E-Paper

সাংসদ খুনে প্রমাণ অধরাই, শহরে ঢাকার গোয়েন্দারা

বাংলাদেশের গোয়েন্দা প্রধান হারুন অর রশীদ শনিবার সাংবাদিক বৈঠক করে জানান, তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ পুলিশের একটি দল রবিবার সকালেই সাংসদ খুনের তদন্তে কলকাতায় আসছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০২৪ ০৮:১৮
শনিবার বাংলাদেশের নিহত সাংসদের দেহের খোঁজে বাগজোলা খালে তল্লাশি চালাচ্ছেন সিআইডি ও বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর।

শনিবার বাংলাদেশের নিহত সাংসদের দেহের খোঁজে বাগজোলা খালে তল্লাশি চালাচ্ছেন সিআইডি ও বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর। —নিজস্ব চিত্র।

ব্যবসায়িক লেনদেন নিয়ে বাল্যবন্ধুর সঙ্গে মতবিরোধের কারণেই কি খুন হয়েছেন বাংলাদেশের ঝিনাইদহ-৪ আসনের সাংসদ আনোয়ারুল আজিম? সিআইডি জেনেছে, বাল্যবন্ধু আখতারুজ্জামান শাহিনের সঙ্গে সোনার ব্যবসা করতেন আজিম। ব্যবসায়িক লেনদেনের কয়েক কোটি টাকা না পাওয়া নিয়ে আজিমের উপরে শাহিনের ক্ষোভ ছিল বলে তদন্তকারীদের একাংশের অভিমত। মনে করা হচ্ছে, প্রতিহিংসার কারণেই নিখুঁত ছক কষে কলকাতায় ডেকে সাংসদকে ‘নিকেশের’ পরিকল্পনা করে শাহিন। তবে এখনও বহু ধোঁয়াশা রয়েছে দু’দেশের তদন্তকারী গোয়েন্দাদের। সাংসদের দেহের কোনও টুকরো এবং দেহ টুকরো করার ছুরি কাঁচির হদিস মেলেনি। এই পরিস্থিতিতে গোয়েন্দাপ্রধান হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে বাংলাদেশ পুলিশের একটি দল এই খুনের তদন্তে আজ রবিবার সকালেই কলকাতা আসছে। সিআইডির হাতে ধরা পড়া কসাই জিহাদ হাওলাদারকে জেরা করতে পারে ওই দল।

সাংসদের দেহাংশের সন্ধানে শনিবারও বাগজোলা খালের নির্দিষ্ট অংশে জাল ফেলে তল্লাশি চালায় রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশ। অন্যতম অভিযুক্ত জিহাদ ওরফে জুবেরকে জেরা করে দেহাংশ জিরেনগাছা ও কৃষ্ণমাটি সেতুর কাছে বাগজোলা খালে ফেলা হয়েছিল বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। এই খুনে বাংলাদেশ থেকে তিন জন এবং কলকাতা থেকে এক জন গ্রেফতার হলেও আরও চার জন অভিযুক্ত শাহিন, সিয়াম, ফয়জল এবং মুস্তাফিজুর এখনও অধরা। তাদের খোঁজ পেতে ইন্টারপোলের সাহায্য নিতে পারে রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশ। তদন্তকারীদের ধারণা, শাহিন আমেরিকায় এবং সিয়াম নেপালে পালিয়েছে। বাকি দু’জন বাংলাদেশে থাকতে পারে। এদের ধরার ব্যপারে পদক্ষেপ করা হচ্ছে বলে সিআইডি সূত্রের খবর।

বাংলাদেশের গোয়েন্দা প্রধান হারুন অর রশীদ শনিবার সাংবাদিক বৈঠক করে জানান, তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ পুলিশের একটি দল রবিবার সকালেই সাংসদ খুনের তদন্তে কলকাতায় আসছেন। হারুন দাবি করেন, বাংলাদেশে তাঁকে খুন করার জন্য দু’বার পরিকল্পনা করেও তা রূপায়ণ করতে পারেনি চক্রীরা। এর পরেই তারা আনোয়ারুলকে কলকাতায় ডেকে নিয়ে গিয়ে খুনের চক্রান্ত করে। হারুনের দাবি, সাংসদকে দিন দুই আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায়ের পরিকল্পনাও ছিল। কিন্তু বেশি পরিমাণ চেতনানাশক প্রয়োগের ফলে তিনি অর্ধমৃত হয়ে পড়েন। তখন তাঁকে মেরে ফেলা হয়। কলকাতার তদন্তকারীরা বলছেন, চেতনানাশক বা ক্লোরোফর্ম প্রয়োগের বিষয়টি বাংলাদেশ পুলিশ তাদের আগে বলেনি।

খুনের অপারেশনে শাহিন ‘সুপারি কিলার’ শিমুল ভুঁইয়াকে নিয়োগ করে বলে তদন্তে উঠে এসেছে। এই শিমুলই আমানুল্লা আমান নামে জাল পাসপোর্ট হাতে কলকাতায় এসে ঘাঁটি গেড়েছিল। শিমুলের আবার বহুমাত্রিক পরিচয়। সে মাওবাদী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। সেখান থেকে কালক্রমে ‘খুলনার ত্রাস’ এবং ‘সুপারি কিলার’-এ পরিণত হয় বলে পুলিশের দাবি। শিমুল বাংলাদেশে একাধিক খুনের মামলায় অভিযুক্ত। তবে দশ বছরেরও বেশি সময় তার হদিস ছিল না। ২০১৯ নাগাদ নিজের নাম বদলে সে আমানুল্লা নামে পাসপোর্ট তৈরি করে। গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, শিমুলের এক আত্মীয় বাংলাদেশে প্রভাবশালী সরকারি অফিসার। সরকারি যোগসাজস কাজে লাগিয়েই সে ওই ভুয়ো পাসপোর্ট তৈরি করায় বলে তদন্তকারীদের সন্দেহ। ওই পাসপোর্ট নিয়েই সাংসদ খুনের দু’সপ্তাহ আগে এ রাজ্যে ঢোকে শিমুল ওরফে আমানুল্লা। খুনের পরে ১৫ মে সে বাংলাদেশে ফিরে যায়।
পরে এ রাজ্যের তদন্তকারীদের তথ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশ পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। তখনই বোঝা যায় আমানুল্লা এবং শিমুল আদতে
এক লোক।

কলকাতায় আজিমকে খুনের প্রক্রিয়ায় নিখুঁত ছক কষে বিভিন্ন কুশীলবকে দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছিল। তবে সাংসদকে ফাঁদে ফেলার আগেই শাহিন কলকাতা থেকে চলে যায়। তদন্তকারীরা জানান, শিমুল ওরফে আমানুল্লা খুনের আগেই দেহ টুকরো করার জন্য কসাই নিয়োগের দায়িত্ব দেয় সিয়াম নামে আর এক সহযোগীকে। সিয়াম ফেব্রুয়ারি থেকেই শাহিনের রাজারহাটের ফ্ল্যাটে রয়েছে। সে অভিজ্ঞ কসাই জিহাদ হাওলাদারকে মুম্বই থেকে সড়ক পথে কলকাতায় নিয়ে এসে নিউ টাউনের ফ্ল্যাটে তোলে। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, দেহ টুকরো করার জন্য চপার এবং অন্য সামগ্রী কেনে শিমুল। ট্রলি ব্যাগও সে আগেই কিনে রাখে। কিন্তু সেগুলি কোথায় ফেলা হয়েছে, তা নিয়ে শনিবারেও পুলিশকে ধাঁধায় ফেলেছে বনগাঁ থেকে রাজ্য পুলিশের হাতে ধরা পড়া এই জিহাদ। তার ফলে সাংসদ খুনে কিছু জবানবন্দি ছাড়া আদালতগ্রাহ্য কোনও পাথুরে প্রমাণ এখনও সিআইডির হাতে নেই।

এক তদন্তকারী জানান, ধৃতেরা কলকাতার ‘সিম’ ব্যবহার করেছিল। ফয়জল এখনও গ্রেফতার না-হলেও তাঁর মোবাইলের ‘কল ডিটেলেস’ দেখে তার গতিবিধি জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা। একটি ক্যাব ভাড়া করে ঘটনার পরে অভিযুক্তেরা বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছিল। ক্যাবটি চিহ্নিত করার কাজ করছেন তদন্তকারীরা। নিউ টাউনের যে আবাসনে ওই সাংসদ খুন হয়েছেন, তার মালিক এবং কেয়ারটেকারের সঙ্গে ইতিমধ্যে কথা বলেছেন গোয়েন্দারা। ৩০ এপ্রিল থেকে অভিযুক্তদের ব্যবহার করা গাড়ির চালকদের বয়ানও নথিভুক্ত করা হয়েছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bangladesh MP Death CID Investigation police investigation Kolkata dhaka Bangladesh dead body

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy