Advertisement
E-Paper

হাড়ে কাঁপুনি ধরাচ্ছে ঠান্ডা, আবহবিদরা বলছেন এটা শীত নয়!

কাঁপন ধরানো বাতাস বইছে। সঙ্গে ঝিরঝিরে বৃষ্টি। সোয়েটার, জ্যাকেট, উইন্ডচিটার, মাঙ্কি ক্যাপ— সবই বেরিয়ে পড়েছে ট্রাঙ্ক থেকে। কাঁপছে কলকাতা। কিন্তু আবহবিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, এটা শীত নয়!

দেবদূত ঘোষঠাকুর

শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৪:০৯
নাকাল: অসময়ের বৃষ্টিতে। মঙ্গলবার বেলগাছিয়ায়। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

নাকাল: অসময়ের বৃষ্টিতে। মঙ্গলবার বেলগাছিয়ায়। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

কাঁপন ধরানো বাতাস বইছে। সঙ্গে ঝিরঝিরে বৃষ্টি। সোয়েটার, জ্যাকেট, উইন্ডচিটার, মাঙ্কি ক্যাপ— সবই বেরিয়ে পড়েছে ট্রাঙ্ক থেকে। কাঁপছে কলকাতা। কিন্তু আবহবিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, এটা শীত নয়!

কেন? আবহবিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা, অন্ধ্রপ্রদেশে হানা দেওয়া ঘূর্ণিঝড়ের লেজের ঝাপটায় পৌষের প্রথম দু’দিন আসল শীত অধরা। বঙ্গোপসাগর থেকে বয়ে আসা দখিনা ঝোড়ো বাতাসের সঙ্গী হয়ে পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতের পরিমণ্ডলে প্রচুর জলীয় বাষ্প ঢুকে পড়েছে। রোদের দেখা মিলছে না সোমবার থেকে। আর সূর্য মুখ না-দেখানোয় দিনের তাপমাত্রা বাড়তে পারছে না। সঙ্গে সমুদ্রের দখিনা বাতাস ঝাপটা মারছে চোখেমুখে। তাতেই নাজেহাল মানুষ। অনুভূতিটা ঠান্ডার, কিন্তু উত্তুরে হাওয়ার বয়ে আনা শীত এটা নয়।

আলিপুরের আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, শীত কতটা পড়ছে, সেটা নির্ভর করে রাতের তাপমাত্রার পতন, অর্থাৎ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কতটা নামল, তার উপরে। মঙ্গলবার কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা এই সময়ের স্বাভাবিকের থেকে পাঁচ ডিগ্রি কম। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এতটা কমে যাওয়াতেই দিনের বেলা ঠান্ডা ভাব প্রকট হয়েছে বলে জানাচ্ছেন আবহবিদেরা। রাতের তাপমাত্রা কিন্তু এই সময়ের সর্বনিম্ন তাপমাত্রার থেকে বেড়েই রয়েছে। এ দিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৬.১ ডিগ্রি, স্বাভাবিকের থেকে এক ডিগ্রি বেশি।

আরও পড়ুন: শাশুড়ি অসুস্থ, তাই মাকে বাড়িতে ঠাঁই দিল না ছেলে!

অথচ শীতে কাঁপছে উত্তর ভারত। কাশ্মীরের কার্গিলে তাপমাত্রা নেমে গিয়েছে শূন্যের ১৫.৬ ডিগ্রি নীচে। হিমাচল, উত্তরাখণ্ড, পঞ্জাব, দিল্লি, হরিয়ানা, গুজরাত, উত্তরপ্রদেশ, এমনকি মধ্যপ্রদেশও ঠান্ডায় জবুথবু। কিন্তু ছত্তীসগঢ় থেকে উল্টো চিত্র। সেখানে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কমে গেলেও রাতের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বেড়ে থাকছে। সেই আবহাওয়াই গ্রাস করেছে বিহার, ঝাড়খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা ও গোটা উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে।

এমনটা হচ্ছে কেন?

আবহবিজ্ঞানীরা বলছেন, কাশ্মীর থেকে নেমে আসা উত্তুরে হাওয়া শীত নিয়ে আসে পূর্ব ভারতে। আকাশ পরিষ্কার থাকলে খুব সহজেই সেই কনকনে ঠান্ডা হাওয়া উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, বিহার, ঝাড়খণ্ড হয়ে পৌঁছয় পশ্চিমবঙ্গে। কিন্তু সেটা হতে পারছে না। ঘূর্ণিঝড় ‘পেতাই’-এর লেজের ধাক্কায় বঙ্গোপসাগর থেকে ঢুকছে জলীয় বাষ্পপূর্ণ হাওয়া। তাতেই আটকে যাচ্ছে উত্তুরে বাতাস। আবহবিজ্ঞনীরা জানাচ্ছেন, বঙ্গোপসাগর থেকে ঢোকা দখিনা বাতাসের তীব্রতা এত বেশি যে, সে ছত্তীসগঢ়ের সীমানা পর্যন্ত পৌঁছে যাচ্ছে। মধ্যপ্রদেশ-ছত্তীসগঢ় সীমানায় উত্তুরে হাওয়ার সঙ্গে বাধছে তার লড়াই। সেখান থেকেই পিছু হটতে হটতে উত্তুরে হাওয়া ফিরে যাচ্ছে উত্তর ভারতের দিকে।

আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, ঘূর্ণিঝড়-নিম্নচাপের শক্তি যত কমবে, পাল্লা দিয়ে কমতে থাকবে দখিনা বাতাসের তীব্রতা। চলতি সপ্তাহের মাঝামাঝি তার দাপট প্রায় লুপ্ত হয়ে যাবে বলে আশা আবহবিদদের। তাঁরা বলছেন, কাল, বৃহস্পতিবার থেকেই উত্তুরে হাওয়ার সামনে দখিনা বাতাসের প্রতিরোধ সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ার কথা। আর তার পরেই আসবে প্রকৃত শীত।

সেই আশাতেই বড়দিনে কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রিতে নেমে যেতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে মৌসম ভবন।

Winter Weather Storm
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy