Advertisement
০৪ মে ২০২৪

আগে দলে ‘দিল’ জিতুন, অদ্ভুত পরীক্ষা কৈলাসের

কৈলাস বিজয়বর্গীয়র প্রস্তাব শুনে সে দিন শুরুতে হতবাকই হয়েছিলেন দেবশ্রী চৌধুরী। কৈলাসজি বলেন কী? তিন মিনিট রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রশংসা করতে হবে! মাত্র দু’বছর আগেই বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন রূপা। এর মধ্যেই রাজ্যসভায় মনোনীত সাংসদ হিসাবে তাঁকে নির্বাচিত করেছেন মোদী-অমিত শাহরা।

রোশনী মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:০০
Share: Save:

কৈলাস বিজয়বর্গীয়র প্রস্তাব শুনে সে দিন শুরুতে হতবাকই হয়েছিলেন দেবশ্রী চৌধুরী। কৈলাসজি বলেন কী? তিন মিনিট রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রশংসা করতে হবে! মাত্র দু’বছর আগেই বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন রূপা। এর মধ্যেই রাজ্যসভায় মনোনীত সাংসদ হিসাবে তাঁকে নির্বাচিত করেছেন মোদী-অমিত শাহরা।তুলনায় দেবশ্রী দলের বহু দিনের কর্মী। এখন রাজ্য সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক।

সে যাক! দলের কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকের কথা ফেলা যায় না! এক ঘর সতীর্থের মাঝে দাঁড়িয়ে রূপার প্রশংসা শুরু করেন দেবশ্রী,—‘‘রূপা খুব ভাল। দারুণ কাজ করছেন।’’ কিন্তু ৩ মিনিট কোথায়, ৩০ সেকেন্ড পেরোনোর আগেই বসে পড়েন দেবশ্রী।
এর পর রাজ্য সম্পাদক রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে তাকান কৈলাস।
রাজুকে বলেন, রাজকমল পাঠকের প্রশংসা করুন দেখি। সময় ৩ মিনিট। রাজুর দৌড়ও থেমে যায় পনেরো-বিশ সেকেন্ডে। এর পর আর নাকি হাঁড়ির সব ভাত টিপে দেখেননি কৈলাস!

ডায়মন্ড হারবারে ১৭ এবং ১৮ ডিসেম্বর চিন্তন বৈঠক করেছে বিজেপি। দলীয় সূত্রের খবর, ঘটনাটি তার দ্বিতীয় দিনের। দলের রাজ্য নেতাদের কৈলাস বলেন, সংগঠন বাড়াতে হলে মিলেমিশে কাজ করতে হবে। কাজ হাল্কা থাকলে নেতাদের সঙ্গে চা খেতে খেতে গল্প করা উচিত। বন্ধুত্ব বাড়বে। কৈলাসের পরামর্শের জবাবে রাজ্য বিজেপি নেতা অমিতাভ রায় বলেন, বাস্তবটা কঠিন। দলের রাজ্য দফতরে এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা একসঙ্গে চা খাওয়া তো দূর অস্ত্, একে অপরের সঙ্গে কথাই বলেন না।
এ কথা শুনেই দুম করে পরীক্ষা নেওয়া শুরু করেন কৈলাস। কিন্তু দেবশ্রী ও রাজু-র নমুনা দেখার পরই পরীক্ষা থামিয়ে দেন কৈলাস। কঠোর স্বরে বলেন, দলের এতটা শোচনীয় অবস্থা যে, এক জন আর এক জন সহযোগীর ৩ মিনিটও প্রশংসা করতে পারছেন না! দলের সহকর্মীর ‘দিল’ই যাঁরা জয় করতে পারেন না, তাঁরা কী করে রাজ্যের মানুষের ‘দিল’ জয় করবেন? সেটা না হলে রাজ্যের তখ্ত দখল হবে কী ভাবে? যদিও দেবশ্রী ও রাজু দু’জনেরই দাবি, কৈলাস তাঁদের এমন পরীক্ষার মুখে ফেলেনইনি! দেবশ্রীর কথায়, ‘‘এ রকম কিছুই ঘটেনি।’’ রাজুর বক্তব্য, ‘‘সব আজগুবি গল্প।’’ রূপার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

রাজ্য বিজেপি সম্পর্কে চালু রসিকতাই হল, দলে ৪ জন নেতা আর ৫টা গোষ্ঠী! কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে রাজ্যের পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পাওয়া থেকে তার বহু প্রমাণ পেয়েছেন কৈলাসও। তিনি যখন পর্যবেক্ষক হন,
তখন রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি ছিলেন রাহুল সিংহ। সেই সময়ে কৈলাস কলকাতায় এলেই রাহুলবাবু ও তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে তাঁর কাছে নালিশ করার জন্য দলের রাজ্য দফতরে বা তাঁর হোটেলে লাইন দিতেন বহু নেতা-কর্মী। দিলীপ ঘোষ রাজ্য সভাপতি হওয়ার পরও যে নালিশ-সংস্কৃতি বদলায়নি, তা-ও বিলক্ষণ টের পাচ্ছেন কৈলাস। যে কারণে গত এক বছরে রাজ্য স্তরের সব বৈঠকেই নিয়ম করে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ভুলে মিলেমিশে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তাতেও কাজ না হওয়ায় নেতা-নেত্রীদের হাটের মাঝে এ ভাবেই অস্বস্তিতে ফেলার কৌশল নেন কৈলাস!

প্রশ্ন, এতেও কি ফল মিলবে? ঘরোয়া আলোচনায় অনেকে বলছেন, ফলের সম্ভাবনা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে ভরপুর। দলে অনেকেই আছেন, যাঁরা শুধু নিজের চেয়ার আঁকড়াতেই ব্যস্ত। এমনকী, অন্য কাউকে নিজের চেয়ারে বসতেও দেন না। পাছে চেয়ার হাতছাড়া হয়, এই ভয়ে পারলে বাড়ি যাওয়ার সময় চেয়ারটাও সঙ্গে নিয়ে যান! এক নেতার সকৌতুক মন্তব্য, ‘‘এই চেয়ারপার্সনদের সামলাতে না পারলে চেয়ার দখল করা খুব কঠিন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kailash Vijayvargiya BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE