রাজ্য রাজনীতির অঙ্ক যা-ই হোক, দার্জিলিং সামলাতে সাংবিধানিক কর্তব্য মেনে রাজ্যকে সব রকম সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিলেন প্রধানমন্ত্রী। আপাতত কোনও কেন্দ্রীয় দলও যে রাজ্যে আসছে না, তা-ও স্পষ্ট করে দেওয়া হল।
একই দিনে জিটিএ-র সচিব স্তরে রদবদল ঘটিয়ে নতুন করে প্রশাসনিক চাপ বাড়াল নবান্ন।
এই চাপের পাহাড়ের মধ্যে নতুন করে হুমকির পথই বেছে নিলেন বিমল গুরুঙ্গ। এ দিন মোর্চা সভাপতি জানিয়ে দেন, বৃহস্পতিবার পাহাড়ে যুব ও নারী মোর্চার পক্ষ থেকে মিছিল হবে। পুলিশ তা জোর করে আটকালে পাহাড়ে লাগাতার বন্ধ হতে পারে। তখন তাঁরা জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিও বন্ধ করে দিতে পারেন।
একে তো মোর্চার ডাকা সরকারি অফিস বন্ধেও হাজিরা অব্যাহত। অনেকে হাজিরা খাতায় সই করে বেরিয়ে গেলেও প্রশাসনের কেউ কেউ বলছেন, আগে তো এ সব ভাবাই যেত না। তার উপরে এ দিন মালিধুরায় যুব মোর্চার বৈঠকের সময়ে সেখানে পুলিশ ও আধা সেনার টহল। এর পরেই হুমকি দেন গুরুঙ্গ।
মঙ্গলবার রোশন গিরি সুর কিছুটা নরম করেছিলেন। কিন্তু ২৪ ঘণ্টায় ফের ভোলবদল। মোর্চার অন্দরের খবর, দলের কট্টরপন্থীরা, বিশেষ করে যুবরা চাইছেন, সুর চড়ানো হোক। দিল্লির কাছ থেকে মুখরক্ষার বার্তা আশা করছেন গুরুঙ্গ। কিন্তু তা তো হয়ইনি। উল্টে রাজ্যকে সাহায্যের কথাই বলছে দিল্লি। মোর্চা নেতারা বলছেন, এই অবস্থায় দলে আধিপত্য বজায় রাখতে গুরুঙ্গের পক্ষে সুর চড়ানো ছাড়া উপায় ছিল না। এর আগে তিনি বলেছিলেন, সরকারি দফতরে হাজিরা হলেও সেটা মূলত প্রশাসনের চাপে, চাকরি বাঁচাতে। এ দিন গুরুঙ্গ সবাইকে হাজিরা দিতে বারণ করেন। বলেন, ‘‘চাকরি গেলে চিন্তা নেই। গোর্খাল্যান্ড হলে চাকরি ফেরত পাবেনই। তাই এখন জাতির কথা ভাবুন।’’ প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি হাজিরার কাঁটা বেশি খোঁচাচ্ছে তাঁকে?
মোর্চাকে আরও আশাহত করেছে দিল্লি। রাজনৈতিক তফাত মাথায় না রেখে রাজ্যকে সাহায্য করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এ ক্ষেত্রে দার্জিলিং ও মধ্যপ্রদেশের মন্দসৌরের মধ্যে বিভেদ করতেও মানা করা হয়েছে। রাজ্যে ১০ কোম্পানি আধা সেনা পাঠিয়েছে কেন্দ্র। রাজ্য চাইলে আরও পাঠানো হবে। এ দিন মন্ত্রকের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন রাজনাথ। প্রয়োজনে নিয়মিত পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে নির্দেশ দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব রাজীব মহর্ষিকে। তাঁর সাফ কথা, ‘‘রাজনীতিতে যা-ই হোক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার প্রশ্নে আপস নয়।’’
টহল: বুধবার দার্জিলিঙে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক
তবে রাজ্য বিজেপি থেকেও আশার বার্তা নেই মোর্চার জন্য। দিলীপ ঘোষ এ দিন পাহাড়ে গোলমাল নিয়ে দায় রাজ্যের ঘাড়ে ঠেলে দিয়েও বলেন, ‘‘মোর্চার সঙ্গে আমাদের কোনও সম্পর্ক নেই। শুধু রাজনৈতিক সমঝোতা হয়েছিল।’’
এখন একমাত্র আশা সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া। মোর্চার এক নেতা জানান, সাংসদ শুক্রবারের মধ্যে পাহাড়ে আসবেন। তখন কেন্দ্রের সঙ্গে একটা যোগসূত্র তৈরির সম্ভাবনা। মুখরক্ষার সূত্র বের করার চেষ্টাও হবে।
তার আগে হুমকি, হুঁশিয়ারিই গুরুঙ্গের একমাত্র খড়কুটো।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy