Advertisement
০৬ মে ২০২৪

মানস গেলে শাপমুক্তি, বলছে কংগ্রেস

সবংয়ের কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়ার তৃণমূলে যোগদান এখন সময়ের অপেক্ষা। তার আগে রবিবার মানসবাবুর জেলায় এসে তীব্র সমালোচনায় তাঁকে বিদ্ধ করলেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা তথা বিধানসভার বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান। বিশ্বাসঘাতক, কুলাঙ্গার থেকে লোভী, কোনও শব্দই বাদ দিলেন না মান্নান।

মানস প্রশ্নে নিরুত্তাপ সবং। রবিবার চেনা ছন্দে ব্লক কংগ্রেস কার্যালয় ।

মানস প্রশ্নে নিরুত্তাপ সবং। রবিবার চেনা ছন্দে ব্লক কংগ্রেস কার্যালয় ।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:৩৩
Share: Save:

সবংয়ের কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়ার তৃণমূলে যোগদান এখন সময়ের অপেক্ষা। তার আগে রবিবার মানসবাবুর জেলায় এসে তীব্র সমালোচনায় তাঁকে বিদ্ধ করলেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা তথা বিধানসভার বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান। বিশ্বাসঘাতক, কুলাঙ্গার থেকে লোভী, কোনও শব্দই বাদ দিলেন না মান্নান।

এ দিন খড়্গপুরের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের চণ্ডীপুরে কংগ্রেসের একটি কার্যালয়ের উদ্বোধনে এসেছিলেন মান্নান। খড়্গপুরে দলে ভাঙনের পরেও নিজেদের শক্তি বোঝাতে কংগ্রেস সভারও আয়োজন করেছিল। লোক হয়েছিল ভালই। সেই সভাতেই রেলশহরের ‘চাচা’ প্রাক্তন বিধায়ক জ্ঞান সিংহ সোহন পালের আত্মত্যাগের কথা তুলে ধরেন আব্দুল মান্নান। চাচাও সভায় ছিলেন। তারপরই মানসের নাম না করে মান্নানের তোপ, “এই মেদিনীপুর জেলায় চাচার মতো লোক পিএসি চেয়ারম্যানের পদ প্রত্যাখান করে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকেন। আবার আমাদের দলে এমন লোক আছেন যিনি ওই পদ পাওয়ার জন্য কংগ্রেসের ক্ষতি করার চেষ্টা করেন। এটা লজ্জার।’’ দলত্যাগীদের উদ্দেশে প্রবীণ এই কংগ্রেস বিধায়কের কটাক্ষ, “রাজনীতির মূল্যবোধ মানুষ ভুলে যেতে বসেছে। স্বাধীনতা আন্দোলনের পীঠস্থান মেদিনীপুরেই কিছু কুলাঙ্গার জন্মেছে, যাদের জন্য মেদিনীপুরবাসীর মাথা হেঁট হয়ে যায়।”

দলত্যাগ প্রসঙ্গে মানসকে বিঁধেছেন সিপিএম নেতা রবীন দেবও। এ দিন তমলুকে তিনি বলেন, ‘‘বিধানসভা ভোটে জেতার আগে বামফ্রন্টকে দরকার ছিল। তাই প্রকাশ্য সভায় সূর্যকান্ত মিশ্রকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। এখন উনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসা করছেন। ব্যক্তিগত স্বার্থেই এ সব করছেন।’’

খড়্গপুরের চণ্ডীপুরে দলীয় কার্যালয় উদ্বোধনে আব্দুল মান্নান ও জ্ঞানসিংহ সোহন পাল

এখন প্রশ্ন মানসবাবু দল ছাড়লে কি পশ্চিম মেদিনীপুরের আরও এক ঝাঁক কংগ্রেস নেতা-কর্মীও দলবদল করবেন! কংগ্রেস সূত্রে খবর, মানসবাবু নিজে অনেককে ফোন করে দল ছাড়ার কথা বলছেন। তবে সে কথা স্বীকার করছেন না কেউই। একই সঙ্গে বলছেন, কংগ্রেস ছেড়ে যাওয়ার প্রশ্ন নেই। জেলা কংগ্রেসের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক তীর্থঙ্কর ভকতের বক্তব্য, ‘‘আমি মানস ভুঁইয়ার অন্ধ ভক্ত। তবু বলতে পারি, উনি দলবদল করলেও আমি কংগ্রেস ছেড়ে কোথাও যাব না।’’ আর এক সাধারণ সম্পাদক কুণাল বন্দ্যোপাধ্যায়, মহিলা কংগ্রেসের নেত্রী, ছাত্র পরিষদের রাজ্য সহ-সভাপতি সাইফুল ইসলামেরাও বলছেন, ‘‘কংগ্রেসে আছি, কংগ্রেসেই থাকব।’’

তবু সংশয় থেকেই যাচ্ছে। কারণ, মানসবাবুর মতো প্রভাবশালী নেতার ডাক কতজন উপেক্ষা করতে পারবেন, সেই আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। যদিও জেলা কংগ্রেসের সহ-সভাপতি শম্ভুনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এমনটা হচ্ছে আমরা মনে করি না। কংগ্রেসেই তো বেশ আছি।’’ আর মানসবাবুর দলবদলের জল্পনা প্রসঙ্গে জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অনিল শিকারিয়ার খোঁচা, “উনি চলে গেলে শাপমোচন হবে!”

এই জেলায় বরাবর কংগ্রেসের গড় ছিল খড়্গপুর ও সবং। এ বার সেখানেই ভাঙন। খড়্গপুর পুরসভা, বিধানসভা আসন আগেই হাতছাড়া হয়েছিল। গত ২১ জুলাই প্রাক্তন পুরপ্রধান রবিশঙ্কর পাণ্ডে-সহ এক ঝাঁক কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরে রেলশহরে কোণঠাসা হয়েছে কংগ্রেস। ক’দিন আগে জেলা কংগ্রেস সভাপতি বিকাশ ভুঁইয়া-সহ সবংয়ের একদল নেতা তৃণমূলে যাওয়ার পরে সেখানেও দুর্বল হয়েছে হাত। এ বার মানসবাবু দলবদল করলে সবংয়েও কংগ্রেস তলানিতে এসে ঠেকবে। তবে সবং ব্লক কংগ্রেস কার্যালয়ের ছবিটা দেখলে তা বোঝার জো নেই! রবিবার দুপুরে সবং ব্লক কংগ্রেস কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেল, কর্মীদের ভালই ভিড় রয়েছে। তাঁরা খসড়া ভোটার তালিকা খতিয়ে দেখতে ব্যস্ত। কে কংগ্রেস ছাড়ছেন, কে কংগ্রেস ছাড়তে পারেন, সেই নিয়ে সামান্য চর্চাও নেই! মানস ভুঁইয়া দলবদল করলে সবংয়ে আর কংগ্রেস থাকবে? চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন সুধাংশুশেখর দাস অধিকারী, দিলীপ দাসের মতো কংগ্রেস কর্মীরা। দিলীপবাবুদের জবাব, “না থাকার কী আছে? সবংয়ে কংগ্রেস ছিল, আছে, থাকবে। কেউ যদি দল ছাড়েন, সেটা তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার!”

দেওয়ালের ফ্লেক্সে এখনও মানস ভুঁইয়ার ছবি। ছবিটা কি এরপরও থাকবে? সুধাংশুবাবুর জবাব, “উনি তো এখনও কংগ্রেসের বিধায়ক। তাছাড়া কী হলে কী হবে, সে সব এখনও ভাবা হয়নি!’’ সবংয়ের কংগ্রেস নেতা চিরঞ্জীব ভৌমিক অবশ্য মানছেন, “এত দিনের বিধায়ক। সাময়িক ক্ষতি তো হবেই। তবে বড় কোনও ক্ষতি হবে না! নতুন করে দল গোছানোও শুরু হয়েছে।’’

(তথ্য: সুমন ঘোষ, বরুণ দে, দেবমাল্য বাগচী)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

MLA congress TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE