Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
লক্ষ্যমাত্রা পূরণে তাড়াহুড়ো মেদিনীপুরে

শিক্ষাকেন্দ্রে শৌচালয়ে পিছিয়ে রাজ্য

দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশের প্রায় আড়াই বছর পরেও হয়নি সব শিক্ষাকেন্দ্রে শৌচালয় গড়া। সুপ্রিম কোর্ট ২০১২ সালে দেশের প্রতিটি শিক্ষাকেন্দ্রে শৌচালয় তৈরির নির্দেশ দিয়েছিল। অধিকাংশ রাজ্যই সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি। পশ্চিমবঙ্গও ব্যতিক্রম নয়। আগামী ৩০ জুনের মধ্যে ফের এ ব্যাপারে হলফনামা দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত।

সুমন ঘোষ
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৫ ০১:৫৯
Share: Save:

দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশের প্রায় আড়াই বছর পরেও হয়নি সব শিক্ষাকেন্দ্রে শৌচালয় গড়া।

সুপ্রিম কোর্ট ২০১২ সালে দেশের প্রতিটি শিক্ষাকেন্দ্রে শৌচালয় তৈরির নির্দেশ দিয়েছিল। অধিকাংশ রাজ্যই সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি। পশ্চিমবঙ্গও ব্যতিক্রম নয়। আগামী ৩০ জুনের মধ্যে ফের এ ব্যাপারে হলফনামা দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত। তারপরেই যুদ্ধকালীন তৎপরতায় শুরু হয়েছে শৌচালয় তৈরির কাজ। এ ব্যাপারে পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা সর্বশিক্ষা মিশনের প্রকল্প আধিকারিক সুদীপ্ত দেবনাথ বলেন, “৩০ জুনের মধ্যেই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শৌচালয় তৈরির কাজ শেষ করার চেষ্টা করছি। যে সব শিক্ষাকেন্দ্রে শৌচালয় ছিল না, তাদের টাকা দিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

সব শিক্ষাকেন্দ্রে শৌচালয় তৈরির দাবি উঠেছিল অনেক আগেই। এ নিয়ে এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানায়। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই আবেদনের ভিত্তিতে ২০১২-র ৩ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয় যে, ছ’মাসের মধ্যে দেশের সমস্ত শিক্ষাকেন্দ্রে শৌচালয় তৈরি করতে হবে। আদালত নির্দেশ দিয়েছিল যে, শৌচালয় মানে শুধু একটি ছোট ঘর নয়। তা যেন সকলের ব্যবহারের উপযোগী হয়। অর্থাৎ, আগে তৈরি করা সবার ব্যবহারের উপযুক্ত নয় এমন শৌচাগার দেখিয়ে কেউ যেন দাবি না করে, যে শিক্ষাকেন্দ্রে শৌচালয় রয়েছে। তেমন দাবি করলে, আগে তা সংস্কার করে সবার ব্যবহারের উপযোগী করতে হবে। ছাত্র ও ছাত্রীদের জন্য আলাদা শৌচালয় করতে হবে। এ বার সেই কাজই শুরু হয়েছে এ রাজ্যে। সম্প্রতি ৩০ জুনের মধ্যে হলফনামা দেওয়ার নির্দেশ আসার পরেই নড়চড়ে বসে রাজ্য। সব জেলা থেকে সংগ্রহ করা হয় পরিসংখ্যান। মাসের শুরুতে দেখা যায়, রাজ্যে ১১ হাজার শিক্ষাকেন্দ্রে নতুন শৌচালয় তৈরি করা প্রয়োজন। তড়িঘড়ি সব জেলাকে টাকা বরাদ্দও করে দেওয়া হয়। কাজ হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখতে আগের মতো লিখিত রিপোর্টের আশায় বসে থাকা নয়, প্রতিদিন ফোন করে শুরু হয় খোঁজ নেওয়া। তা করতে গিয়ে দেখা যায়, চলতি মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত রাজ্যে ১৩,৬০৪টি নতুন শৌচালয় বানানো সম্ভব হয়েছে। বাকি রয়েছে ৮,৩৯৮টি (ছাত্র ৪,০৯০, ছাত্রী ৪,৩০৮)।

প্রশ্ন উঠছে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ রূপায়ণ করতে এত দেরি হল কেন?

প্রশাসনের এক আধিকারিকের কথায়, “নির্দেশ থাকলেও নজরদারি ছিল না। ফলে, কাজ হয়েছে ঢিমেতালে। তাই লক্ষ্যেও পৌঁছনো যায়নি।” আরও একটি কারণ হল— আগে শিশু শিক্ষাকেন্দ্র বা মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রে শৌচালয় তৈরি করতে সর্বশিক্ষা অভিযান থেকে অর্থ বরাদ্দ হতো না। টাকা দিত জেলা পরিষদ। কিন্তু সরকারি আধিকারিকদের একটা বড় অংশের অভিজ্ঞতা, জেলা পরিষদ অন্য প্রকল্পের তুলনায় এই প্রকল্পে কম অর্থ-সাহায্য করত। এ বার সব ক্ষেত্রেই সর্বশিক্ষা অভিযান থেকে টাকা দেওয়া হচ্ছে, এমনকী, শৌচালয় সংস্কারের জন্যও দেওয়া হচ্ছে ৫৫ হাজার টাকা। যার মধ্যে ৩৫ হাজার টাকায় শৌচালয়ে জলের ব্যবস্থা ও ২০ হাজার টাকায় শৌচালয় সংস্কার করতে বলা হচ্ছে। হাতে আর এক সপ্তাহও নেই। এত অল্প সময়ের মধ্যে কি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা যাবে?

এক আধিকারিক বলেন, “আট-দশ দিনেই কাজ হবে। কিন্তু যে ব্লকে শৌচাগারবিহীন শিক্ষাকেন্দ্রের সংখ্যা বেশি, সেখানে কিছুটা সমস্যা হবে। তড়িঘড়ি কাজ করাতে গিয়ে মান বজায় রাখাও কঠিন হবে।” জেলা প্রশাসনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সব বিদ্যালয় ও শিক্ষাকেন্দ্রে শৌচালয় তৈরি করতে হলে এখনও ৩,৫৫১টি নতুন শৌচালয় তৈরি করতে হবে। ১,৪২২টি শৌচালয় সংস্কার করতে হবে। তা যে এই ক’দিনে কার্যত অসম্ভব তা প্রশাসনিক কর্তাদের কথাতেই স্পষ্ট। তাই প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র ও ছাত্রীদের দু’টি শৌচালয় না হলেও আপাতত অন্তত একটি শৌচালয় তৈরি করে ফেলতে চাইছে সরকার। গোপীবল্লভপুরের ধুতুরকুণ্ডিয়া শিশুশিক্ষাকেন্দ্র সহায়িকা সংঘমিত্রা পাল নন্দীর কথায়, ‘‘স্কুলে আগে শৌচালয় ছিল না। চলতি মাসে টাকা দিয়ে বলা হয়, দশ দিনের মধ্যে শৌচালয় গড়তে হবে। কাজ শেষের পথে।” চন্দ্রকোনা রোডের বিলা-নতুনপাড়া শিশু শিক্ষাকেন্দ্রের সহায়িকা মৌসুমী বসু বলেন, “আগের শৌচালয় নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এ বার সেটি সংস্কার এবং নতুন শৌচালয়ের জন্যও টাকা দেবে বলেছে সর্বশিক্ষা মিশন। টাকা পেলেই দ্রুত কাজ শেষ করতে হবে বলেও জানিয়েছে।”

এর পরেও সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। কারণ, অনেক শিক্ষাকেন্দ্রেরই নিজস্ব জমি নেই। প্রশাসন জানিয়েছে, যে ক্ষেত্রে জমি নেই, সে ক্ষেত্রে জমি না থাকার কারণে শৌচালয় গড়া যায়নি বলে জানিয়ে দেওয়া হবে। এক কর্তার কথায়, “জমি না থাকলে কিছু করার নেই। যেখানে জমি রয়েছে, সেখানে সময়ে শৌচালয় গড়াটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE