খরচ-খরচার হিসেব-নিকেশ নিয়ে চাপানউতোর। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রাজনীতির দড়ি টানাটানি!
ঘটনার মূলে তৃণমূল নেতৃত্বকে পাঠানো আয়করের একটি নোটিস। যাতে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের অধীন আয়কর দফতর তৃণমূলের দলীয় সংগঠনের বিরুদ্ধে কিছু আর্থিক অসঙ্গতির অভিযোগ তুলে তার ব্যাখ্যা দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে। এতে তৃণমূলের অন্দরে প্রতিক্রিয়াও তীব্র। দলীয় সূত্রের দাবি— তৃণমূলের আয়-ব্যয়ের নিয়মিত হিসেব সুষ্ঠু ভাবে রাখার জন্য বিশিষ্ট চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট রয়েছেন। অনিয়মের কোনও প্রশ্ন ওঠে না।
তাই অভিযোগকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন হিসেবে দেখছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, বিশেষ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়েই কেন্দ্র এ ভাবে তাঁর দলকে অপদস্থ করার চেষ্টা করছে। মমতা দলীয় নেতাদের বলে রেখেছেন, বিষয়টির নিষ্পত্তি তাঁরা কিছুতেই কেন্দ্রের কাছে আবেদন-নিবেদন করবেন না। বরং আইনের পথেই ব্যাপারটা বুঝে নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, মনমোহন সিংহের জমানাতেও অর্থ মন্ত্রক এক বার তৃণমূলকে আয়কর-নোটিস ধরিয়েছিল। মমতা তখন খোদ মনমোহনের কাছে নালিশ করেন। মোদী জমানায় আয়কর নোটিস তো আছেই, উপরন্তু ক’দিন আগে অর্থ মন্ত্রকের কিছু অফিসার এসে রাজ্য ট্রেজারির পরিস্থিতি অনুসন্ধান করে দেখতে চেয়েছিলেন। তারও তীব্র প্রতিবাদ করেছেন মমতা। দিল্লিকে তিনি পরিষ্কার জানিয়েছেন, রাজ্যের ট্রেজারিতে সরাসরি অনুসন্ধানের কোনও সাংবিধানিক এক্তিয়ার কেন্দ্রের নেই।
কেন্দ্রীয় সূত্রের খবর: বিধানসভা ভোটের আগেই তৃণমূলকে ওই আয়কর নোটিস পাঠানো হয়েছিল। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির অধীনস্থ দফতরের এ হেন পদক্ষেপের নেপথ্যে রাজ্য বিজেপির প্ররোচনা রয়েছে বলে তখনই অভিযোগ তোলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। উল্লেখ্য, ওই সময়ে সিবিআই-ও সারদা-তদন্তের জন্য তৃণমূল ভবনে গিয়ে টাকা-পয়সার হিসেব চেয়ে বসে। কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরোর সেই ‘অনধিকার চর্চা’র তীব্র প্রতিবাদ করেছিলেন মমতা।
ঘটনা পরম্পরার পিছনে ‘রাজনৈতিক অভিপ্রায়ের’ ইঙ্গিতও মিলছে দিল্লির সূত্রে। কী রকম?
কেন্দ্রে একাংশের মতে, বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব চাইছিলেন মমতা সরকারকে চাপে ফেলে জিএসটি-সহ বিভিন্ন বিল পাশের পথ সুগম করা। মোদীবিরোধী ফ্রন্ট গঠন থেকে তৃণমূলনেত্রীকে নিরস্ত করাও উদ্দেশ্য ছিল। তবে কেন্দ্রীয় এক সূত্রের পর্যবেক্ষণ, জেটলি এখন বুঝতে পারছেন, এতে উল্টো ফল হওয়ার বিলক্ষণ সম্ভাবনা। বস্তুত তেমন আভাসও মিলেছে। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় নির্ধারিত দিনে জিএসটি বিল পাশ হয়নি। উদ্বিগ্ন জেটলি মমতাকে বার্তা পাঠিয়েছেন, তিনি নিজে রাজ্যের প্রতিটি সমস্যা খতিয়ে দেখবেন। একই ভাবে ফরাক্কা ব্যারাজ ঘিরে সাময়িক টানাপড়েন শেষ করে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশকুমার ও মমতা ফের কেন্দ্রবিরোধী ভূমিকায় এক মঞ্চে। ‘‘সব মিলিয়ে চাপ সৃষ্টি করতে গিয়ে দিল্লি নিজেই খানিক বেকায়দায়।’’— মন্তব্য কেন্দ্রীয় এক সূত্রের। একেই বুঝি বলে শঠে শাঠ্যং!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy