আবেদন: পুনীত যাদব।
শনিবার দুপুর ১টা ৪১। নবান্নে কর্মরত আমলা পুনীত যাদব ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলেন ‘ফিলিং স্যাড’!
দুঃখের কারণ? নিজের ওয়ালে সেটাও সংক্ষেপে লিখলেন পুনীত— ‘আমার বাবা-মা বৃদ্ধ ও অসুস্থ। সঙ্গে থেকে তাঁদের চিকিৎসা করানোর জন্য আমার দিল্লিতে পোস্টিং দরকার। সে জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাজে যোগ দিতে চেয়ে রাজ্যের কাছে আবেদন করেছি।’
পুনীত যাদব এ রাজ্যের অর্থ দফতরের সচিব (বাজেট)। ১৯৯৯ ব্যাচের আইএএস। ফেসবুক স্ট্যাটাসের শেষ লাইনে যিনি লিখেছেন, ‘বন্ধুরা, আমার দিল্লি যাত্রার জন্য প্রার্থনা করুন।’
এখানেই প্রচ্ছন্ন শ্লেষ দেখছেন কেউ কেউ। তাঁরা মনে করছেন, আমলাদের বদলির ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনড় নীতি নিয়েই আসলে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন পুনীত। কিন্তু রাজ্যের বাজেট তৈরির দায়িত্বে থাকা এই আমলা তাঁর বদলির আর্জির নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই কেন ফেসবুকে সব কিছু লিখতে গেলেন, তা নিয়ে তুমুল চর্চা শুরু হয়েছে প্রশাসনিক মহলে। প্রশ্ন উঠেছে, এক জন আমলা কি প্রকাশ্যে এ নিয়ে কথা বলতে পারেন?
আরও পড়ুন: গোঘাটে আক্রান্ত বিকাশ ভট্টাচার্য, গাড়ি থেকে নামিয়ে কটূক্তি ও মারধর
প্রশাসনের একটি অংশের মতে, ফেসবুকে এই স্ট্যাটাস দিয়ে পুনীত শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছেন। যদিও পুনীতের বক্তব্য, ‘‘আমি কোনও শৃঙ্খলাভঙ্গ করিনি। মনের কথা লিখেছি। আশা করছি, সরকার আমার আবেদনে সাড়া দেবে।’’ সরকারের শীর্ষ স্তরের এক আমলা অবশ্য জানান, পুনীতের আবেদন গ্রাহ্য হবে না। ‘‘এখন আমরা কাউকে ছাড়তে পারব না’’— বলেছেন তিনি। ওই অফিসার কি শৃঙ্খলা ভাঙলেন? নবান্নের বক্তব্য, সেটা বিবেচনা করে দেখা হবে।
সরকারে আসার পর থেকেই রাজ্যের আইএএস-আইপিএস-দের কেন্দ্রের ডেপুটেশনে পাঠানো কার্যত বন্ধ করে দিয়েছেন মমতা। তাঁর যুক্তি, ‘‘রাজ্যের যা কাজ, সেই তুলনায় অফিসার নেই। ফলে চাইলেই ছাড়া যাবে না।’’ যদিও আমলা
মহল মনে করে, আইএএস-দের কেন্দ্রীয় সরকারে চাকরি করাটাও দরকার। তথ্য বলছে, রাজ্য ক্যাডারে এখন আইএএস প্রায় ২৭৫ জন। তাঁদের মধ্যে মাত্র জনা দশেক অফিসার কেন্দ্রে রয়েছেন। দশ জনের চার জন রয়েছেন কেন্দ্রীয় সচিব পর্যায়ে। অথচ, বাম আমলে দিল্লিতে ছিলেন রাজ্যের ৪২ জন আইএএস। একে একে তাঁরা ফিরে এলেও নতুন করে প্রায় কেউই আর দিল্লি যেতে পারেননি।
নবান্নের খবর, বেশ কয়েক জন দিল্লিতে যেতে চেয়ে আবেদন করলেও অনুমতি দেননি মুখ্যমন্ত্রী। তিনি অফিসারদের না-ছাড়ায় কলকাতা বন্দর বা টি-বোর্ডের চেয়ারম্যানের মতো পদে ভিন্ রাজ্যের অফিসারকে বসানো হয়েছে। তা সত্ত্বেও এই মনোভাব নিয়ে এত দিন মুখ খোলেননি কেউ।
পুনীতের বাড়ি আগরায়। বাবার বয়স প্রায় ৮০। চোখে দেখতে পান না, হাড়ের ক্ষয়ে পঙ্গু দশা। সমস্যা হৃদযন্ত্র-ফুসফুসেও। মায়ের বয়স ৭২। তাঁরও নানা অসুস্থতা। পুনীত একমাত্র সন্তান হওয়ায় দূরে থেকে বাবা-মায়ের দেখভাল করতে সমস্যা হচ্ছে তাঁর। সেই কারণেই মাসখানেক আগে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বদলির দরখাস্ত করেন। আর্জি জানান অর্থমন্ত্রী, অর্থসচিব এবং মুখ্যসচিবের কাছেও। কিন্তু সকলেই তাঁকে বলেন, যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার মুখ্যমন্ত্রীই নেবেন। বারবার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েও ব্যর্থ হন পুনীত। তার পরেই আচমকা এ দিন মুখ খোলেন ফেসবুকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy