Advertisement
০২ জুন ২০২৪
Jyotipriya Mallick

মন্ত্রিসভার বৈঠকে বালুর মন্ত্রিত্ব নিয়ে কথা হল না, জেলায় সংগঠন সামলাতে রথীনদের নির্দেশ মমতার

তৃণমূল সূত্রে খবর, বালুর জেলা সাংগঠনিক বিষয় নিয়েও কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে দলে। ওই জেলায় অন্য যাঁরা মন্ত্রী— পার্থ ভৌমিক এবং রথীন ঘোষদের বলা হয়েছে সংগঠনের বাড়তি গুরুত্ব দিতে।

জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০২৩ ১৮:৫৫
Share: Save:

রেশন দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হওয়া জ্যোতিপ্রিয় (বালু) মল্লিকের মন্ত্রিত্ব থাকবে কি না, তা নিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছিল। জল্পনা ছিল, বুধবার রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ সংক্রান্ত কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও হতে পারে। কিন্তু বালুর মন্ত্রিত্ব নিয়ে কোনও কথাই হল না সেখানে। অন্তত তেমনটাই খবর প্রশাসনিক সূত্রে। তবে বালুর অনুপস্থিতিতে তাঁর জেলা উত্তর ২৪ পরগনায় সংগঠন কী ভাবে সামলানো হবে, তা নিয়ে দলে কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে। দলীয় সূত্রের দাবি, জেলার অন্য মন্ত্রীদের সেই সংগঠন দেখার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

গত ২৭ অক্টোবর রেশন বণ্টন দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হয়েছিলেন জ্যোতিপ্রিয়। ধৃত বনমন্ত্রী বর্তমানে ইডি হেফাজতে রয়েছেন। আগামী ১৩ নভেম্বর তাঁকে আবার কলকাতার ব্যাঙ্কশাল আদালতে হাজির করানোর কথা কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার। তার আগে বুধবারের মন্ত্রিসভার সভার বৈঠকে বালুকে নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছিল। কারণ, নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পরে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কেও তাঁর পুরনো দফতরে কিছু দিন রেখে দেওয়া হয়েছিল। দলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতারের পরেও সেই নীতির ব্যতিক্রম হয়নি। বরং দল যে অনুব্রতের পাশে রয়েছে, তা বোঝাতে সুদীর্ঘ কাল ওই পদেই বহাল রাখা হয়েছিল তাঁকে। এখন জ্যোতিপ্রিয়ের ক্ষেত্রেও দল সেই নীতি নেয় কি না, নজর সে দিকেই ছিল। সূত্রের দাবি, মন্ত্রিসভায় বিষয়টি উত্থাপিতই হয়নি। যার অর্থ, বালুকে আপাতত মন্ত্রিত্ব থেকে সরানো হচ্ছে না। বনমন্ত্রী পদেই থাকছেন জ্যোতিপ্রিয়। তবে বন দফতর সূত্রে খবর, পূর্ণমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে প্রতিমন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদাকেই বন দফতর দেখতে বলা হয়েছে।

প্রশাসনিক এবং দলীয় সূত্রের দাবি, বন দফতরের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে বিরবাহা কাজে তিনি যে অখুশি নন, নানা সময়ে তার আভাস মিলেছে মুখ্যমন্ত্রীর কথায়। বিরবাহার স্বচ্ছ ভাবমূর্তি এবং অমায়িক ব্যবহারে শুধু দলীয় নেতৃত্ব নয়, বনকর্তাদের অধিকাংশই যে সন্তুষ্ট, তা-ও জানেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রশাসনিক কজেও তাঁর দক্ষতা রয়েছে বলে মনে করেন বনকর্তাদের অনেকেই। সেই সঙ্গে তিনি জনজাতি শ্রেণির প্রতিনিধিও। দলের একটি অংশ মনে করছে, তাঁকে বাড়তি দায়িত্ব দিলে জনজাতিদের বার্তা দেওয়ারও একটা সুযোগ থাকছে দলের।

তৃণমূল সূত্রে খবর, বালুর জেলা সাংগঠনিক বিষয় নিয়েও কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে দলে। ওই জেলায় অন্য যাঁরা মন্ত্রী— সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক এবং খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষদের বলা হয়েছে সংগঠনের বাড়তি গুরুত্ব দিতে। যদিও জেলার নেতাদের একাংশের দাবি, এক সময়ে জেলা জুড়ে বালুর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চোখে পড়ার মতো ছিল। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে তাঁকে তাঁর বিধানসভা কেন্দ্রের বাইরে খুব বেশি দেখা যেত না। সদ্য সমাপ্ত পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারেও সক্রিয় ভাবে দেখা যায়নি। বরং ভোটের আগে বাগদা-গাইঘাটায় এসে জনসভার মঞ্চে জ্যোতিপ্রিয় কার্যত কোনও বক্তৃতা না করে ব্রাত্য বসু, তাপস রায়দের জায়গা করে দিয়েছিলেন।

শুধু পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারেই নয়, গত বেশ কয়েক মাস ধরেই উত্তর ২৪ পরগনার জেলা রাজনীতিতে জ্যোতিপ্রিয়কে কিছুটা নিষ্প্রভ মনে হচ্ছিল জেলায় তৃণমূলেরই একাংশের। তাঁদের দাবি, এই সময় বরং আরও কিছু নেতাকে সক্রিয় হতে দেখা যাচ্ছিল। তাঁদের মধ্যে আছেন নৈহাটির বিধায়ক পার্থ, জেলা পরিষদের সভাধিপতি নারায়ণ গোস্বামী, তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস, বিধায়ক তাপস রায়, মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, ব্রাত্য বসুরা। বিশেষ করে পার্থ, নারায়ণ, বিশ্বজিতের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ইদানীং বেড়েছে অনেকটাই। এই তালিকার সকলেই দলের অন্দরে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বলেও পরিচিত।

বাগদা আসনে বিজেপির টিকিটে ভোটে জিতে পরে তৃণমূলে যান বিশ্বজিৎ। পরে তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি করা হয় তাঁকে। পঞ্চায়েত ভোটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় দেখা গিয়েছে তাঁকে। এ বার ২১ জুলাই ধর্মতলায় তৃণমূলের সমাবেশের মঞ্চে বিশ্বজিৎ বক্তৃতার সুযোগ পেয়েছেন। অভিষেকের নেতৃত্বে দিল্লিতে সম্প্রতি তৃণমূলের যে কর্মসূচি হয়েছে, সেই মঞ্চেও বিশ্বজিৎ বক্তৃতা করেছেন। দিন কয়েক আগে রাজভবনের সামনে তৃণমূলের ধর্নামঞ্চেও বক্তৃতা করেন। রাজ্যপালের সঙ্গে তৃণমূলের যে প্রতিনিধিদল দেখা করতে গিয়েছিল, সেখানেও ছিলেন তিনি। ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটে অশোকনগর কেন্দ্র থেকে দাঁড়িয়ে জয়ী হয়েছিলেন নারায়ণ। এ বার জেলা পরিষদের আসনে দাঁড়িয়ে জয়ী হয়ে জেলা পরিষদের সভাধিপতি হয়েছেন। তৃণমূলের একটি সূত্রের মতে, শীর্ষ নেতৃত্বের হাত মাথায় আছে বলেই নারায়ণের এই প্রাপ্তিযোগ। পার্থ গত বছর সেচমন্ত্রী হয়েছেন। জেলা প্রশাসনের কর্তাদের কাছে তাঁর গুরুত্ব বেড়েছে। তৃণমূল কর্মীরা অনেকেই মনে করেন, শীর্ষ নেতৃত্বের ‘গুডবুক’-এ থাকার কারণেই মন্ত্রিত্ব পেয়েছেন পার্থ।

২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের পরে জেলা সংগঠন ভেঙে বনগাঁ, বারাসত, বসিরহাট, ব্যারাকপুর-দমদম— এই চারটি সাংগঠনিক জেলা তৈরি করেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। সেটাও অভিষেকের মস্তিষ্কপ্রসূত বলেই দলের অনেকের ধারণা। এক সময়ে অবিভক্ত জেলা সংগঠনে সভাপতির দায়িত্ব সামলেছেন জ্যোতিপ্রিয়। পরে দলের জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য করা হয় তাঁকে। উত্তর ২৪ পরগনায় ২০০১ সাল থেকে টানা বিধায়ক জ্যোতিপ্রিয়। প্রথমে গাইঘাটা এবং পরে হাবড়া থেকে জিতে আসছেন। জেলায় তাঁর অনুগামীর সংখ্যা এখনও নেহাত কম নয়। রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে তাঁর গ্রেফতারির পরে জেলা তৃণমূলের অন্দরে ভারসাম্যের কোনও রদবদল হয় কি না, তা নিয়ে কয়েক দিন ধরেই কৌতূহল ছিল দলীয় কর্মীদের মধ্যে। সেই আবহেই জেলার অন্য মন্ত্রীদের সংগঠনের ব্যাপারে বাড়তি দায়িত্ব পালন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেই দলীয় সূত্রে খবর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jyotipriya Mallick Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE