আলিপুরদুয়ারে জয়ন্তী নদীর কোলে পর্যটকদের ভিড়। —ফাইল চিত্র।
একটা দিন পেরোলেই মহালয়ার ভোর। আর পুজো যত এগিয়ে আসছে ততই ভিড় বাড়ছে পাহাড়, ডুয়ার্সের পযর্টন কেন্দ্রগুলিতে। লাটাগুড়ি থেকে মূর্তি, কিংবা ঝান্ডি থেকে সুনতালেখোলা, দার্জিলিং থেকে গ্যাংটক সর্বত্রই পর্যটকেরা খোঁজখবর শুরু করেছেন।
পর্যটন সংস্থাগুলি সূত্রে জানা গিয়েছে, অনেক জায়গাতেই নতুন করে আর আর বুকিং নেওয়াও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তবে বিমান ভাড়া অত্যাধিক হারে বাড়ায় একশ্রেণির পর্যটকেরা এই অঞ্চলের পরিবর্তে দেশের অন্য প্রান্তে যাওয়ার নিয়েও চিন্তাভাবনাও শুরু করেছেন। গত মার্চ-এপ্রিল মাসে গরমের মরসুমে এই সমস্যা না থাকায় পযর্টকদের ভিড়ে উপচে পড়েছিল উত্তরবঙ্গ। যেমন ইস্টার্ন হিমালয়া ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারের্টস অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী সভাপতি সম্রাট সান্যাল বলেন, ‘‘পুজোর মরসুমে সাধারণত এই অঞ্চলে ভালই ভিড় হয়। অনেক জায়গায় বুকিংও ভাল হচ্ছে। তবে এই অঞ্চলের অত্যাধিক বিমান ভাড়া একটা সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার পরেও আশা করছি, ভালই হবে।’’
ইতিমধ্যে ডুয়ার্সে পুজোর মরসুম ভালই কাটবে বলে পর্যটন সংস্থাগুলির অনুমান। লাটাগুড়ি রিসর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক দিব্যেন্দু দেব জানান, আমাদের সংগঠনের সদস্য প্রায় ৪০টির কাছাকাছি রিসর্ট রয়েছে। সবকটিতেই পুজোর বুকিং হয়েছে। আগামী ১৫ অক্টোবর থেকে কোনও রিসর্টের একটি ঘরও ফাঁকা থাকবে না। মূর্তি এলাকার রিসর্ট মালিকদের সংগঠন গরুমারা ট্যুরিজম ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তা অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘এখনও গত বছরের ব্যবসাকে ছাপিয়ে গিয়েছে এ বারের বুকিং। ২ অক্টোবরের ছুটি থেকেই ভিড় শুরু হয়ে গিয়েছে। গোটা নভেম্বর মাসের বুকিংও শেষ হয়ে গিয়েছে।’’
ঝান্ডি, সুনতালেখোলা, লাভা, ঝালং সর্বত্রই একই চিত্র। ইতিমধ্যেই কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেসে প্রচুর পর্যটক ডুয়ার্সে পৌঁছতে শুরু করায় উৎসাহ ছড়িয়েছে গাড়ি ব্যবসায়ীদের মধ্যেও। মালবাজারের পর্যটনের কাজে গাড়ি ভাড়া দেন বহু গাড়ির ব্যবসায়ী। তাঁরা জানান, শিলিগুড়ির এনজেপি কিংবা বাগডোগরা থেকে পর্যটকদের রিসর্টগুলোতে পৌঁছে দেওয়া হয়। অনেকেই ফোনে যোগাযোগ করে আগে থেকেই গাড়িও আগাম বুকিং করে রেখেছেন। শিলিগুড়ির বিভিন্ন পর্যটন সংস্থাগুলিও রোজ ফোন পাচ্ছেন পযর্টকদের। অনেকেই ডুয়ার্সের সঙ্গে পুরোদস্তুর শীতের আগে দার্জিলিং, কালিম্পং মত পাহাড় বা সিকিমও ঘুরে নিতে চাইছেন।
পুজোর চার দিনেও ডুয়ার্সের বক্সা ও চিলাপাতা এলাকায় পর্যটকদের অগ্রিম বুকিংয়ে খুশি পর্যটন ব্যবসায়ীরা। ২৪২ এবং অক্টোবর জয়ন্তী বক্সা চিলাপাতা রায়মাটাং সহ লজ ও হোমস্টেগুলিতে তিল ধারণের জায়গা নেই জানাচ্ছেন হোমস্টে ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত রামকুমার লামা। তিনি জানান, লেপচাখাতে ছটি সদর বাজার ও বক্সাদুয়ারে চারটি সান্তলাবাড়িতে তিনটি, ২৮ মাইল বন বস্তিতে আটটি, জয়ন্তীতে ১৬টি রাজাভাতখাওয়ায় ৫টি ও রায়মাটাংয়ে চারটি হোমস্টে রয়েছে। প্রায় মাস দুয়েক আগে থেকেই পর্যটকরা পুজোর বুকিং সেরে রেখেছেন। বহু পর্যটকের অনুরোধ ফেরাতে হয়েছে। গত বছর পুজোর সময় এত বুকিং ছিল না। কারণ গত বছর এনসেফ্যালাটিসের আতঙ্কে অনেক পর্যটক এ দিকে আসেননি।
ইস্টার্ন ডুয়ার্স রির্সট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনে কার্যকরী সভাপতি পার্থসারাথি রায় জানান, জয়ন্তী ও বক্সা পাহাড়ের লজগুলিতে বুকিং ভালই হয়েছে। বক্সা পাহাড়ের ট্রেকিং করে ওঠা ছাড়াও এবং জয়ন্তী নদীর সামনে জয়ন্তী পাহাড়ের চোখ জুড়িয়ে যাওয়া দৃশ্য দেখার চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। পযর্টন ব্যবসায়ীরা জানান, একদিকে যেমন রাস্তাঘাট সংস্কার হয়েছে যোগাযোগের সেতু বেড়েছে। সঙ্গে বন ও পর্যটন দফতর পর্যটনের প্রসারে প্রচার করায় এবছর পুজোয় পর্যটকদের সংখ্যা গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণ হয়েছে। আমরা চাইছি আরো প্রচারের সঙ্গে পর্যটনের নতুন নতুন দিক খুলুক। ভুটান ঘাট পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণ হলেও সেখানে যাওয়ার অনুমতি এখনও মেলেনি।
চিলাপাতা এলাকার লজ মালিকেরা জানান, চিলপাতার চিরসবুজ অরণ্য এবং জঙ্গল ভ্রমের সময় প্রায় বন্যপ্রাণী দেখতে পাওয়া যায়। সেজন্য চিলাপাতায় যে ছ’টি লজ রয়েছে তার সব কয়টি পুজোর চারদিন ফুল বুকিং রয়েছে। তাছাড়া পুজোর আগে পরেও পর্যটকদের বুকিংয়ের বেশ চাহিদা রয়েছে। পর্যটকদের ভিড় বাড়ায় খুশি গাড়ি চালক ও টুরিস্ট গাইডরাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy