Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
সিকিমে বেড়াতে গিয়ে প্রতারিত

সংস্থাকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের

পুজোর মরসুমে সপরিবারে সিকিমে বেড়ানোর জন্য এক ভ্রমণ সংস্থার মাধ্যমে আগেভাগে হোটেল বুকিং, গাড়ির বন্দোবস্ত সবই করিয়েছিলেন চন্দননগরের লালবাগান চকের বাসিন্দা দেবাশিস গুঁই। সংস্থার দাবিমতো টাকাও দেন। কিন্তু কথা দিয়েও গাড়ির বন্দোবস্ত করেনি ওই ভ্রমণ সংস্থা। শেষ পর্যন্ত নিজের পকেটের টাকায় সেই ব্যবস্থা করেন দেবাশিসবাবু।

প্রকাশ পাল
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৪ ০১:২৪
Share: Save:

পুজোর মরসুমে সপরিবারে সিকিমে বেড়ানোর জন্য এক ভ্রমণ সংস্থার মাধ্যমে আগেভাগে হোটেল বুকিং, গাড়ির বন্দোবস্ত সবই করিয়েছিলেন চন্দননগরের লালবাগান চকের বাসিন্দা দেবাশিস গুঁই। সংস্থার দাবিমতো টাকাও দেন। কিন্তু কথা দিয়েও গাড়ির বন্দোবস্ত করেনি ওই ভ্রমণ সংস্থা। শেষ পর্যন্ত নিজের পকেটের টাকায় সেই ব্যবস্থা করেন দেবাশিসবাবু। বিষয়টি সংস্থাকে জানালেও কোনও লাভ হয়নি বলে অভিযোগ দেবাশিসবাবুর। বাড়ি ফিরে এসে ওই ভ্রমণ সংস্থার বিরুদ্ধে হুগলি জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা করেন তিনি। আদালতের প্রধান বিচারক নারায়ণচন্দ্র চক্রবর্তী দেবাশিসবাবুকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন ওই ভ্রমণ সংস্থাকে।

আদালতের বক্তব্য, বাইরে বেড়াতে গিয়ে ঝামেলা এড়াতে আগেভাগে টাকা দিয়ে ওই ভ্রমণ সংস্থার মাধ্যমে পরিষেবা চেয়েছিলেন ওই ব্যক্তি। কিন্তু তিনি প্রতারিত হয়েছেন। পকেটে বাড়তি টাকা না থাকলে সেখানে ওই পরিবারকে সমস্যায় পড়তে হত।

গত বছরের অক্টোবর মাসে দেবাশিসবাবু ৬ দিনের জন্য স্ত্রী-পুত্রকে নিয়ে পশ্চিম সিকিমে বেড়াতে গিয়েছিলেন। হোটেল বুকিং এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার জন্য তিনি চন্দননগরেরই বি সি ভড় রোডের এক ভ্রমণ সংস্থার এজেন্টের কাছে যান। দেবাশিসবাবু জানান, ওই সংস্থার সঙ্গে তাঁর চুক্তি হয়, রেলের টিকিট থেকে শুরু করে গ্যাংটক এবং পেলিংয়ে হোটেল, বেড়ানোর জন্য গাড়ির ব্যবস্থা সবই তারা করবে। একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী দেবাশিসবাবু জানান, তাঁদের বেড়ানোর যাবতীয় সূচি ওই সংস্থাই ঠিক করে দিয়েছিল। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে নামার পর থেকেই গাড়ির বন্দোবস্ত থাকবে, এমনটাই কথা ছিল। গোটা ট্যুর প্যাকেজের জন্য ১৭ হাজার ৭০০ টাকা ধার্য করে ওই সংস্থা। পরিষেবা ভাল পাওয়ার আশায় তিনি পুরো টাকাই অগ্রিম দিয়ে দেন।

দেবাশিসবাবু বলেন, “ওই ভ্রমণ সংস্থার মালিক প্রসেন সরকার আমাদের বার বার বলেছিলেন, আমরা ওখানে গিয়ে পৌঁছলেই হল। পরিষেবা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে না!” বাস্তবে অবশ্য উল্টো অভিজ্ঞতা হয় ওই পরিবারের। গুঁই দম্পতির অভিযোগ, নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে নামার পরে তাঁরা গাড়ি পাননি। এ ব্যাপারে ভ্রমণ সংস্থাকে বার বার ফোন করা হলেও কেউ ফোন ধরেনি। দেবাশিসবাবুর কথায়, “উপায় না দেখে গাড়ি ভাড়া করে হোটেলে পৌঁছই। বেড়ানোর জন্যও গ্যাঁটের কড়ি খরচ করে গাড়ি ভাড়া করতে হয়।”

বাড়িতে ফিরে এসে ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে অভিযোগ জানান দেবাশিসবাবু। তাঁর আইনজীবী গোবিন্দ ঘোষ আদালতে নথিপত্র জমা দিয়ে জানান, ওই ভ্রমণ সংস্থা চুক্তিভঙ্গ করায় তাঁর মক্কেলকে অতিরিক্ত ৮ হাজার ১৪৭ টাকা খরচ করতে হয়েছে সিকিমে গিয়ে। ওই টাকা ছাড়াও সংশ্লিষ্ট ভ্রমণ সংস্থার কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করেন অভিযোগকারী। ভ্রমণ সংস্থার তরফে অবশ্য দেবাশিসবাবুর অভিযোগ চ্যালেঞ্জ করা হয়নি।

অভিযোগকারী পক্ষের বক্তব্য শুনে এবং কাগজপত্র খতিয়ে দেখে আদালত জানায়, ভ্রমণ সংস্থার উপর ভরসা করে সিকিমে বেড়াতে গিয়েছিল ওই পরিবার। কিন্তু চুক্তির পুরো টাকা অগ্রিম হিসেবে পেয়েও সংস্থাটি কথার খেলাপ করেছে। যে কারণে, বেড়াতে গিয়ে যথেষ্ট ভুগতে হয়েছে পরিবারটিকে। অতিরিক্ত টাকা না থাকলে তাঁরা আরও বেকায়দায় পড়তেন। আদালত ওই ভ্রমণ সংস্থা ও তার মালিককে নির্দেশ দিয়েছে, দেবাশিসবাবুর খরচ হওয়া অতিরিক্ত ৮ হাজার ১৪৭ টাকা তাঁকে ফিরিয়ে দিতে হবে। তাঁদের মানসিক কষ্ট, হয়রানির জন্য আরও ৩০ হাজার টাকা দিতে হবে। এক মাসের মধ্যে ওই টাকা না মেটালে ৯ শতাংশ হারে সুদ গুনতে হবে। গোবিন্দবাবু বলেন, “আদালতের এমন রায়ে মানুষের ভরসা বাড়বে।”

এ ব্যাপারে ওই ভ্রমণ সংস্থার মালিক প্রসেন সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “ট্রেনের টিকিট থেকে হোটেল সব ব্যবস্থাই করে দিয়েছিলাম। গাড়ির ব্যবস্থা করতে পারিনি। বেড়াতে যাওয়ার আগেই সেটা ওঁদের জানিয়েছিলাম। হিসেব করে ৮ হাজার টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার কথা হয়। এ জন্য ওই টাকার একটা চেক দিয়েছিলাম। কিন্তু সেটা বাউন্স করে। পরে ওই টাকা ওঁরা চাইতে এসেছিলেন। ব্যবসায় মন্দা চলায় দিতে পারিনি।” তাঁর আরও বক্তব্য, যে ভাবে অভিযোগ করা হয়েছে, তা সত্যি নয়। ওই দম্পতি আট হাজার টাকা পাবেন। সময় দিলে কয়েকটি খেপে তা মিটিয়ে দেওয়া হবে।” আদালতের রায় নিয়ে তিনি বলেন, “ক্ষতিপূরণের টাকা মেটানোর সামর্থ্য আমার নেই।”

আদালতকে কেন তা জানালেন না?

প্রশ্নের উত্তরে প্রসেনবাবুর জবাব, “আমার মানসিক অবস্থা খুব খারাপ। কী করব, ভেবে উঠতে পারিনি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE