Advertisement
০৬ মে ২০২৪
জয়েন্টে জটমুক্তির আশা আজ

পরীক্ষার্থীদের পাশে কেন্দ্র, এমসিআই-ও

বিকল্প পথ বন্ধ। অর্থাৎ কেন্দ্রীয় মেডিক্যাল প্রবেশিকার দ্বিতীয় পর্যায়ের পরীক্ষার দরজা অনেকের কাছেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে। এই অবস্থায় চলতি বছরের মতো রাজ্য মেডিক্যাল জয়েন্ট হবে কি না, সেই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য শীর্ষ আদালতের দিকেই তাকিয়ে আছেন রাজ্যের ৮৫ হাজার পরীক্ষার্থী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৬ ০৩:৪৭
Share: Save:

বিকল্প পথ বন্ধ। অর্থাৎ কেন্দ্রীয় মেডিক্যাল প্রবেশিকার দ্বিতীয় পর্যায়ের পরীক্ষার দরজা অনেকের কাছেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে। এই অবস্থায় চলতি বছরের মতো রাজ্য মেডিক্যাল জয়েন্ট হবে কি না, সেই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য শীর্ষ আদালতের দিকেই তাকিয়ে আছেন রাজ্যের ৮৫ হাজার পরীক্ষার্থী।

বেশ কয়েক দিনের বিস্তর টানাপড়েনের পরে সর্বোচ্চ আদালত জানিয়ে দিয়েছে, এ বারের মতো রাজ্য মেডিক্যাল প্রবেশিকাকে জিইয়ে রাখা যায় কি না, সেই ব্যাপারে আজ, সোমবার রায় দেওয়া হবে। পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারাও সে-দিকে তাকিয়ে আছেন।

আশার কথা বলতে কেন্দ্রীয় সরকার এবং মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া (এমসিআই)-এর ছাত্র-বান্ধব অবস্থান। এমসিআই শুরু থেকেই অভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রবেশিকার পক্ষে সওয়াল করে আসছে। তবে এ বারের পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে তারা আদালতে জানিয়ে দিয়েছে, সরকারি মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজগুলিতে ভর্তির জন্য চলতি বছরে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার নিজেদের মতো প্রবেশিকা পরীক্ষা নিলে তাদের আপত্তি নেই।

আদালতে বারবার পড়ুয়াদের ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তার কথা উঠে আসায় কেন্দ্রও এ ব্যাপারে আগের চেয়ে নরম মনোভাব দেখাচ্ছে। কেন্দ্র এর আগে বিভিন্ন সময়ে অভিন্ন প্রবেশিকার কথাই বলেছে। তবে এখন কেন্দ্রের তরফে জানানো হচ্ছে, চলতি বছরে সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলি যদি নিজেদের প্রবেশিকা নিতে চায়, তা হলে পড়ুয়াদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে তারা আপত্তি করবে না। এই পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত পড়ুয়াদের পক্ষে যাবে বলেই সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলের আশা।

রাজ্যে এ বার জয়েন্ট এন্ট্রান্সের নির্ধারিত দিন ১৭ মে। নির্ঘণ্ট মেনে সে-দিনই ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রবেশিকা হবে। কিন্তু ডাক্তারি জয়েন্টের বিষয়টি ঝুলে আছে। কারণ, সব রাজ্যেরই মেডিক্যাল জয়েন্ট বাতিল করে এপ্রিলে একটি রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। রাজ্য এ বার অন্তত ওই প্রবেশিকা নিতে পারবে কি না, অপেক্ষা তার জন্যই। পরীক্ষার্থীদের উৎকণ্ঠা তুঙ্গে উঠেছে। হাতে সময় আর মাত্র সাত দিন। অথচ পরীক্ষাটি আদৌ হবে কি না, সেটা এখনও নিশ্চিত হল না। পরীক্ষার দিন এগিয়ে আসছে, কিন্তু দুশ্চিন্তায় প্রস্তুতিতে মনই দিতে পারছেন না পড়ুয়ারা।

বিভিন্ন রাজ্যের জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষা বহাল থাকবে, নাকি ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি এন্ট্রান্স টেস্ট (এনইইটি বা নিট)-ই মেডিক্যালে ভর্তির একমাত্র পথ, তা নিয়ে টানাপড়েন চলছে বেশ কিছু দিন ধরে। বিভিন্ন রাজ্য যে নিজেদের মতো করে মেডিক্যাল প্রবেশিকা পরীক্ষা নেয়, গত ২৮ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্ট তা বাতিল করে জানিয়ে দিয়েছিল, সারা দেশে শুধু একটিই অভিন্ন মেডিক্যাল প্রবেশিকা পরীক্ষা হবে। এ বার তার প্রথম পর্যায়ের পরীক্ষা ‘অল ইন্ডিয়া প্রি-মেডিক্যাল টেস্ট’ বা এআইপিএমটি হয়ে গিয়েছে ১ মে। পরের পরীক্ষা অর্থাৎ এমইইটি হবে ২৪ জুলাই। চলতি বছরের জন্য রাজ্যের নেওয়া মেডিক্যাল প্রবেশিকা পরীক্ষা যাতে চালু থাকে, তার জন্য সুপ্রিম কোর্টে লিখিত আবেদন জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। অন্য কয়েকটি রাজ্যের তরফে এই আবেদন আগেই জমা পড়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তার সুরাহার কোনও ইঙ্গিত মেলেনি।

এই নিয়ে দেশ জুড়ে ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের মধ্যে জোর প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের অনেক ছাত্রছাত্রী কেন্দ্রীয় প্রবেশিকায় বসলেও তাঁদের আসল লক্ষ্য রাজ্যের মেডিক্যাল জয়েন্ট। কেন্দ্রের পরীক্ষায় বসা শুধু অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের জন্য। তার জন্য প্রস্তুতিতে সে-ভাবে জোরও দেওয়া হয় না। এ বার শীর্ষ আদালত এমন সময়ে রাজ্য মেডিক্যাল জয়েন্ট বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে, যখন আর কেন্দ্রীয় পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতির অবকাশ নেই। সেই জন্য পরীক্ষার্থীদের কথা ভেবে এ বারের মতো রাজ্যের ডাক্তারি জয়েন্ট বহাল রাখার আবেদন জানানো হয়।

এর মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের অন্য একটি নির্দেশে পরীক্ষার্থীরা আরও অসহায় হয়ে পড়েন। রাজ্য মেডিক্যাল জয়েন্ট বাতিল নিয়ে টানাপড়েনের মধ্যে যথেষ্ট প্রস্তুতি ছাড়াই ১ মে অভিন্ন প্রবেশিকার প্রথম পরীক্ষায় বসেছিলেন তাঁরা। আশা করেছিলেন, ২৪ জুলাই কেন্দ্রীয় জয়েন্টের দ্বিতীয় পরীক্ষাতেও বসার সুযোগ পাবেন। আড়াই মাস পরেকার সেই পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতিরও সময় পাওয়া যাবে কিছুটা। কিন্তু পরীক্ষার্থীদের সেই আশায় জল ঢেলে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। শুক্রবার তারা জানিয়ে দিয়েছে, যাঁরা ১ মে-র কেন্দ্রীয় প্রবেশিকায় বসেছেন, তাঁদের ২৪ জুলাইয়ের পরীক্ষায় বসার অনুমতি দেওয়া হবে না। যাঁরা ১ মে পরীক্ষা দেননি, শুধু তাঁরাই ওই পরীক্ষায় বসতে পারবেন। আকাশ ভেঙে পড়ে পরীক্ষার্থীদের মাথায়। রাজ্য মেডিক্যাল জয়েন্ট বাতিলের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের কাছে খড়কুটো বলতে ছিল ওই ২৪ জুলাইয়ের কেন্দ্রীয় প্রবেশিকা। সেটার সুযোগ হাতছাড়া হওয়ায় অনেক পড়ুয়ারই বছর নষ্ট হবে। তাই তাঁরা এখন দিশাহারা।

অন্তত এই বছরের জন্য রাজ্য মেডিক্যাল জয়েন্ট পরীক্ষা নেওয়ার অনুমতি চাইতে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে শীর্ষ আদালতে এই বছর নষ্টের বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে। কেন্দ্রীয় প্রবেশিকা এবং রাজ্যের জয়েন্টের পাঠ্যক্রম, প্রশ্নের ধাঁচ যে আলাদা, জানানো হয়েছে সেটাও। সেই সঙ্গে রাজ্যের পরিক্ষার্থীদের ভাষাগত সমস্যার কথাও বলা হয়েছে। রাজ্যের স্বাস্থ্য (শিক্ষা) দফতরের আধিকারিকদের বক্তব্য, পরীক্ষা বাতিলের মতো কোনও নির্দেশ দিলে অন্তত এক বছর আগে দেওয়া উচিত। কারণ, শুধু পড়ুয়া নয়, পরীক্ষা নিয়ামকদেরও নানা ভাবে প্রস্তুত হতে হয়। এ ভাবে হঠাৎ জানালে সবটাই গোলমাল হয়ে যায় বলে অনুযোগ করছেন তাঁরা।

শীর্ষ আদালতের বিচারপতি অনিল আর দাভের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ আগের দিনই জানিয়ে দিয়েছে, ছাত্রছাত্রীরা যাতে কোনও ভাবে সমস্যায় না-পড়েন, সেই দিকটি তারাও খতিয়ে দেখবে। কারণ, নিট-এ অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীকে ভিন্ন পাঠ্যক্রম ও প্রশ্নপত্রের ধরন নিয়ে ফাঁপরে পড়তে হতে পারে বলে মনে করছে তারাও।

এই অবস্থায় সুপ্রিম কোর্টের রায়ে সুরাহার কোনও একটা পথ বেরোবে, আশায় আশায় আছেন পড়ুয়ারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

JEE Medical Exam Supreme Court Joint Entrance
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE