Advertisement
E-Paper

১৪৬ বছরেও মেলেনি পথযন্ত্রণা থেকে মুক্তির উপায়

জেলা সদর চুঁচুড়ার বুক চিরে একেঁবেঁকে গঙ্গার পাড় ধরে একটানা রাস্তা মিশেছে বাঁশবেড়িয়া শহরে। প্রোমোটারের ছায়া এখনও সে ভাবে দীর্ঘতর হয়নি গঙ্গাপারের এই তল্লাটে। হুগলিতে ঐতিহ্যশালী দু’টি শহরে পুর পরিষেবা তুলনায় ভাল। তার একটি চন্দননগর হলে অপরটি নিশ্চিতভাবেই বাঁশবেড়িয়া। কিন্তু ঐতিহাসিক এই শহরের বড় সমস্যা হচ্ছে ছোট অপরিসর রাস্তা। উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা যে কোনও শহরের জাত চিনিয়ে দেয়। কিন্তু গঙ্গাপারের প্রাচীন এই শহরের সে ব্যাপারে বরাবরই গা-ছাড়া ভাব।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:৩৪
শহরের প্রধান রাস্তা চুঁচুড়া-বাঁশবেড়িয়া রোড এমনই অপরিসর।

শহরের প্রধান রাস্তা চুঁচুড়া-বাঁশবেড়িয়া রোড এমনই অপরিসর।

জেলা সদর চুঁচুড়ার বুক চিরে একেঁবেঁকে গঙ্গার পাড় ধরে একটানা রাস্তা মিশেছে বাঁশবেড়িয়া শহরে। প্রোমোটারের ছায়া এখনও সে ভাবে দীর্ঘতর হয়নি গঙ্গাপারের এই তল্লাটে। হুগলিতে ঐতিহ্যশালী দু’টি শহরে পুর পরিষেবা তুলনায় ভাল। তার একটি চন্দননগর হলে অপরটি নিশ্চিতভাবেই বাঁশবেড়িয়া।

কিন্তু ঐতিহাসিক এই শহরের বড় সমস্যা হচ্ছে ছোট অপরিসর রাস্তা। উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা যে কোনও শহরের জাত চিনিয়ে দেয়। কিন্তু গঙ্গাপারের প্রাচীন এই শহরের সে ব্যাপারে বরাবরই গা-ছাড়া ভাব। ১৮৬৯ সালে গঠিত হয় বাঁশবেড়িয়া পুরসভা। তার পর থেকে বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন সময়ে এই সমস্যা সমাধানে নানা পরিকল্পনা করা হলেও আজ পর্যন্ত স্থায়ী সমাধান অধরাই থেকে গিয়েছে।

২২টি পুর ওয়ার্ডের এই শহরে রাস্তা অত্যন্ত অপরিসর বললে অনেক কম বলা হয়। শুধু অপরিসর নয়, রাস্তা বাড়ানোর ক্ষেত্রে দৃশ্যত কোনও উপায় না থাকাটাও আরও বড় সমস্যা। কারণ রাস্তার দু’দিকে এমন কোনও জায়গাই অবশিষ্ট নেই, যে অংশে রাস্তা চওড়া করার কাজ করা যাবে। রাস্তার দু’দিকে এমনভাবে বাড়িঘর তৈরি হয়েছে যে রাস্তা চওড়া করার সামান্য সুযোগও নেই। আর যেখানে রাস্তাই নেই, পরিবহণ সমস্যা যে সেখানে বড় আকার নেবে তা বলাইবাহুল্য। জেলা সদর চুঁচুড়া থেকে শহরে ঢোকার একটিই রাস্তা চুঁচুড়া-বাঁশবেড়িয়া রোড। তা এতই সংকীর্ণ যে বড় যানবাহন দূরঅস্ত, পাশাপাশি দু’টি অটোও সাবলীলভাবে যেতে পারে না। ফলে স্বাভাবিক ভাবে গাড়ি চলে শম্বুকগতিতে।

প্রস্তাবিত বাসস্ট্যান্ডের জন্য গ্যাঞ্জেস জুটমিলের কাছে সেই জায়গা। ছবি: তাপস ঘোষ।

সড়ক পরিবহণে এ হেন দুর্দশা থেকে বেরিয়ে আসতে এক সময় বাইপাস তৈরির পরিকল্পনা করেছিল পুরসভা। সে ক্ষেত্রেও প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় রাস্তা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় জমি। কারণ পুরসভার হাতে সেই পরিমাণ জমি নেই যেখান দিয়ে বাইপাস তৈরি করা যায়। এই পরিস্থি্তিতে কোনও বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়। সম্প্রতি আবার বাইপাস তৈরি নিয়ে পুরসভা-সহ বিভিন্ন স্তরে কথাবার্তা শুরু হয়েছে। পুর এলাকার ১১, ১৩, ১৮, ১৯ এবং ১০৯ নম্বর ওয়ার্ড দিয়ে ওই বাইপাস হওয়ার কথা। রাস্তার জন্য যে জমির কথা ভাবা হচ্ছে তা মূলত রেলের। ফলে রাস্তা তৈরি করতে হলে রেলের অনুমতি ছাড়া সম্ভব নয়। বাঁশবেড়িয়া পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান অমিত ঘোষ বলেন, “আমরা একাধিক বার রেলের ডিআরএমের সঙ্গে বৈঠক করেছি বাইপাসের জন্য জমির প্রয়োজনীয় অনুমতি চেয়ে। এর আগেও এক সময় রেলের অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। তখন কিন্তু কোনও আপত্তি তোলা হয়নি। এখন রেল আপত্তি না করলেও বাইপাসের জমি ব্যবহারের অনুমতির জন্য প্রচুর টাকা দাবি করছে তারা। যে টাকা পুরসভার পক্ষে তো নয়ই, রাজ্য সরকারের পক্ষেও দেওয়া কঠিন বলেই মনে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সর্বসাধারণের ব্যবহারের জন্য জনস্বার্থের কথা বিবেচনা করে রেলকে আমরা ফের বিষয়টি বিবেচনার জন্য অনুরোধ করেছি।”

রাস্তা সমস্যার পাশাপাশি বাঁশবেড়িয়ায় আর একটি সমস্যা হল, শহরে কোনও বাসস্ট্যান্ডও নেই। তবে সম্প্রতি সেই ব্যাপারে পদক্ষেপ করা হচ্ছে বলে পুরসভা সূত্রের খবর। স্থানীয় একটি জুটমিলের জমি লিজ নিয়ে সেখানে বাসস্ট্যান্ড তৈরিতে উদ্যোগী হয়েছে পুরসভা। তবে তা কবে বাস্তবায়িত হবে সে বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু জানাতে পারেনি পুর কর্তৃপক্ষ।

সড়ক পরিবহণে যেখানে এই হাল, সেখানে বিকল্প হিসেবে রেল যাতায়াতের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হতে উঠতে পারত। কিন্তু সে পথেও বাধা পরিষেবার হাল। ব্যান্ডেল-কাটোয়া শাখার এই লাইনে হাতেগোনা কয়েকটি ট্রেন চলাচল করে প্রতিদিন। ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানোর দাবি দীর্ঘদিনের হলেও তাতে আজও সাড়া মেলেনি। ফলে সময়ের সঙ্গে তাল রেখে বাঁশবেড়িয়ায় অন্য অনেক কিছুর উন্নয়ন হলেও পরিবহণের চালচিত্র প্রাচীনই থেকে গিয়েছে।

gautam bandyopadhyay southbengal bansberia
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy