Advertisement
E-Paper

হুগলিতে অভিযানেও অবাধ ‘কুটির শিল্প’

পুরশুড়ার রাউতারা গ্রামের রেখা বাউরির ক্ষোভ, চোলাইয়ের বিরুদ্ধে পুলিশ বা আবগারি দফতরের অভিযান ‘বুড়িছোঁয়া’। ঠেক ভাঙা হলে দু’দিনে তা ফের গজিয়ে ওঠে নেতাদের প্রশ্রয়ে।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়, পীযূষ নন্দী

শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৮ ০১:১৯
অবৈধ: প্যাকেটে ভরা হচ্ছে চোলাই। গোঘাটের মথুরায়। ছবি: মোহন দাস

অবৈধ: প্যাকেটে ভরা হচ্ছে চোলাই। গোঘাটের মথুরায়। ছবি: মোহন দাস

ঝাঁঝিয়ে উঠলেন আরামবাগের রাংতাখালি গ্রামের প্রৌঢ়া, ‘‘মরদগুলো চোলাই না খেয়ে বাঁচতে পারে না। যেটুকু আয় করে, সব চোলাই খেয়েই সাবার করে ফেলে।’’

পুরশুড়ার রাউতারা গ্রামের রেখা বাউরির ক্ষোভ, চোলাইয়ের বিরুদ্ধে পুলিশ বা আবগারি দফতরের অভিযান ‘বুড়িছোঁয়া’। ঠেক ভাঙা হলে দু’দিনে তা ফের গজিয়ে ওঠে নেতাদের প্রশ্রয়ে।

সাত বছর আগে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সংগ্রামপুরে চোলাই কেড়েছিল বহু প্রাণ। তখন ঠেক বন্ধে পুলিশি তৎপরতা শুরু হয়েছিল সর্বত্র। বাদ যায়নি হুগলিও। কিন্তু তারপর? বছর ঘুরতেই ফের গজিয়ে উঠতে থাকে একের পর এক ঠেক। আরামবাগ, পুরশুড়া, পান্ডুয়া, সিঙ্গুর— কোথায় নয়! বুধবার নদিয়ায় ফের বিষমদ-কাণ্ড। ফের সাত জনের মৃত্যুর কথা জানার পরে ক্ষোভে ফুঁসছেন হুগলির গ্রাম-মফস্‌সলের বহু মহিলাই। খারাপ পরিণতির আশঙ্কা রয়েছে তাঁদেরও।

আরামবাগ মহকুমা জুড়ে যেন চোলাইয়ের ফোয়ারা ছোটে! এখানকার বহু গ্রামেই চোলাই তৈরি যেন ‘কুটির শিল্প’! পুড়শুড়ার রাউতাড়া গ্রাম সংলগ্ন আকবরি খালের পাড় জুড়ে ৪৫টা চোলাইয়ের ভাটি চলে বলে অভিযোগ। গোঘাটের মথুরা, পুড়শুড়ার ফুলপুকুর, নিমডাঙি, খানাকুলের নতিবপুর, মাড়োখানা, আরামবাগের পুরা, সুজলপুর, গৌরহাটি, গোঘাটের দামোদরপুর, কানাইপুর, পশ্চিমপাড়া-সহ বহু গ্রামে চোলাইয়ের রমরমা। এখান থেকে হুগ‌লি, লাগোয়া বর্ধমান, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুরের নানা জায়গায় চোলাই যায় বলে জানান কারবারিরাই।

বিভিন্ন জায়গায় মহিল‌ারা চোলাইয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন। এক বছর আগে আরামবাগ পঞ্চায়েত সমিতির এক তৃণমূল সদস্যকে ২০ লিটার চোলাই-সহ পুলিশের হাতে তুলে দেন গ্রামের মহিলারা। গোঘাটের বাজুয়া গ্রামে মহিলারা চোলাইয়ের গোটা পনেরো ঠেকে হামলা চা‌লান। ভাটি-মালিকরা পালালেও নিজেদের স্বামীকে লাঠিপেটা করে জলে চোবান তাঁরা। গোঘাটের বালি পঞ্চায়েতের কানাইপুর গ্রামেও মহিলাদের এই উদ্যোগ দেখা গিয়েছিল।

কেন পুরোপুরি রোখা যায় না চোলাই কারবার?

আবগারি দফতরের অনেক কর্মী বা আধিকারিক মনে করেন, মানুষ উদ্যোগী না হলে চোলাই ব্যবসা উচ্ছেদ করা কঠিন। আবগারি দফতরের তেমন পরিকাঠামো নেই। গাড়ি এবং কর্মীর সংখ্যা অপ্রতুল। জেলা আবগারি দফতরের ডেপুটি কালেক্টর শান্তনু রায়ের অবশ্য দাবি, “নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। চোলাইয়ের কারবার অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ হয়েছে।’’

সিঙ্গুরের বড়া, পহলমপুর, পলতাগড়, মির্জাপুর-বাঁকিপুর, বারুইপাড়া, চণ্ডীতলা, কাপাসহাড়িয়া, বেগমপুর, তারকেশ্বরের গুড়েভাটা-সহ নানা জায়গাতেও চোলাই কারবার চলে বলে অভিযোগ। মাসতিনেক আগে সিঙ্গুরের গৌরীবাটী গ্রামে অভিযান চালাতে গিয়ে চোলাই কারবারিদের হাতে বেধড়ক মারধর খেয়েছেন পুলিশ ও আফগারি দফতরের অফিসারেরা। ভাঙচুর করা তিনটি সরকারি গাড়ি। পরে পুলিশ বাহিনী অভিযান চালিয়ে প্রায় ৩৫০০ লিটার চোলাই নষ্ট করে। লাগোয়া ময়নাপুকুরেও অভিযান চলে। কিন্তু বুধবার সেখানে গিয়ে দেখা গেল, ফের চোলাইয়ের হাঁড়ি এবং গুড়ের টিন মাথায় বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এক যুবক। দিব্যি চলছে চোলাই কারবার।

পুলিশ কর্তারা দাবি করছেন, নিয়মিত অভিযান চলে। তবু পরিস্থিতি বদলায় না।

Corruption Adulterated Hooch Adulterated Liquor Death
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy