Advertisement
২১ মে ২০২৪

বর্ধমানে যৌথ অভিযান, ‘সিল’ দুই নার্সিংহোম

ভাগ্যিস, কেঁদেছিল বাচ্চাটা! সেই কান্নায় বর্ধমান শহরের মহাজনটুলিতে শিশু বিক্রির ছক ফাঁস এবং তাতে নার্সিংহোমের নাম জড়াতেই মঙ্গলবার শহর জুড়ে নার্সিংহোমে অভি‌যান চালাল জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতরের যৌথ দল।

নার্সিংহোম অভিযানে জেলাশাসক। — নিজস্ব চিত্র

নার্সিংহোম অভিযানে জেলাশাসক। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:০৭
Share: Save:

ভাগ্যিস, কেঁদেছিল বাচ্চাটা!

সেই কান্নায় বর্ধমান শহরের মহাজনটুলিতে শিশু বিক্রির ছক ফাঁস এবং তাতে নার্সিংহোমের নাম জড়াতেই মঙ্গলবার শহর জুড়ে নার্সিংহোমে অভি‌যান চালাল জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতরের যৌথ দল। নেতৃত্বে জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন এবং জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) প্রণব রায়। এক দিনের অভিযানেই ধরা পড়ল নানা অনিয়ম। নিয়ম ভাঙার অভিযোগে ‘সিল’ করা হল দু’টি নার্সিংহোম। অপারেশন থিয়েটার বন্ধ করে দেওয়া হল আরও দু’টিতে।

সরকারি হিসেবে বর্ধমান শহর ও লাগোয়া এলাকায় নার্সিংহোম এবং ডায়াগনিস্টিক সেন্টারের সংখ্যা ১,১৭৫। প্রশাসন সূত্রের খবর, সে সবে অনিয়ম হচ্ছে কি না দেখতে অভিযান হয়, তবে নিয়মিত নয়। উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়ায় নার্সিংহোম থেকে শিশু পাচারের ঘটনায় একের পরে এক নার্সিংহোম জড়িয়ে পড়লেও পুরোপুরি নড়ে বসেনি জেলা প্রশাসন বা স্বাস্থ্য দফতর। তবে রবিবার রাতে মহাজনটুলির ঘটনায় নার্সিংহোমের নাম আসতেই প্রশাসন ও স্বাস্থ্য-কর্তারা সিদ্ধান্ত নেন, শহরের নার্সিংহোমগুলির পরিকাঠামো, প্রয়োজনীয় নথিপত্র দেখতে যৌথ অভিযান হবে।

এ দিন সকালে পারবীরহাটায় একটি নার্সিংহোমে গিয়ে প্রশাসনের কর্তারা আয়াদের কাছ থেকে শোনেন, সেখানে সাধারণত মহিলারা গর্ভপাত করাতে আসেন। এলাকাবাসীর একাংশের অভিযোগ, বহু দিন ধরে বেআইনি ভাবে গর্ভপাতের ব্যবসা চালাচ্ছেন ওই নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ। নার্সিংহোমটি বন্ধ করে দেয় প্রশাসন। নার্সিংহোম চালানোর ন্যূনতম পরিকাঠামো না থাকার অভিযোগে সেখানকার এক কর্তা ও ম্যানেজারকে আটক করা হয়।

নবাবহাট মোড়ের আর একটি নার্সিংহোমে গিয়ে কর্তারা দেখেন, ২০টি শয্যার অনুমতি থাকলেও, সেখানে শয্যা-সংখ্যা ৪৯। ধরা পড়ে, অপারেশন থিয়েটারও নিয়ম মেনে তৈরি হয়নি। সেই অপারেশন থিয়েটার বন্ধ করে দেওয়া হয়।

নবাবহাট একশো আট মন্দির লাগোয়া আর একটি নার্সিংহোমে গিয়ে চক্ষু চড়কগাছ কর্তাদের। সেখানে ফ্রিজে সব্জি রাখার জায়গায় ডাঁই করে রাখা রক্তের ব্যাগ। প্রত্যেকটারই মেয়াদ ফুরিয়েছে পাঁচ-ছ’মাস আগে। সিএমওএইচ বলেন, ‘‘এ তো সাংঘাতিক অবস্থা! সাধারণ ফ্রিজে রক্তের প্যাকেট রাখা নিয়মবিরুদ্ধ। কারণ, ফ্রিজের কাঁপুনিতে রক্তের উপাদানগুলি নষ্ট হয়ে যায়।’’ ওই ফ্রিজেই ছিল মেয়াদ ফুরনো অনেক ওযুধও। ওই নার্সিংহোমটি ‘সিল’ করা হয়। কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এফআইআর করার সিদ্ধান্ত নেয় স্বাস্থ্য দফতর। পরে অভিযান চলে ফাগুপুরের আর একটি নার্সিংহোমে। সেখানেও অনিয়মের অভিযোগে বন্ধ করে দেওয়া হয় অপারেশন থিয়েটার। ‘সিল’ করা নার্সিংহোমগুলির রোগীদের পাঠানো‌ হয় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।

কিন্তু পরিকাঠামো না থাকা সত্ত্বেও জেলা স্বাস্থ্য দফতর থেকে নার্সিংহোম খোলার জন্য ‘ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিসমেন্ট’ শংসাপত্র মিলল কী করে? এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন খোদ জেলাশাসক। তবে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, শংসাপত্র পাওয়ার সময় সমস্ত নিয়ম মেনে চলে নার্সিংহোমগুলি। কিন্তু দু’-এক দিন পরেই তারা সাপের পাঁচ পা দেখে। সিএমওএইচ-এর কথায়, ‘‘নিয়ম ভাঙায় মাস দু’য়েক আগেও কালনা, মেমারিতে একাধিক নার্সিংহোম বন্ধ করা হয়েছে। আমরা অভিযান করি না—এমনটা নয়। তবে অভিযান চালানোর পরিকাঠামো এবং লোকের অভাব আছে।’’ জেলাশাসক বলেন, ‘‘এমন অভিযান চলবে। নিয়ম না মানলে আরও নার্সিংহোম বন্ধ করা হবে।’’ তবে অভিযানে থাকা একাধিক স্বাস্থ্য-কর্তাকে বলতে শোনা যায়, ‘‘তেমন হলে ঠগ বাছতে গাঁ উজাড় হয়ে যাবে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Burdwan Nursing home
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE