বুধবার রাতে মুম্বইয়ের আকাশে ভিড় করেছে বিমান। তারই ছবি এটিসির মনিটরে। —নিজস্ব চিত্র।
কেউ বাড়তি জ্বালানি পুড়িয়ে ঘুরপথ ধরছে। বেশি জ্বালানি পোড়াতে নারাজ কোনও কোনও সংস্থা বাতিল করছে উড়ান। ভারত-পাকিস্তান টানাপড়েনের মধ্যে ঘাম ছুটে যাচ্ছে কলকাতা বিমানবন্দরের কর্মী-অফিসারদের। বিস্তর জটিল অঙ্ক কষে বিভিন্ন উড়ানকে ঘুরিয়ে দিচ্ছেন তাঁরা।
কাবুল থেকে বিমানে দিল্লি আসতে লাগে ঘণ্টা দুয়েক। বুধবার পাকিস্তান যখন তাদের আকাশপথ বন্ধ করে, স্পাইসজেটের একটি বিমান ছিল কাবুলে। ইরান, মাসকট, মুম্বই ঘুরে দিল্লিতে পৌঁছতে প্রায় ছ’ঘণ্টা সময় লেগেছে তার। স্পাইসজেটের ওই বিমানকে ভারতে ফিরতেই হত। তাই বাধ্য হয়ে বেশি জ্বালানি পুড়িয়ে সে যাত্রীদের নিয়ে দিল্লি ফিরেছে। কিন্তু বেশির ভাগ আন্তর্জাতিক উড়ান সংস্থা অতিরিক্ত জ্বালানি পোড়াতে রাজি নয়। স্বাভাবিক অবস্থায় রোজ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে পরের দিন ভোর সাড়ে ৫টা পর্যন্ত কলকাতার উপর দিয়ে গড়ে ৫০০ আন্তর্জাতিক উড়ান যায়। বুধবার রাতে গিয়েছে ৩০৫টি।
বৃহস্পতিবার রাতে পাকিস্তানের অসামরিক বিমান মন্ত্রক জানায়, আজ, শুক্রবার যাত্রী-বিমান চলাচলের জন্য আকাশপথ খুলে দেওয়া হবে। দেশে-বিদেশে আটকে পড়া হাজার হাজার পর্যটককে স্বস্তি দিয়েছে এই ঘোষণা। স্বস্তি ফিরেছে উড়ান সংস্থাগুলিতেও।
আরও পড়ুন: হাওয়ার গতি উল্টো থাকাতেই পাকিস্তানের হাতে ধরা পড়েন অভিনন্দন
কলকাতা বিমানবন্দরের কর্তারা জানান, বুধবার রাতে বহু আন্তর্জাতিক উড়ান সংস্থা উড়ান বাতিল করেছে। কিছু উড়ান গিয়েছে পূর্ব গোলার্ধ দিয়ে। কিছু আন্দামানের দক্ষিণ আকাশ দিয়ে চেন্নাই এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)-এর সঙ্গে যোগাযোগ করে উড়ে গিয়েছে। মায়ানমার থেকে ৩০৫টি বিমান কলকাতায় ঢুকেছিল। তাদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় নাগপুরের দিকে। সেখান থেকে মুম্বই হয়ে তারা উড়ে গিয়েছে পশ্চিমে।
আরও পড়ুন: দলে একাধিক পরিবর্তন, দেখে নিন হায়দরাবাদ ওয়ান ডে-তে ভারতের সম্ভাব্য একাদশ
কলকাতার এয়ার ট্র্যাফিক ম্যানেজমেন্টের জেনারেল ম্যানেজার কল্যাণ চৌধুরী বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘কলকাতা ও মুম্বই এটিসি অফিসারদের উপরে মারাত্মক চাপ তৈরি হয়েছে। কারণ, এত উড়ানকে মুম্বইয়ের দিকে পাঠাতে গেলেও কলকাতার অফিসারদের অনেক অঙ্ক কষতে হচ্ছে। এক-একটি বিমানকে তাদের আগের রুট থেকে কমবেশি প্রায় ২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ঘোরাতে হচ্ছে। একই রুটে একসঙ্গে অনেক বিমান যাতে চলে না-আসে, সেটাও খেয়াল রাখতে হচ্ছে।’’
আরও পড়ুন: রাজনীতির প্রয়োজনে যুদ্ধ চাই না, দেশের প্রয়োজনে আমরা রয়েছি: মমতা
এত বিমানের চাপ এর আগে মুম্বই এটিসি-কেও নিতে হয়নি। তাই তারা মুম্বইয়ের আকাশকে দু’ভাগ করে অনেক বেশি অফিসারের সাহায্যে বিমানের উপরে নজরদারি চালাতে শুরু করেছে। বিমানবন্দর সূত্রের খবর, বায়ুসেনা মুম্বইয়ের আকাশের একটি রুট যাত্রী-বিমানকে ব্যবহার করতে দিচ্ছে না। এই অবস্থায় হাতে গোনা দু’তিনটি রুটের উপরে চাপ পড়ছে। কাঠমান্ডু, দিল্লি, অমৃতসর থেকে ইউরোপের বিমানও দক্ষিণে মুম্বইয়ের দিকে এসে ওমানের দিক দিয়ে যাচ্ছে।
বিমানবন্দরের কর্তাদের কথায়, একই রুটে এত বিমান থাকায় চাইলেও নিজেদের কাঙ্ক্ষিত উচ্চতা দিয়ে উড়তে পারছে না অধিকাংশ বিমান। জ্বালানির খরচ ন্যূনতম রাখতে হলে এই কাঙ্ক্ষিত উচ্চতায় উড়তে হয়। সেটা সম্ভব না-হওয়ায় অতিরিক্ত জ্বালানি পুড়ছে। তার উপরে প্রায় কান পেঁচিয়ে নাক ধরার মতো এতটা পথ ঘুরে ইউরোপ যাওয়ার জন্য আরও জ্বালানি খরচের আশঙ্কা আছে। তাই বাধ্য হয়েই অনেকে উড়ান বাতিল করছে বলে মনে করা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy