Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Recruitment Scam

‘এত চাকরি হচ্ছে, কিন্তু টাকা কোথায়?’ অর্থের ‘ভাগ বাঁটোয়ারা’কে কেন্দ্র করেই কি বিবাদ পার্থ-মানিকের?

ইডি সূত্রে দাবি, এ ভাবে সতর্ক করার পরেও বড় অঙ্কের টাকার হিসাব না পেয়ে চটে গিয়েছিলেন পার্থ। তার পরে এক বার বাড়িতে, এক বার বিধানসভায় নিজের দফতরে ডেকে নাকি মানিককে ধমক দেন পার্থ।

পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং মানিক ভট্টাচার্য।

পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং মানিক ভট্টাচার্য। ফাইল চিত্র।

শুভাশিস ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০২২ ০৮:৫৮
Share: Save:

বোঝাপড়া মন্দ ছিল না। কিন্তু ইডি-সূত্রে দাবি, ‘টাকার ভাগ-বাঁটোয়ারা’কে কেন্দ্র করে অবিশ্বাসের পলিও নাকি জমা হয়েছিল দু’জনের সম্পর্কে। এতটাই যে, এক সময়ে মানিক ভট্টাচার্যকে ডেকে রীতিমতো ধমকেছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটি সূত্রে দাবি, তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ সে দিন তখনকার প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মানিককে সরাসরি প্রশ্ন করেছিলেন, এত চাকরি হচ্ছে। কিন্তু টাকা কোথায়?

সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, পার্থ হেফাজতে থাকাকালীন ২৮ জুলাই দু’জনকে মুখোমুখি বসিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। সেখানে টাকার ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে ওই ঝগড়ার প্রসঙ্গ তোলা হলে, বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছেন দু’জনেই। তাঁদের সামনে সেই সংক্রান্ত তথ্য-প্রমাণ তুলে ধরার পরেও মুখ খোলেননি। কিন্তু আলাদা-আলাদা ভাবে জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে বিষয়টি অস্বীকার করা হয়নি বলেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটি সূত্রে দাবি।

শুধু জিজ্ঞাসাবাদ নয়, পার্থ ও মানিকের মোবাইলের তথ্য ঘেঁটে, এমনকি ফোন থেকে মুছে ফেলা তথ্য পুনরুদ্ধার করে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ইডি সূত্রে দাবি, মানিক ও পার্থের মধ্যে বিশ্বাসে চিড় ধরেছিল। তা নিয়ে বাদানুবাদও হয়েছে। অভিযোগ, গণ্ডগোল বেঁধেছিল মূলত টাকার ভাগ বাঁটোয়ারা নিয়ে। এক তদন্তকারী অফিসারের দাবি, এক সময়ে পার্থের মনে হয়েছিল, তাঁকে না জানিয়েই, টাকা সরাচ্ছেন মানিক। অন্য ‘সোর্স’ থেকে সে রকম কিছু তথ্যও নাকি পার্থের কাছে আসতে শুরু করেছিল। এমনকি প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর মোবাইলে এসেছিল মেসেজ: ‘মানিক যা তা ভাবে টাকা তুলছে’। ইডি সূত্রের খবর, পার্থ ওই এসএমএস মানিককে ফরোয়ার্ড পর্যন্ত করে দিয়েছিলেন।

ইডি সূত্রে দাবি, এ ভাবে সতর্ক করার পরেও বড় অঙ্কের টাকার হিসাব না পেয়ে চটে গিয়েছিলেন পার্থ। তার পরে এক বার বাড়িতে, এক বার বিধানসভায় নিজের দফতরে ডেকে নাকি মানিককে ধমক দেন পার্থ।

তদন্তে উঠে আসা নানা সূত্রের বয়ান এবং তথ্যের ভিত্তিতে এক তদন্তকারী অফিসারের ব্যাখ্যা, ‘‘পার্থের হিসাবের বাইরে টাকা

তুলছিলেন মানিক। শিক্ষামন্ত্রীর নজর এড়িয়ে নিজস্ব মিডলম্যান মারফত মানিক চাকরি বিক্রি করছেন জানতে পেরেই কৌশলে ওই মেসেজ ফরোয়ার্ড করেছিলেন পার্থ।’’

সেই সময়ে প্রাথমিকে বেআইনি নিয়োগের সমস্ত প্রক্রিয়াই মানিকের হাতে ছিল বলে এখনও পর্যন্ত ইডি-সূত্রে দাবি। তদন্তকারী সংস্থাটি সূত্রে খবর, সমস্ত জায়গা থেকে সুপারিশের তালিকা এসে তাঁর কাছে জমা হত। গোড়ায় মানিক ও পার্থের বোঝাপড়াও মন্দ ছিল না। কিন্তু চাকরি বিক্রির টাকার ভাগ নিয়ে দু’জনের সম্পর্কে চিড় ধরে। যদিও তার পরেও দু’জন একসঙ্গে ‘কাজ’ করে গিয়েছেন বলে তদন্তকারী সংস্থাটির দাবি।

ইডি-র এক পদস্থ কর্তার কথায়, ‘‘পার্থ ও মানিকের ঝগড়া তদন্তের অঙ্গ নয়। কিন্তু তার সূত্র ধরে মানিক কী ভাবে চাকরি বিক্রি করেছিলেন, তার টাকা কাদের মারফত কোথায় এবং কী ভাবে জমা পড়েছিল, আমরা শুধু সেটা জানার চেষ্টা করছি।’’ উল্লেখ্য, পার্থ ২০১৪ থেকে গত বছর পর্যন্ত শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। আর মানিক ২০১২ থেকে কয়েক মাস আগে পর্যন্তও প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি ছিলেন।

তদন্তকারীদের সূত্রে অভিযোগ, মানিকের জামানায় প্রায় ৭৫ হাজার প্রার্থীর প্রাথমিকে চাকরি হয়েছিল। যার এক বিপুল অংশ টাকার বিনিময়ে। এক তদন্তকারী অফিসারের দাবি, ‘‘সাধারণত ৭ থেকে ১০ লক্ষ টাকায় প্রাথমিকে অযোগ্য প্রার্থীদের চাকরি দেওয়া হত বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে। কিন্তু মানিক তাঁর বিভিন্ন মিডলম্যান মারফত আরও বেশি টাকাতেও কিছু ক্ষেত্রে চাকরি বিক্রি করতেন বলে তদন্তে উঠে এসেছে। ওই বাড়তি টাকা বিভিন্ন বেসরকারি বিএড কলেজ এবং স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তিতে ঢালা হয়েছে বলে নির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ হাতে এসেছে।’’ কিন্তু এই ‘বাড়তি’ টাকার বখরা নিয়েই পার্থ এবং মানিকের মধ্যে ঝামেলার সূত্রপাত বলে ইডি-সূত্রে দাবি।

ইডি সূত্রের খবর, মানিকের ছেলে সৌভিকের নিজস্ব সংস্থার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ২.৬৪ কোটি টাকা পাওয়া গিয়েছে। তা ছাড়া, মানিকের সঙ্গে তাঁর পারিবারের সদস্যদের যৌথ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেও কয়েক কোটি টাকার হদিশ মিলেছে। নামে-বেনামে, এ রাজ্য, অন্য রাজ্যেও মানিকের সম্পত্তির খোঁজ পাওয়া গিয়েছে বলে তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে অভিযোগ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE