দুর্ঘটনাস্থল। —ছবি পিটিআই
মাকে একা ছেড়ে দেওয়া কি ঠিক হল? প্রথমে এটাই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল সাঁতরাগাছির বাসিন্দা গৌরী হেমব্রমের। বৃদ্ধা মাকে ফুট ওভারব্রিজ ধরে পার হতে বলে বছর সাতাশের তরুণী গিয়েছিলেন টিকিট কাটতে। মায়ের সঙ্গে আর দেখা হয়নি! সাঁতরাগাছি স্টেশনের ফুট ওভারব্রিজে পদপিষ্ট গৌরী এখন গার্ডেনরিচ রেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
বুধবার গৌরী বলেন, ‘‘এখন মনে হচ্ছে আগে মাকে পাঠিয়ে দিয়ে ভালই করেছিলাম। মা এই ভিড়ের মধ্যে পড়লে বাঁচত না।’’ মঙ্গলবার সন্ধ্যার মৃত্যুভয় যে এখনও তাঁকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে, তা তাঁর কথাতেই স্পষ্ট। গৌরী বলেন, ‘‘কিছু বোঝার আগেই এতগুলো লোক হুড়মুড় করে ঘাড়ের উপরে পড়ল। ফুট ব্রিজে কী যে হয়েছিল বলতে পারি না। তবে কোনও কারণে সকলেই দ্রুত ব্রিজ ছাড়তে চাইছিলেন। আমার উপরে এক মহিলা এসে পড়লেন। আর কিছু মনে নেই!’’ পরে হাসপাতালে মেয়ে গৌরীকে খুঁজে পেয়েছেন তাঁর মা রবানী। তিনি বলেন, ‘‘মেয়ের সঙ্গে রামরাজাতলায় চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছিলাম। ব্রিজে কিছু একটা হয়েছে বুঝে মেয়ের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করেও পারিনি।’’ পরে শোনেন, আরও অনেকের সঙ্গে গৌরী হাসপাতালে ভর্তি।
কেরল ঘুরে সপরিবার ফিরছিলেন মানিকতলার সুকিয়া স্ট্রিটের বাসিন্দা হনুমন্তপ্রসাদ সাউ। স্ত্রী কিরণ ছাড়াও সঙ্গে ছিলেন বছর দশেকের পুত্র অকসত এবং সাত বছর বয়সি মেয়ে অর্ণা সাউ। সকলেই এখন মুকুন্দপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হনুমন্তপ্রসাদ বলছিলেন, ‘‘শালিমারে নেমে ট্যাক্সি পাওয়া সমস্যা। তাই সাঁতরাগাছি নেমেছিলাম। এক নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে উঠে দু’নম্বরে যাওয়ার পথে দেখি প্রবল ভিড়। এক নিরাপত্তারক্ষীর কথা মতো ফুট ওভারব্রিজের এক দিকে দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ প্রবল ধাক্কায় আমার মেয়ে আর স্ত্রী নীচে পড়ে যায়। এর পরে আমার উপরেও একটি বুড়ো লোক এসে পড়েন। আর কোনও জ্ঞান ছিল না।’’ হাসপাতালে ছেলে-মেয়ে এবং স্ত্রীকে ফিরে পেয়েছেন হনুমন্তপ্রসাদ।
প্রথম বার কলকাতায় পা রেখেই এ রকম অভিজ্ঞতা কোনও দিনও ভুলবেন না কেরলের আলপুঝার মহম্মদ আনাস। হাওড়া হাসপাতালে শুয়ে তিনি জানান, কেরলে পোশাকের ব্যবসা রয়েছে তাঁর। বড়বাজার থেকে শাড়ি কিনতে বন্ধুর সঙ্গে প্রথম বার কলকাতায় আসছিলেন। আনাসের কথায়, ‘‘রাতে থাকার জন্য ঘরের খোঁজে লাইন পা়র হয়ে অন্য দিকে যাচ্ছিলাম। ভিড়ে প্রথমে ফুটব্রিজে ওঠাই যাচ্ছিল না। পরে ধাক্কা খেয়ে নীচে পড়লাম। আমার বন্ধুও কয়েকটা সিঁড়ি উপর থেকে নীচে পড়ে। পায়ে চোট পেয়েছে।’’ কেরল থেকে ফেরার পথে একই অভিজ্ঞতা শিপ্রা ওঁরাওয়ের। এক নম্বর থেকে ভিড় ঠেলে আর দু’নম্বর প্ল্যাটফর্মে যাওয়া হয়নি। এখন তিনি গার্ডেনরিচের রেল হাসপাতালে।
ভাইকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন হাওড়া নলপুরের বাসিন্দা আশিস সাঁতরা। সাঁতরাগাছি থেকে ট্রেন ধরার কথা ছিল তাঁদের। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘একসঙ্গে অনেকগুলো ট্রেন ঢুকে পড়ে। সবাই আমরা ফুটব্রিজ ধরে যেতে চাইছিলাম। ধাক্কাধাক্কিতে নীচে পড়ে যাই। উপর থেকে ভারী কিছু পড়ায় আর পা নাড়াতে পারছিলাম না। তার মধ্যেই ভাইকে খুঁজছি। ওকে ছাড়া যাব কোথায়?’’ প্ল্যাটফর্মে থাকায় সেই ভাই সুস্থ রয়েছেন। হাসপাতালে শুয়ে সেই ভাইকে ফিরে পেয়েছেন আশিস। এ দিন হাসপাতালে গিয়ে জখম ব্যক্তিদের সঙ্গে দেখা করেন সাউথ ইস্টার্ন রেলওয়ের জেনারেল ম্যােনজার পি এস মিশ্র। জখমদের সমস্ত সাহায্যের আশ্বাস দেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy