Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

মধ্যবিত্ত খুশি হলেও বিপাকে আমচাষি

এক দিকে অত্যাধিক ফলনে আম বিক্রি করে লাভ না হওয়ার অভিযোগ তুলছেন চাষিরা, আর এক দিকে মধ্যবিত্তের পাতে গড়াগড়ি খাচ্ছে হিমসাগর, মল্লিকা। এ মরসুমে জেলার আম-ছবিটা এমনই।

বাজারের ডাস্টবিনে পড়ে আম।— নিজস্ব চিত্র।

বাজারের ডাস্টবিনে পড়ে আম।— নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কালনা শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৫ ০১:০১
Share: Save:

এক দিকে অত্যাধিক ফলনে আম বিক্রি করে লাভ না হওয়ার অভিযোগ তুলছেন চাষিরা, আর এক দিকে মধ্যবিত্তের পাতে গড়াগড়ি খাচ্ছে হিমসাগর, মল্লিকা। এ মরসুমে জেলার আম-ছবিটা এমনই।

বর্ধমানের হাটগোবিন্দপুরেরর দিকে কয়েকটা ছোট বাগান ছাড়া কালনার দুই ব্লক ও পূর্বস্থলীর দুই ব্লকে বেশ কিছু বড় পুরনো আমবাগান রয়েছে। হিমসাগর, পেয়ারাফুলি ল্যাংড়া থেকে মল্লিকা থেকে আম্রপালী সবই ফলে সেই বাগানে। আবার গতানুগতিক চাষে লাভ না পেয়ে দু-পাঁচ বিঘা জমির উপরে সব্জি চাষের ফাঁকেও আমগাছ লাগিয়েছেন অনেক চাষি। তাঁদের দাবি, এ বছর বেশির ভাগ গাছেই ভাল মুকুল এসেছিল। তার সঙ্গে ঠিক সময়ে বৃষ্টি হওয়ায় ফলনও খুব ভাল হয়েছে। ফলে মরসুমের গোড়া থেকেই বাজারে দেখা মিলেছে নানা জাতের আমের।

কালনায় চকবাজার, নিয়ন্ত্রিত বাজারসমিতির কমপ্লেক্স, কালেখাঁতলা-সহ বেশ কিছু পাইকারি বাজার রয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আম বিক্রি হয় চকবাজারে। বর্ধমান তো বটেই আশপাশের হুগলি ও নদিয়া থেকেও বহু চাষি এখানে আম বিক্রি করতে আসেন। বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ভোর থেকেই বহু আড়তের সামনেই ঝুড়ি ঝুড়ি ভর্তি আম সাজানো রয়েছে। স্থানীয় আঁটির আম তো বটেই হিমসাগরও রয়েছে ঢালাও। চাষিদের দাবি, অতিরিক্ত ফলনে আমের দাম এতটাই কমে গিয়েছে যে হিমসাগরের দর নেমে এসেছে ১০-১১ টাকা কেজিতে। আর আঁটির আম বা স্থানীয় চন্দ্রমল্লিকা বিক্রি করতে হচ্ছে ৫-৮ টাকা কেজি দরে। তাঁদের আরও দাবি, আমের গায়ে আঠার দাগ বা কালো ছোপ থাকলে সে ঝুড়ির দিকে ফিরেও তাকাচ্ছেন না ক্রেতারা। দর পড়ে যাওয়ায় এ বছর বিহারের নাগাছিয়া, খুল্লা, পটনা, কারগোলা-সহ বেশ কয়েকটি এলাকা থেকেও অনেকে গাড়ি নিয়ে আম কিনতে আসছেন বলে চাষিদের দাবি। তাঁরা জানান, বাইরে থেকে লোক না এলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতো। তবে তারপরেও আড়তে বহু ঝুড়ি পড়ে থাকছে। ৭০-৮- টাকাতেও ঝুড়ি ভর্তি আম বিকিয়ে যাচ্ছে। আবার অনেক চাষিই ভাড়া দিয়ে ওই ঝুড়ি ফেরত না নিয়ে গিয়ে বাজারের ডাস্টবিন ফেলে দিচ্ছেন। সে আম যাচ্ছে গরুর পেটে। বর্ধমান শহরেও খোলা বাজারে হিমসাগরের দাম ১৮-২০ টাকা। ল্যাংড়া মিলছে ২২ টাকা কেজিতে। পাইকারি বাজার থেকে বিক্রেতারা এই আম কিনছেন ল্যাংড়া ১৮ টাকা কেজি আর হিমসাগরে ১৫-১৬ টাকায়। বড়শূল, হাটগোবিন্দপুরের আমচাষিরা জানান, তাঁরা পাইকারি বাজারে ১০ টাকায় হিমসাগর আর ১২-১৪ টাকায় ল্যাংড়া বিক্রি করছেন।

আম চাষিদের দাবি, এত কম দামে আম বিক্রি হওয়ায় চাষের খরচই উঠছে না। চাষিরা জানান, আমের বোঁটা শক্ত রাখতে মুকুল আসার পরে বেশ কয়েকবার ওষুধ স্প্রে করতে হয়। এ বার সেই সমস্ত কীটনাশকের দাম বেড়েছে। পাশাপাশি পাহারাদার, আম পাড়া, কার্বাইড দিয়ে তা জাঁক দেওয়া, আম রাখার ঝুড়ি কেনা, বাজারে আসার গাড়িভাড়া, আড়তদারের কমিশন মিলিয়ে খরচা অনেক বেড়ে গিয়েছে। তাছাড়া গরমে গাছে একসঙ্গে সব আম পেকেও যাচ্ছে। ফলে বাধ্য হয়েই জলের দরে আম বিক্রি করে দিতে হচ্ছে বলে দাবি শান্তিপুর, হাঁসপুকুর, শাসপুর, কল্যাণপুর, মিরের বাগানের চাষিদের। কুলেদা এলাকার এক আমচাষি মধুসূদন সরকার বলেন, ‘‘আমের গায়ে একটু দাগ থাকলে ক্রেতারা আর নিতে চাইছে না। ফলে খারাপ আম গাড়ি ভাড়া দিয়ে বাজারে অনেকেই আনছে না। ওই সব আম বাগানের আশেপাশেই ফেলে দিচ্ছি আমরা। এ বারের মতো এত কম দামে কবে আম বিক্রি করেছি মনে পড়ছে না।’’ তাঁর দাবি, চুক্তিতে যাঁরা বাগান নিয়েছেন তাঁদের দশা আরও করুণ। বেশির ভাগ আম বিক্রি করেও চুক্তির অর্ধেক টাকাও তুলতে পারছেন না তাঁরা। আর এক আম চাষি উত্তম পালের বক্তব্য, ‘‘গাছে উঠতে হয় বলে আম পাড়ার মজুরি বেশি। তাছাড়া গরমে প্রচুর আম গাছেই পেকে যাচ্ছে। হিমঘরও নেই। বাধ্য হয়েই যা দাম মিলছে তাতেই আম বেচতে হচ্ছে।’’

তবে চাষিদের মাথায় হাত পড়লেও চেটেপুটে আম খেতে পেয়ে খুশি বাঙালি। সব্জি বাজার তো বটেই মুদির দোকানেও দেদার বিকোচ্ছে আম। কালনার বাসিন্দা ভাস্করজ্যোতি ষোষ, রবীন্দ্রনাথ সরকারেরা বলেন, ‘‘বহু বছর পরে সস্তায় আম পাচ্ছি। ভাল সব্জিও নেই। ভাতের পাতেই রোজ আম খাচ্ছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE