেন আলোর মডেলের ছবি আঁকাও। তাঁর আলো চন্দননগরের সীমা ছাড়িয়ে ইতিমধ্যে কলকাতা-সহ রাজ্যের নানা এলাকায় গিয়েছে। এ বারের দুর্গাপুজোতে বনগাঁর মতিগঞ্জ ঐক্য সম্মিলনীতে তাঁর আলো প্রশংসিত হয়। সোমবার সেই আলো চন্দননগরে ফিরে আসে।

আলোকশিল্পী রঞ্জনের হাতের কাজ।

রঞ্জনের স্টুডিও-য় কর্মীর সংখ্যা ২০। সোমবার আলো ফিরে আসায় কর্মীদের আবদার মতো রঞ্জন স্টুডিও-য় খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করেন। সে দিন বিকেল ৪টে নাগাদ তিনি স্টুডিও-য় যান। খাওয়া-দাওয়া সেরে রাত ১১টা নাগাদ এক বন্ধুর সঙ্গে সাইকেলে চেপে বাড়ির উদ্দেশে বেরিয়ে পড়েন। কিন্তু আর ফেরেননি।

পুজোর মুখে কাজের চাপ বেশি থাকায় ইদানীং প্রায়ই স্টুডিওতে রাত কাটাতেন রঞ্জন। তাই সোমবারও কাজের চাপে তিনি ফিরতে পারেননি বলে ধরে নেন তাঁর স্ত্রী সঙ্গীতা। স্বামীকে কোনও ফোনও তিনি করেননি। মঙ্গলবার ভোরে খুনের খবর পান। সঙ্গীতা বলেন, “আমার ফোন করে দেখা উচিত ছিল। বুঝতে পারিনি ও খুন হয়ে যাবে। ওঁর ব্যবসা ভাল চলছিল। কিছু দুষ্কৃতী তোলা চাইছিল বলে স্বামী কিছু দিন ধরে চিন্তিত ছিল। আমি নিশ্চিত সেই কারণেই ওকে খুন করা হল।”

সোমবার রাতে যে বন্ধুর সঙ্গে রঞ্জন ফিরছিলেন, তিনি বলেন, “আমার সাইকেলে ও বাগবাজার পর্যন্ত আসে। তার পরে সিগারেট কিনবে বলে আমাকে বাড়ি চলে যাতে বলে। বলেছিল হেঁটেই বাড়ি চলে যাবে। রঞ্জনের কথামতো আমি বাড়ি চলে যাই। সকালে শুনি ও খুন হয়েছে। কিছুই বুঝতে পারছি না।”

রঞ্জন খুনের ঘটনায় চন্দননগরের আলোক-শিল্পী মহলে শোকের ছায়া নেমে আসে। আলোক-শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাশীনাথ দাস বলেন, “অল্প বয়সে এক আলোক-শিল্পীকে যে ভাবে খুন হতে হল, তাতে এ শহরের আলোক-শিল্পে বিরাট ক্ষতি হল। আমরা মর্মাহত।” প্রায় একই সুরে রঞ্জনের স্টুডিও-কর্মী শুভ দাস বলেন, “দাদা আপদে-বিপদে আমাদের পাশে দাঁড়াতেন। আমরা অথৈ জলে পড়ে গেলাম। দোষীদের যেন উপযুক্ত শাস্তি হয়।”

পরিবেশ-বন্ধু বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় ঘটনার নিন্দা করে দোষীদের গ্রেফতারের দাবি জানান। তিনি বলেন, “আলোক-শিল্পের এক জন গুণগ্রাহী হিসেবে দোষীদের কঠিন শাস্তি চাই। এমন ঘটনা যেন আর না ঘটে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE