বন্দর ঘেঁষা রবীন্দ্রনগরের অস্ত্র কারখানা কতদূর জাল বিস্তার করেছে, তা খতিয়ে দেখতে ধৃতদের জেরা করছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। পাশাপাশি, দফায় দফায় তাদের জেরা করছেন রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থা সিআইডি-র কর্তারাও।
রাজ্য পুলিশের এক কর্তার কথায়, ওই কারখানায় তৈরি অস্ত্র দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে গিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। রবীন্দ্রনগরের কারখানার মালিক আফতাব হোসেনের কাছ থেকে অস্ত্র নিয়ে ধৃত নিজাম পুরকাইত ও মহম্মদ সেলিম সেগুলি কোথায় কোথায় বিক্রি করেছে, তার হদিস মিলেছে বলে দাবি করেছেন গোয়েন্দারা। তিন বছর ধরে মূলত দক্ষিণবঙ্গের বেশ কিছু এলাকায় ওই অস্ত্র বিক্রি করা হয়েছে। ফলে ওই সব এলাকায় ঘরে ঘরে অস্ত্র ছড়িয়ে গিয়েছে বলে অনুমান গোয়েন্দাদের। মূলত দুই ২৪ পরগনা, মালদহ ও নদিয়া জেলায় ওই অস্ত্র বিক্রি করা হয়েছিল বলে জানাচ্ছে পুলিশ। রাজ্য পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘ওই সব এলাকায় বিভিন্ন সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে একাধিক বার আক্রান্ত হয়েছে পুলিশ। মালদহে পুলিশের উপর গুলি চালানোর ঘটনাও ঘটেছে। ওই সব এলাকায় যদি অস্ত্র ভাণ্ডার তৈরি হয়ে থাকে, তাহলে পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক।’’
তদন্তকারীদের কথায়, দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং, বাসন্তী, ডায়মন্ড হারবার, উস্তি, উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জ, সন্দেশখালি ও বসিরহাট এলাকায় অস্ত্র বিক্রি করেছে নিজাম। এ ছাড়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনার জীবনতলা থানা এলাকায় এক ব্যক্তিকে সে প্রচুর ওয়ান শটার ও নাইন এম এম বিক্রি করেছে বলেও জেরায় জানিয়েছে নিজাম।
গোয়েন্দা সূত্রে খবর, সোমবার রাতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ঘটকপুকুর এলাকা থেকে জীবনতলা থানা এলাকার বাসিন্দা রেজাউল মোল্লা নামে এক অস্ত্র কারবারিকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাকে জেরা করেই নিজাম ও সেলিমের হদিস পায় পুলিশ। মঙ্গলবার সকালে ক্যানিং থানা এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। ক্যানিং এলাকায় সব অস্ত্র রেজাউলকে বিক্রি করা হত বলে জেরায় নিজাম জানিয়েছে। এ দিকে, নিজামের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া একটি ডায়েরির সূত্র ধরে ওই দিন দুপুরে রবীন্দ্রনগর থানার খানকুলি এলাকায় আফতাব হোসেনের হদিস মেলে। তখনই গ্রেফতার করা হয় মুঙ্গের থেকে আসা দুই কারিগর অহেদ হোসেন ও মহম্মদ আসলামকেও।
গোয়েন্দারা জানান, রবীন্দ্রনগরের কারখানা থেকে অস্ত্র নিয়ে কলকাতা ও শহরতলি এলাকায় বিক্রি করত মহেশতলা এলাকার বাসিন্দা সেলিম। আর বিভিন্ন জেলায় অস্ত্র বিক্রি করত নিজাম। ২০০৫ সালেও অস্ত্র পাচারের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিল নিজাম। কয়েক বছর জেলে থাকার পরে জামিনে ছাড়া পেয়ে সে ফের অস্ত্র ব্যবসায় হাত লাগিয়েছে বলে দাবি গোয়েন্দাদের।
সিআইডির এক কর্তার কথায়, রেজাউলের বাড়ি বাংলাদেশে। বছর পাঁচেক জীবনতলা থানার ঈশ্বরীপুরে ঘাঁটি গেড়ে রয়েছে সে। ওই কর্তার আশঙ্কা, রবীন্দ্রনগরের অস্ত্র সীমান্তের ওপারেও পাচার করে থাকতে পারে রেজাউল। সোমবার রাতে তার কাছ থেকে একটি একনলা বন্দুক উদ্ধার হয়েছে। নিজাম ও সেলিমের পাশাপাশি রেজউলকেও দফায় দফায় জেরা করা হচ্ছে।
রাজ্য পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘যদি জেলায় জেলায় বেআইনি মুড়ি-মুড়কির মতো অস্ত্র ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা। পরিস্থিতি খুবই ঘোরালো হয়ে উঠছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy