Advertisement
০৭ মে ২০২৪
নেশা-নিশি

হাসপাতালে মাদকের ঠেক ভাঙলেন সুপার

পেশায় তিনি পুলিশ নন। কিন্তু কাজ করলেন পুলিশের মতোই। কাউকে কিছু না জানিয়ে রাতের অন্ধকারে একাই হাসপাতালের বিভিন্ন প্রান্তে হানা দিয়ে হাতেনাতে ধরলেন নেশার আসর বসানো যুবকদের। পরে অবশ্য পুলিশ গিয়ে ওই যুবকদের গ্রেফতার করে।রবিবার রাতে হাওড়ার তুলসীদাস লক্ষ্মীরানি জায়সবাল হাসপাতালের ঘটনা। আর যিনি এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন তিনি ওই হাসপাতালেরই সুপার বিশ্বজিৎ রায়। হাসপাতাল সূত্রে খবর, দশ মাস আগে তিনি উত্তরবঙ্গ থেকে এই হাসপাতালের দায়িত্বে আসেন। এর পর থেকেই হাসপাতালের পরিকাঠামোগত সমস্যা সংক্রান্ত অভিযোগের পাশাপাশি নেশার আসর বসা নিয়েও তাঁর কাছে অভিযোগ আসতে থাকে।

সুপার বিশ্বজিৎ রায়।

সুপার বিশ্বজিৎ রায়।

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:৩১
Share: Save:

পেশায় তিনি পুলিশ নন। কিন্তু কাজ করলেন পুলিশের মতোই। কাউকে কিছু না জানিয়ে রাতের অন্ধকারে একাই হাসপাতালের বিভিন্ন প্রান্তে হানা দিয়ে হাতেনাতে ধরলেন নেশার আসর বসানো যুবকদের। পরে অবশ্য পুলিশ গিয়ে ওই যুবকদের গ্রেফতার করে।

রবিবার রাতে হাওড়ার তুলসীদাস লক্ষ্মীরানি জায়সবাল হাসপাতালের ঘটনা। আর যিনি এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন তিনি ওই হাসপাতালেরই সুপার বিশ্বজিৎ রায়। হাসপাতাল সূত্রে খবর, দশ মাস আগে তিনি উত্তরবঙ্গ থেকে এই হাসপাতালের দায়িত্বে আসেন। এর পর থেকেই হাসপাতালের পরিকাঠামোগত সমস্যা সংক্রান্ত অভিযোগের পাশাপাশি নেশার আসর বসা নিয়েও তাঁর কাছে অভিযোগ আসতে থাকে।

হাসপাতাল সূত্রের খবর, রবিবার ছুটির দিন হলেও হাসপাতালের কিছু কাজ সেরে বিকেলে নিজের কোয়ার্টার্সে ফিরে যান বিশ্বজিৎবাবু। সন্ধ্যা হতেই তাঁর মনে হয় রাতে হাসপাতালের বাস্তব চিত্রটা দেখা প্রয়োজন। এর পরেই কাউকে কিছু না জানিয়ে আটটা নাগাদ তিনি সোজা চলে আসেন হাসপাতালে।

বিশ্বজিৎবাবু জানান, গাড়ি থেকে নেমে তিনি সোজা পৌঁছন স্টোর রুমের সামনে। সেখানে তিনি দেখেন গাছপালায় ঘেরা আলো-আঁধারি পরিবেশে বহিরাগত পাঁচ যুবক গোল হয়ে বসে নেশা করছে। কিছুটা দূরে রাখা দু’টি মোটরবাইক। বিশ্বজিৎবাবু গিয়ে নেশার বোতলটি তুলে নিয়ে তাদের বলেন, ‘‘এখানে এ সব চলবে না। আমি এই হাসপাতালের সুপার। আপনারা আমার সঙ্গে আসুন। আমি আপনাদের বাড়ির লোকেদের ডাকব।’’ বিশ্বজিৎবাবু জানান, এর পরেই ওই যুবকেরা হম্বিতম্বি শুরু করে। এক যুবক রীতিমতো দেখে নেওয়ার হুমকিও দিতে থাকেন বলে অভিযোগ। ‘‘আমাকে হুমকি দিয়ে কোনও লাভ নেই’’, বলেই বিশ্বজিৎবাবু বেলুড় থানায় ফোন করেন। পুলিশের সঙ্গে সুপারকে কথা বলতে দেখে মোটরবাইক ফেলে চম্পট দেয় পাঁচ যুবক।

পুলিশ জানায়, সুপারের ফোন পেয়েই বেলুড় থানা থেকে হাসপাতালের দিকে রওনা হয় পুলিশবাহিনী। তবে পুলিশ আসার আগেই বিশ্বজিৎবাবু ফের হানা দেন হাসপাতালের পিছন দিকের চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের কোয়ার্টার্সের দিকে। সেখানে মেরামতির কাজ চলায় কেউ থাকেন না। বিশ্বজিৎবাবু জানান, সেখানেও একটি ঘরে নেশার আসর বসিয়েছিলেন জনা আটেক স্থানীয় যুবক। সুপার ও ওই যুবকদের মধ্যে বচসা চলাকালীনই সেখানে পৌঁছে যায় পুলিশ। হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয় ওই যুবকদের।

কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে যে কাজ করার কথা পুলিশের, তা হাসপাতালের সুপারকে করতে হল কেন? এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘হাসপাতালে ঢুকে তল্লাশি চালাতে গেলে সুপারের অনুমতি লাগে। তবে এ দিন সুপার জানানোর সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ হাসপাতালে পৌঁছে গিয়েছিল।’’ তবে ওই হাসপাতাল এলাকায় রাতে আরও টহলদারি বাড়ানো প্রয়োজন এবং তা অবিলম্বে করা হবে বলেই জানিয়েছেন পুলিশকর্তারা।

পুলিশ সূত্রে খবর, হাসপাতাল চত্বরের ভিতরে অনেক ফাঁকা জায়গা ও পরিত্যক্ত আবাসন রয়েছে। এ ছাড়াও রয়েছে দু’টি পুকুর, মূল হাসপাতাল ভবন ও কয়েকটি কোয়াটার্স। স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই ফাঁকা জায়গা ও পরিত্যক্ত বাড়িতেই রাতে বসে নেশার আসর। এক স্থানীয় বাসিন্দা বদরুদ্দোজা আনসারি বলেন, ‘‘এই সুপার আসার পরে হাসপাতালে অনেক উন্নয়নের কাজ হয়েছে। আশা করি এ বার রাতে বাইরের লোকেদের ঢোকা বন্ধ হবে।’’

বিশ্বজিৎবাবু এ দিন বলেন, ‘‘হাসপাতালের ভালর জন্য যেটুকু করা দরকার, সেটুকুই আমি করেছি। তার থেকে বেশি কিছু নয়। নিরাপত্তার জন্য হাসপাতাল চত্বরে সিসিটিভি লাগানো হচ্ছে। পুলিশ যদি নিয়মিত তল্লাশি চালাতে চায়, তাতে আমার আপত্তি নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE