Advertisement
০৯ ডিসেম্বর ২০২৪

মাকড়সার জালেই বিকল্প বিদ্যুৎ, তাক লাগাল আইআইটি

ঝুল-কালির ফাঁকে মাকড়সার জাল। ঘরের কোণের এই অনাদরের জিনিসেই বিকল্প বিদ্যুতের সন্ধান পেয়েছেন খড়্গপুর আইআইটি-র গবেষকরা। 

উদ্ভাবনী: বিদ্যুতের ডিভাইস হাতে তিন গবেষক। নিজস্ব চিত্র

উদ্ভাবনী: বিদ্যুতের ডিভাইস হাতে তিন গবেষক। নিজস্ব চিত্র

দেবমাল্য বাগচী
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:৩৮
Share: Save:

ঝুল-কালির ফাঁকে মাকড়সার জাল। ঘরের কোণের এই অনাদরের জিনিসেই বিকল্প বিদ্যুতের সন্ধান পেয়েছেন খড়্গপুর আইআইটি-র গবেষকরা।

আইআইটির মেটিরিয়াল সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ভানুভূষণ খাটুয়ার তত্ত্বাবধানে এই প্রযুক্তির আবিষ্কার কথা ইতিমধ্যে ‘ন্যানো এনার্জি’ জার্নালে স্থান করে নিয়েছে। ২৬ ডিসেম্বর প্রযুক্তির ‘পেটেন্ট’ হয়েছে। ডিমের খোলার আস্তরণ থেকেও তৈরি হচ্ছে বিদ্যুৎ। ভানুভূষণকে এই আবিষ্কারে সাহায্য করেছেন তাঁর গবেষক ছাত্র সুমন্তকুমার করণ ও সন্দীপ মাইতি এবং দক্ষিণ কোরিয়ার পোস্টেক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জিন কোন কিম। সন্দীপ দীর্ঘ দিন দক্ষিণ কোরিয়ায় ছিলেন।

অধ্যাপক ভানুভূষণ বলেন, “মাকড়সার জাল থেকে প্রায় ১ মাইক্রো অ্যাম্পিয়ার বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। ডিমের খোলার আস্তরণ থেকে ১.৬ মাইক্রো অ্যাম্পিয়ার বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। আর এই দু’টি পদার্থই মানুষের শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর নয়। আশা করছি আগামী দিনে সবুজ শক্তিতে বিপ্লব আনবে এই প্রযুক্তি।” গবেষকদের দাবি, এই বিদ্যুৎ দিয়ে যেমন এলইডি আলো জ্বালানো যাবে, তেমনই ব্যবহার করা যাবে পেসমেকারের মতো মানুষের শরীরে প্রতিস্থাপন যোগ্য যন্ত্রে।

আইআইটি-র বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, যে কোনও পদার্থে ধনাত্মক ও ঋণাত্মক শক্তি রয়েছে। সাধারণত প্রতি পদার্থেই তা এলোমেলো অবস্থায় বিরাজ করে। তবে ওই পদার্থ থেকে যদি বিদ্যুৎ পাওয়া যায় তবে তাকে ‘পিজো ইলেক্ট্রিক’ বলা হয়। ১৯৫৫ সালে জাপানি বিজ্ঞানী ই ফুকাদা কাঠের মধ্যে ‘পিজো ইলেক্ট্রিক’-এর উপস্থিতি লক্ষ করেন। সেই ভাবনার সূত্রেই ২০১৭ সালে আইআইটির বিজ্ঞানীরা পেঁয়াজের খোসার মতো সেলুলোজ অংশ দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে সাফল্য পেয়েছিলেন।

গবেষকেরা জানান, সম্প্রতি একটি সূত্র থেকে তাঁরা জানতে পারেন মাকড়সার জালে প্রোটিন রয়েছে। আর ডিমের খোলার পাতলা আস্তরণে রয়েছে কোলাজেন। এ গুলি মানব শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর নয়। পরিবেশেও অনায়াসে মিশে যায়। পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, এ গুলির উপর চাপ প্রয়োগ করলে দু’টি তলের এক দিকে ধনাত্মক ও অন্য দিকে ঋণাত্মক শক্তি সৃষ্টি হয়। গবেষক সুমন্তকুমার বলেন, “মাকড়সার জাল টানলে শক্তি উৎপাদন হচ্ছে জেনেছিলাম। কিন্তু ৯০ ডিগ্রি কোণে চাপ প্রয়োগ করে শক্তি উৎপাদনের জন্য আমাদের সাহায্য করেন দক্ষিণ কোরিয়ার অধ্যাপক ইয়নসিক কিম।’’

মাকড়সার জালকে পাশাপাশি সাজিয়ে তার দু’দিকে কার্বনের প্রলেপ দিয়ে ‘ইলেক্ট্রোড’ বা বিদ্যুদ্বাহক তৈরি করা হয়েছে। একই ভাবে ডিমের খোলার সাদা আস্তরণেও ইলেক্ট্রোড তৈরি হচ্ছে। শুধু মাকড়সার জালের মাঝে এক দিকে দিতে হচ্ছে পাতলা পলিমারের আস্তরণ।

এর পরে দু’দিকের ইলেক্ট্রোড থেকে তার দিয়ে মিলছে বিদ্যুৎ। এখন এই প্রযুক্তিকে বৃহত্তর ক্ষেত্রে ব্যবহার করাই আইআইটি-র গবেষদের লক্ষ্য।

অন্য বিষয়গুলি:

Kharagpur IIT Electricity Spider Web
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy