Advertisement
২৩ মার্চ ২০২৩
এসএসকেএম

বাইরে থেকে ওষুধ ও পরীক্ষা, অভিযুক্তকে ‘আড়াল’ করার চেষ্টা

নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করে হাসপাতালে যে পরীক্ষাগুলি প্রতি দিন হচ্ছে, সেগুলিই বিহারের পূর্ণিয়া থেকে আসা এক রোগীর বাড়ির লোককে দিয়ে বাইরের ল্যাবরেটরি থেকে করিয়ে এনেছিলেন জুনিয়র ডাক্তার।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:১৩
Share: Save:

নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করে হাসপাতালে যে পরীক্ষাগুলি প্রতি দিন হচ্ছে, সেগুলিই বিহারের পূর্ণিয়া থেকে আসা এক রোগীর বাড়ির লোককে দিয়ে বাইরের ল্যাবরেটরি থেকে করিয়ে এনেছিলেন জুনিয়র ডাক্তার। একাধিক চিরকুটে পরীক্ষাগুলির নাম লিখে রোগীর বাড়ির লোকের হাতে ধরিয়ে দিয়েছিলেন। পার্ক স্ট্রিট ও গোর্কি টেরাসের দুই ল্যাবরেটরি থেকে কী কী পরীক্ষা করাতে হবে এবং সেখানে কী ভাবে পৌঁছতে হবে, সেই পথনির্দেশও রীতিমতো এঁকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। এমনকী যে ওষুধ, তুলো, অ্যাডাল্ট ডায়াপার হাসপাতালের ভাঁড়ারেই ডাঁই হয়ে রয়েছে, সে সবও চিরকুটে লিখে রোগীর আত্মীয়দের দিয়ে কিনিয়েছেন। যাতে সব মিলিয়ে বাড়ির লোকের খরচ হয়ে গিয়েছে সাড়ে আট হাজার টাকার বেশি।

Advertisement

ঘটনাস্থল, রাজ্যের পয়লা নম্বর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল এসএসকেএম। পরিষেবা স্বচ্ছ রাখতে এখানেই সম্প্রতি দালালরাজের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে। চিকিৎসকদের একাংশের সঙ্গে বেসরকারি চিকিৎসা-সামগ্রী সরবরহকারী সংস্থা ও দালালদের দুষ্টচক্র ভাঙতে আলাদা তদন্তও চালাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এত কিছুর পরেও হাসপাতালের কিছু চিকিৎসক ও কর্মীর উপর যে কোনও প্রভাবই পড়ছে না, সেটা এই ঘটনা থেকে স্পষ্ট, এমনকী তা স্বীকার করেছেন কর্তৃপক্ষও।

খরচের বহর ক্রমশ বাড়তে থাকায় সমস্ত চিরকুট ও বিল-সহ গত মঙ্গলবার কর্তৃপক্ষের কাছে মেডিসিন বিভাগের ওই জুনিয়র ডাক্তারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানান পূর্ণিয়ার গোলাপবাগ থেকে আসা রোগী পিঙ্কি দেবীর (২৪) বাড়ির লোকেরা। একই সঙ্গে তাঁরা এর প্রতিলিপি জমা দিয়ে আসেন মুখ্যমন্ত্রীর অফিসে। এর পরেই ওই জুনিয়র ডাক্তার এবং মেডিসিন বিভাগের প্রধান নির্মলেন্দু সরকারকে ডেকে পাঠান সুপার করবী বড়াল। চিরকুট লিখে বাইরে থেকে টেস্ট ও ওষুধ কেনানোর কথা স্বীকার করেন ওই পিজিটি। কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এর পর বাইরে থেকে শারীরিক পরীক্ষা ও ওষুধ কেনা বাবদ রোগীপক্ষের যে সাড়ে আট হাজার টাকা খরচ হয়েছে তার পুরোটাই মেডিসিন বিভাগের সংশ্লিষ্ট ইউনিটের চিকিৎসকদের থেকে নিয়ে রোগীর পরিজনদের দেওয়া হয়।

এসএসকেএমের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান অরূপ বিশ্বাসের কথায়, ‘‘সরকারি হাসপাতালে নিখরচায় পরিষেবার নিয়মকে যে চিকিৎসক বা কর্মীরা ভাঙার চেষ্টা করছেন তাঁদের রেয়াত করা হবে না।’’ তবে প্রশ্ন উঠেছে, এত বড় অপরাধ করে হাতেনাতে ধরা পড়ার পরেও দোষী পিজিটি-র বিরুদ্ধে কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হল না কেন? কেন তাঁকে সাসপেন্ড করলেন না কর্তৃপক্ষ? সুপার করবী বড়ালের জবাব, ‘‘ওই জুনিয়র ডাক্তারের বয়স কম। কেরিয়ার সবে শুরু করেছেন। ওঁর বিরুদ্ধে বড় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিলে ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যাবে। তবে তাঁকে কড়া হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধান নির্মলেন্দু সরকারও ওই পিজিটি-কে আপ্রাণ আড়াল করার চেষ্টা করে বলেন, ‘‘বয়স কম, হাসপাতালে কম দিন হল এসেছে। অতি উৎসাহে ভুল করে ফেলেছে। আমি ওকে যথেষ্ট বকাবকি করেছি। ও জানিয়েছে আর এ রকম হবে না। আমার বিভাগে অন্য চিকিৎসকদেরও সতর্ক করা হয়েছে।’’ হাসপাতালের একাধিক প্রবীণ চিকিৎসক অবশ্য জানিয়েছেন, পিজিটি-র শাস্তি হলে তার প্রতিবাদে জুনিয়র ডাক্তারদের বিক্ষোভ সামলাতে হতে পারে বলে কড়া পদক্ষেপ নিতে ইতস্তত করছেন কর্তৃপক্ষ।

অভিযুক্ত পিজিটি-র অবশ্য যুক্তি, ‘‘রোগীর ভাল করতে চেয়েছিলাম। হাসপাতালে পরীক্ষার রিপোর্ট পেতে বহু সময় লাগে। অনেক সময়ে রোগী মারা যাওয়ার পরে রিপোর্ট আসে। এই রোগীর ফুসফুস ও হৃদ্‌পিণ্ডে জল জমছিল। অবস্থা সঙ্কটজনক। সে জন্যই তাড়াতাড়ি রিপোর্ট পেতে বাইরে থেকে পরীক্ষা করাতে বলেছিলাম।’’

তখন তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, কোনও রোগীর জরুরি ভিত্তিতে পরীক্ষা প্রয়োজন হলে বা হাসপাতালে কোনও পরীক্ষা না হলে জুনিয়র ডাক্তারকে তা লিখিত ভাবে ইউনিট প্রধান, বিভাগীয় প্রধান ও সুপারকে জানাতে হয়। তাঁরা সেই পরীক্ষা দ্রুত করানোর ব্যবস্থা করেন। রোগীর বাড়ির লোককে দিয়ে বাইরে থেকে সেগুলি করানো হলে হাসপাতাল সেই টাকা রি-ইমবার্স করে। তিনি সেই নিয়মে এগোলেন না কেন? জবাব মেলেনি।

এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ জানান, এক শ্রেণীর চিকিৎসক ও দালাল এখন বাইরের ল্যাবরেটরি থেকে কমিশন নিয়ে রোগীদের পরীক্ষা করতে পাঠাচ্ছেন আর পরামর্শ দিচ্ছেন হাসপাতাল থেকে পরে সেই টাকা রি-ইমবার্স করে নেওয়ার। এতে নিয়মও রক্ষা হচ্ছে আবার তাঁদের কমিশনও টিঁকে যাচ্ছে। কর্তৃপক্ষ এখন এই চক্র ভাঙতে কাজ শুরু করেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.