সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য নিয়ে এ বার মুখ খুলল কলকাতা হাইকোর্ট। আশঙ্কা প্রকাশ করে জানতে চাইল, এই উপদ্রব রুখতে রাজ্য সরকার কী ব্যবস্থা নিয়েছে। ‘‘সিন্ডিকেটের জুলুম ঠেকাতে কিছু ক্ষেত্রে রাজ্য ভাল পদক্ষেপ করেছে। কিন্তু এ পর্যন্ত যা প্রকাশ্যে এসেছে, তা হিমশৈলের চূড়া মাত্র।’’— শুক্রবার এক জনস্বার্থ-মামলায় মন্তব্য করছেন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর।
দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এসেই সিন্ডিকেট-রাজ, তোলাবাজি নিয়ে সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নির্দেশে তোলা আদায়ের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন বিধাননগর পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলার অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়। তাঁর দুই শাগরেদও হাজতে। পুলিশি তদন্তে উঠে আসছে জুলুমবাজির নানা কাহিনি। এতে দলের একাংশে কিছুটা আতঙ্কও ছড়িয়েছে।
এ হেন প্রেক্ষাপটে হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ। প্রসঙ্গত, আসানসোল ও নিউটাউনে কোর্টবাড়ি নির্মাণের পথে সিন্ডিকেট কী ভাবে বাধা দিচ্ছে, মাস ছয়েক আগে হাইকোর্টের বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত এজলাসে বসে তার বৃত্তান্ত শুনিয়েছিলেন। এ দিন প্রধান বিচারপতি আর এক ধাপ এগিয়ে জানালেন, বিচারপতিরাও সিন্ডিকেটের কবলে পড়ছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমি শোনা কথায় কান দিই না। কিন্তু আমি জানি, এটা ঘটছে। আমার সহ-বিচারপতিরা সিন্ডিকেট-রাজের শিকার।’’
এই অবস্থায় অবৈধ সিন্ডিকেট-রাজ বন্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, সে সম্পর্কে তিন সপ্তাহের মধ্যে রাজ্য সরকারের হলফনামা তলব করেছেন প্রধান বিচারপতি।
রাজ্য জুড়ে সিন্ডিকেটের জুলুম, অবৈধ নির্মাণ, পুকুর ভরাট ইত্যাদি বিবিধ অভিযোগ তুলে গত ৫ জুলাই জনস্বার্থ-মামলাটি দায়ের করেছেন বিরাটির বিপ্লব চৌধুরী। প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর ও বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে এ দিন তারই শুনানি ছিল। সেখানে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) জয়ন্ত মিত্রের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন— ‘‘আমি দশ টাকা দিয়ে কিছু কিনব। কোথা থেকে কিনব, তা তো আমিই ঠিক করব! কোর্ট-বাড়ি জনগণের টাকায় তৈরি হবে। নিম্নমানের জিনিস কিনতে কেউ বাধ্য হবে কেন?’’
জুলুমের ফাঁদে পড়ে সরকারি প্রকল্প যেমন আটকে যাচ্ছে, তেমন খরচও বাড়ছে বলে আক্ষেপ করেন প্রধান বিচারপতি চেল্লুর। বলেন, ‘‘কেরল, কর্নাটকেও একই সমস্যা। এখানে কয়েকটি ক্ষেত্রে রাজ্য ব্যবস্থা নিয়েছে। তা ভাল। কিন্তু বড় আকারে ব্যবস্থা নিতে হবে।’’
সায় দেন এজি’ও। ‘‘এ সব বন্ধ হওয়া জরুরি।’’— মন্তব্য তাঁর। আবেদনকারীর কৌঁসুলি জয় সেনগুপ্ত ও অনিন্দ্যসুন্দর দাসের অভিযোগ, বিভিন্ন পুরসভার বিল্ডিং সুপারভাইজারেরা অবৈধ ভাবে নকশার অনুমোদন দিচ্ছেন। এতে রাজ্যের রাজস্ব কমছে। জলাশয় বুজিয়ে অবৈধ নির্মাণও চলছে। এ সব নিয়েও তিন সপ্তাহের মধ্যে রাজ্যের হলফনামা চেয়েছে হাইকোর্ট।
পরবর্তী শুনানি ছ’সপ্তাহ বাদে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy