Advertisement
E-Paper

ভিড়ের দাবি ‘খুচরো চাই’, অশান্তি বহু পেট্রোল পাম্পে

রাতে ঘোষণার সময়েও মাথায় আসেনি ব্যাপারটা। বুধবার সকালে পেট্রোল পাম্প খুলতেই মাথায় হাত পড়ল মালিকদের। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ৫০০ ও ১০০ টাকার নোট বাতিলের কথা জানিয়ে দেওয়ার পরে বেশি রাতের দিকে তেল কিনতে লাইন পড়েছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৬ ০১:২০
ঘোষণা করে বাতিল নোট অস্বীকার। বুধবার, রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ে। — রণজিৎ নন্দী

ঘোষণা করে বাতিল নোট অস্বীকার। বুধবার, রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ে। — রণজিৎ নন্দী

রাতে ঘোষণার সময়েও মাথায় আসেনি ব্যাপারটা। বুধবার সকালে পেট্রোল পাম্প খুলতেই মাথায় হাত পড়ল মালিকদের।

মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ৫০০ ও ১০০ টাকার নোট বাতিলের কথা জানিয়ে দেওয়ার পরে বেশি রাতের দিকে তেল কিনতে লাইন পড়েছিল। অনেককেই ৫০০ টাকার নোট ভাঙিয়ে পেট্রোল দিয়েছিলেন মালিকেরা। বিভিন্ন মহলের বক্তব্য, এতে যেমন পাম্প মালিকদের বিক্রি বেড়েছে, তেমনই কিছু মানুষও তেল কিনে বাড়িতে থাকা ৫০০, ১০০০ টাকার নোট ‘সরকারের ঘরে’ পাঠিয়ে দিতে পেরেছেন।

কিন্তু গোলমালটা বাধল সকাল হতেই। স্কুটার থেকে মোটরবাইক, বাসের চালক থেকে চার চাকার গাড়ি— সকলের কাছেই ৫০০ বা ১০০০ টাকার নোট। বড় গাড়িগুলো মোটা টাকার তেল ভরলেও, ছোট গাড়ির অধিকাংশই তখন ১৫০ বা ২০০ টাকার তেল ভরে ৫০০ বা হাজার টাকার নোট ভাঙিয়ে দিতে বলছে। কিন্তু অত ১০০, ৫০ টাকার নোট কোথায়!

ব্যস! বিভিন্ন জায়গায় অশান্তি বেধে যায় এর পরে। শেষ পর্যন্ত বহু পাম্পেই ৫০০, ১০০০ টাকার নোট নিয়ে গেলে পুরো টাকারই পেট্রোল বা ডিজেল কিনে গাড়ি মালিকদের বাড়ি ফিরতে হয়েছে। কোথাও আবার সময়ের আগেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে পাম্প।

শুধু কলকাতা নয়, হাওড়াতেও ছবিটা ছিল একই রকম। সেখানেও ঝামেলা বাধার জেরে বেলা গড়াতেই বহু পাম্প বন্ধ করে দিতে হয়। ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের কয়েকটি পাম্পে দেখা যায়, ৫০০ ও ১০০০ টাকার তেল নিতে বাধ্য করা হচ্ছে। মোটরবাইকের ক্ষেত্রে ৫০০ টাকার তেল নেওয়ার মতো ট্যাঙ্ক নয়। ফলে অনেকে জেরিক্যানে তেল ভরে নিয়ে যান।

কার্যত এ দিন সকাল থেকেই বাতিল নোট নিয়ে নাজেহাল হয়েছেন সাধারণ মানুষ। অধিকাংশ বাজারেই জিনিস কিনতে গেলে ৫০০ টাকার নোট নিতে অস্বীকার করেন দোকানদাররা। ১০০ টাকার নোট পেতে টাকা ভাঙানোর প্রয়োজন ছিল অনেকেরই। সিএসটিসি ও এসবিএসটিসি ডিপোয় দূরপাল্লার বাস যাত্রীদের থেকে ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট নিতে অস্বীকার করায় গোলমাল বাধে। স্থানীয় ডিপো কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়।

এই পরিস্থিতিতে পেট্রোল পাম্পে বাতিল নোট নেওয়া হচ্ছে, এই খবর ছড়াতেই সকাল থেকে ভিড় জমতে শুরু করে পাম্পগুলিতে। আর সমস্যার শুরুটাও সেখানেই। কলকাতার উত্তর থেকে দক্ষিণে অধিকাংশ ক্রেতাদের অভিযোগ, পাম্পে গেলে পুরো টাকার তেল কিনতে বাধ্য করা হয়েছে তাঁদের। যদিও তেল মন্ত্রক স্পষ্ট জানিয়েছে— যাঁর যতটুকু প্রয়োজন, তিনি ততটুকুই তেল কিনতে পারবেন।

সমস্যার কথা মানছে পাম্প মালিকদের সংগঠনও। তবে তাদের যুক্তি, ৫০০ ও ১০০০ টাকার ভাঙানি ফুরিয়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়েই অনেকে ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারণ বহু ক্রেতাই অল্প তেল নিয়ে বড় অঙ্কের টাকার নোট দিচ্ছিলেন। কিন্তু সকলকে দেওয়ার মতো খুচরো টাকা ছিল না পাম্পগুলির কাছে। সে কারণেই পুরো টাকার তেল কিনতে বলা হয় বলে দাবি করেছেন বহু পেট্রোল পাম্প মালিক। তবে আজ, বৃহস্পতিবার মধ্যরাত পর্যন্ত পাম্পগুলিতে পুরনো নোট দিয়ে লেনদেনে সায় দিয়েছে কেন্দ্র। ফলে সমস্যা চলবে বলেই ক্রেতা ও মালিক সংগঠন উভয় পক্ষই মানছেন।

কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের নির্দেশ উদ্ধৃত করে এ দিন ইন্ডিয়ান অয়েলও এক প্রেস বিবৃতিতে জানিয়েছে, পেট্রোপণ্যের কোনও ঘাটতি নেই। ফলে ক্রেতাদের আতঙ্কিত হওয়ারও কিছু নেই। ক্রেতারা যতটুকু তেলের প্রয়োজন, ততটুকুই কিনতে পারবেন। পাশাপাশি কোথাও কোথাও বাতিল নোট নেওয়া হচ্ছে না বলেও অভিযোগ পাওয়ায় মন্ত্রক নির্দেশ জারি করেছে, আজ মধ্যরাত পর্যন্ত পাম্প ও ডিলারদের ৫০০, ১০০০ টাকার নোট নিতে হবে।

ওয়েস্ট বেঙ্গল পেট্রোলিয়াম ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তুষার সেনেরও দাবি, পরিস্থিতির চাপেই পাম্প মালিকেরা পুরো টাকার তেল বিক্রির পথে হাঁটতে বাধ্য হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা সরকারি নির্দেশ মেনে চলার চেষ্টা করেছি। কিন্তু মঙ্গলবার রাত থেকেই অনেক পাম্পে বহু ক্রেতা পুরনো নোট ভাঙিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। স্কুটার বা মোটরবাইক চালকেরা সাধারণত ৫০-১০০ টাকার তেল কিনে খুচরো দিয়ে থাকেন। কিন্তু তাঁরাও ৫০০ বা ১০০০ টাকার নোট নিয়ে অল্প তেল কিনছেন। ফলে সমস্যা তৈরি হচ্ছে।’’ খুচরো না থাকায় অনেক পাম্পে ক্রেতাদের একাংশ হামলা চালানোর জেরেই সেগুলি সাময়িক বন্ধ করে দিতে হয় বলে পাল্টা অভিযোগ করেছেন তুষারবাবু।

এই অবস্থায় পাম্পগুলি খোলা রাখা যাবে কি না, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে আজ, বৃহস্পতিবার জরুরি বৈঠকে বসছে পেট্রোলিয়াম ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন। রাজ্য সরকারের সঙ্গেও আলোচনায় বসবে তারা। খুচরো নিয়ে যে সমস্যা তৈরি হয়েছে, তাতে পাম্প খুলে রাখা নিয়ে সংশয়ে বহু মালিকই।

এই সমস্যার মধ্যেই তেল সংস্থাগুলি নির্দেশ দিয়েছে— যে ক্রেতা ৫০০ বা ১০০০ টাকার নোট দেবেন, তাঁদের গাড়ির নম্বর ও টাকার অঙ্ক আলাদা করে নথিভুক্ত করতে হবে। তুষারবাবু বলেন, ‘‘এই গোলমালের মধ্যে এ সব নিয়ম কী করে মানা হবে, তা নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছে।’’ ইন্ডিয়ান অয়েলের এক কর্তার দাবি, তাঁরা এই নির্দেশ পেট্রোলিয়াম মন্ত্রক থেকে পেয়েছেন। তেল বিক্রির টাকাই যে পাম্পগুলি পেয়েছে, তার প্রমাণ রাখতেই এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে দিনভরের পরিস্থিতির কথা শুনে ওই সংস্থার আর এক কর্তা জানান, জেরিক্যানে তেল দেওয়ার কোনও নিয়ম নেই। যে পাম্পে খুচরোর কারণ দেখিয়ে এ রকম করা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Petrol pump Money
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy