Advertisement
০৪ মে ২০২৪

সঙ্কটে চা নিলাম কেন্দ্র, রাজ্যের ভূমিকায় ক্ষোভ

কর্মীদের বেতন নিয়ে মাসে মাসে অনিশ্চয়তা। বকেয়া বিদ্যুৎ ও টেলিফোনের বিল। ল্যাপটপ, জেনারেটর বিকল। কিন্তু মেরামতির টাকা নেই। নিলামের জন্য যোগান নেই প্রয়োজনীয় চা পাতার। সবকিছু মিলিয়ে রীতিমত বেহাল দশা জলপাইগুড়ি চা নিলাম কেন্দ্রের। আগামী ১৮ মে প্রতিষ্ঠানের ‘ভবিষ্যত’ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে বৈঠকে বসছেন এই সংস্থার পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত কর্তাব্যক্তিরা।

বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৫ ০৪:৩২
Share: Save:

কর্মীদের বেতন নিয়ে মাসে মাসে অনিশ্চয়তা। বকেয়া বিদ্যুৎ ও টেলিফোনের বিল। ল্যাপটপ, জেনারেটর বিকল। কিন্তু মেরামতির টাকা নেই। নিলামের জন্য যোগান নেই প্রয়োজনীয় চা পাতার। সবকিছু মিলিয়ে রীতিমত বেহাল দশা জলপাইগুড়ি চা নিলাম কেন্দ্রের। আগামী ১৮ মে প্রতিষ্ঠানের ‘ভবিষ্যত’ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে বৈঠকে বসছেন এই সংস্থার পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত কর্তাব্যক্তিরা। এর সঙ্গে জড়িত অনেকেরই আশঙ্কা, সেই বৈঠকেই নিলাম কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়ার মতো সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে।

এই পরিস্থিতিকে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে প্রশাসনের বিরুদ্ধে। গত মঙ্গলবার উত্তরকন্যায় শুধুমাত্র জলপাইগুড়ি জেলা নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠক হলেও, কেন নিলাম কেন্দ্রের কথা মুখ্যমন্ত্রীর কানে তোলা হল না সেই প্রশ্ন তুলেছেন বিভিন্ন চা বাণিজ্য সংস্থা।

গত মঙ্গলবার উত্তরকন্যায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জলপাইগুড়ি জেলার আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। সেই বৈঠকে শহরের নিকাশি ব্যবস্থা, পানীয় জল, স্পোর্টস কমপ্লেক্স নিয়ে আলোচনা হলেও চা নিলাম কেন্দ্রের সমস্যা গুরুত্ব না পাওয়ায় হতাশ চা বণিক মহল। কেন নিলাম কেন্দ্রের প্রসঙ্গ বৈঠকে আলোচিত হল না, সে নিয়ে প্রশাসনের কর্তাদের কেউ মুখ খুলতে চাননি। জেলাশাসক পৃথা সরকার বলেন, “বিক্রয় কর ছাড়ের জন্য অর্থ দফতরে দু’বার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সেটা এখনও হয়নি। আবার খোঁজ নিয়ে দেখব।”

যদিও, আশ্বাসে আর ভরসা রাখতে রাজি নন নিলাম কেন্দ্রের পরিচালন সমিতির অনেকেই। কেন্দ্রের ভাইস চেয়ারম্যান পুরজিৎ বক্সিগুপ্ত বলেন, “অক্সিজেনের ব্যবস্থা না হলে আইসিইউ-তে থাকা নিলাম কেন্দ্রটিকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব নয়। অনেক চেষ্টা করে কয়েক বছর চালানো হয়েছে। কিন্তু চিরকাল এ ভাবে চলা সম্ভব নয়। কর্মীদের বেতন দেওয়া যাচ্ছে না। নিলামের কাজ বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া সামনে কোন পথ খোলা নেই।”

পরিচালনা সংস্থার সচিব নিরঞ্জনকুমার বসু বলেন, “বিক্রয় কর ছাড়ের সুবিধার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে কয়েক দফায় চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু কিছুই তো হচ্ছে না। বাড়তি সুবিধা ছাড়া এই কেন্দ্র চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব। আগামী ১৮ মে সভা ডাকা হয়েছে। সেখানেই ঠিক হবে নিলাম কেন্দ্রটি চালানো হবে কিনা।”

২০০৫ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি জলপাইগুড়ি শহরের বুক চিরে বয়ে যাওয়া করলা নদীর ধারে চা নিলাম কেন্দ্রটি উদ্বোধনের পর থেকেই সঙ্কট ছায়া ফেলেছে। নিলাম কেন্দ্রের মূল উপাদান, চা পাতার জোগান ক্রমশ কমেছে। তার সঙ্গেই কমেছে ক্রেতা, বিক্রেতা এবং ব্রোকারদের সংখ্যা। শুরুতে ২৬৮ জন ক্রেতা, ৬৮ জন বিক্রেতা এবং ৬ টি ব্রোকার সংস্থা নিলাম কেন্দ্রের সদস্য হলেও গত বছর তাঁদের মধ্যে মাত্র ৫৯ জন সদস্যপদ নবীকরণ করেন। কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন চা বণিক সংস্থার দাবি, শিলিগুড়ি, গুয়াহাটি সহ ভারতের প্রতিটি চা নিলাম কেন্দ্র তৈরির পরে চালু করার জন্য বিক্রয় কর ছাড়ের বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হলেও, জলপাইগুড়ির কেন্দ্র সে সুবিধে পায়নি। নর্থ বেঙ্গল টি প্রডিউসার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি প্রবীর শীল বলেন, “কয়েক বছরের জন্য কর ছাড়ের সুযোগ না দেওয়া হলে জলপাইগুড়ি চা নিলাম কেন্দ্র চালু রাখা সম্ভব হবে না। যোগাযোগ ও পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নতিও জরুরি।”

চায়ের জোগান কমে যাওয়ার কারণে এর আগে ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়। চা পাতার জোগান না কমলেও, বেড়েছে দায়। তিনজন কর্মী ছিলেন নিলাম কেন্দ্রে। বেতনের অনিশ্চয়তায় দু’জন কাজ ছেড়েছেন। তিনটি বিকল ল্যাপটপ, একটি কম্পিউটার, জেনারেটার মেরামত করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানা গিয়েছে। প্রায় দেড় লক্ষ টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পড়েছে। মেটানো হয়নি টেলিফোন বিলও। সংস্থার ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, “এভাবে চলা সম্ভব নয়। তাই কঠিন সিদ্ধান্তের কথা ভাবতে হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE