Advertisement
১১ মে ২০২৪

ফিরে দেখা

দিন আসে, দিন যায়, তার ফাঁকেই ইতিহাসে ঢুকে পড়ে তার চলাচলের খবর। পুরনো দিনের শহুরে খবর দিয়ে চেনা যায় এখনকার অতি পরিচিত শহরের অতীতটাকে, তার নাগরিক জীবনযাপন থেকে খেলাধুলো, সংস্কৃতি বা কূটকচালি থেকে রাজনীতির হাল। পঞ্চাশ বছর আগের কলকাতা শহরের গতিবিধি চিনতে ২১ মে ১৯৬৪ থেকে ২০ জুন ১৯৬৪ এক মাসের কিছু বিশেষ খবর।দিন আসে, দিন যায়, তার ফাঁকেই ইতিহাসে ঢুকে পড়ে তার চলাচলের খবর। পুরনো দিনের শহুরে খবর দিয়ে চেনা যায় এখনকার অতি পরিচিত শহরের অতীতটাকে, তার নাগরিক জীবনযাপন থেকে খেলাধুলো, সংস্কৃতি বা কূটকচালি থেকে রাজনীতির হাল। পঞ্চাশ বছর আগের কলকাতা শহরের গতিবিধি চিনতে ২১ মে ১৯৬৪ থেকে ২০ জুন ১৯৬৪ এক মাসের কিছু বিশেষ খবর।

শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৪ ০০:০৫
Share: Save:

বৃহস্পতিবার, ৭ জৈষ্ঠ্য, ১৩৭১ (৩১ বৈশাখ, ১৮৮৬ শক) THURSDAY, MAY 21, 1964

ইতস্তত কয়েকটি অপ্রীতিকর ঘটনা: হরতালের দিন, বুধবার কলিকাতার জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয় নাই, তবে স্বাভাবিক ছিল না। ট্রাম-বাস চলিয়াছে, সংখ্যায় রীতিমত কম। অফিসে হাজিরা ছিল, সংখ্যায় কম। ছোট ছোট দোকান খোলা ছিল, তাহাও সংখ্যায় কম। এককথায় জয় ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস ধর্মঘটের সমর্থনে এবং দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে, “সপ্তবাম”—আহূত এই হরতালের সাফল্য আংশিক। তবে ট্রেন ও প্রাইভেট গাড়ির চলাচলে বিঘ্ন ঘটে নাই, ট্যাক্সিগুলিও সকাল হইতেই ব্যস্ত ছিল।


(বাম দিক হইতে) ১. বুধবার হাওড়া স্টেশনে—বাসের ভিড় আছে, কিন্তু যাত্রী কম। ২. সকালে সার্কুলার রোডের ট্রামে অফিস যাত্রী।
৩. বুধবার দমদম জংশনে যাত্রীরা ট্রেনে উঠিতেছেন। ৪. বুধবার সকালে শিয়ালদহ অঞ্চলে যাত্রীরা বাসে উঠিতেছেন। —আনন্দ চিত্র।

হরতালের দিনে রাজপথে সজীবতা ও অসাড়তার মিশ্র চিত্র বহুদিন পরে এই প্রথম দেখা গেল। হরতালের উদ্যোক্তারা কিন্তু ইহা ‘পূর্ণ সাফল্যমণ্ডিত’ বলিয়া দাবি করেন। পক্ষান্তরে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী শ্রীপ্রফুল্লচন্দ্র সেন এক বিবৃতিতে বলেন যে, হরতাল সফল হয় নাই। সাধারণ নাগরিকের বক্তব্য তৃতীয় রূপ। তাঁহাদের মতে রাজ্য সরকার নাগরিক জীবন স্বাভাবিক রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সর্বপ্রকার ব্যবস্থা অবলম্বনের যে আশ্বাস দিয়াছিলেন তাহা কার্যকরী হইলে আরও বহু নাগরিকই যথারীতি তাঁহাদের কাজকর্মে যোগ দিতে পারিতেন। অনেক ক্ষেত্রে অফিস কাছারির কর্মীরা কর্মস্থলে যাইবার জন্য রাজপথে ভিড় করিয়াছেন, কিন্তু যথেষ্ট সংখ্যক যানবাহনের অভাব, তাঁহাদের অনেকে কাজে যাইতে পারেন নাই।

শুক্রবার ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৩৭১(১ জ্যৈষ্ঠ ১৮৮৬) FRIDAY, MAY 22 1964

প্রদাহের পর প্রবাহ: জ্যৈষ্ঠের জ্বলন্ত আকাশে এক টুকরো কালো মেঘ যেন ভোজবাজি দেখিয়ে গেল। কয়েক মিনিটের মধ্যে সেই কালো মেঘের জটা ফুলে-ফেঁপে রোদে-পোড়া সমস্ত আকাশ গ্রাস করল। শহরের তাপদগ্ধ বুকেও যেন মেঘ নেমে এল। মেঘ নয়,—ধূলোর ঝড়। কলকাতায় অনভ্যস্ত ‘আঁধি’।বিষুনতবারের বিকেলে কলকাতায় যে ঝড় বয়ে যায় তার গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার। সেই ঝড়ের সঙ্গে ওড়া ধূলোয় সব কিছু ঢাকা পড়ে। ধূলোর পর্দায় চেনা শহরও মুখ ঢাকে। তারপর নামে বৃষ্টি। প্রথমে ফোঁটা ফোঁটা, তারপর ধারা বর্ষণ। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে হয়—ধারাজলে স্নান করে শহর স্নিগ্ধ হয়।

শুক্রবার ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৩৭১ (১ জ্যৈষ্ঠ ১৮৮৬) FRIDAY, MAY 22 1964

হরতাল সম্পর্কে ধরপাকড়: ‘হরতাল দিবস’ উপলক্ষে (২০শে মে) হাঙ্গামা প্রভৃতির দায়ে ভবানীপুর পুলিশ কর্তৃক ধৃত মদনমোহন হাজরা এবং আরও ছয়জনকে আলিপুরের পুলিশ ম্যাজিস্ট্রেট শ্রী এইচ আর দেবের এজলাসে হাজির করা হয়। আসামীদের বিরুদ্ধে দাঙ্গা, অন্যান্য ব্যক্তিদের আঘাত, বিস্ফোরক দ্রব্য আইন এবং পশ্চিমবঙ্গ নিরাপত্তা আইন ভঙ্গের অভিযোগ করা হইয়াছে। আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এই যে তাহারা বেআইনীভাবে দলবদ্ধ হইয়া দেবেন্দ্র ঘোষ ও আশুতোষ মুখার্জি রোডের মোড়ে স্থানীয় জনসাধারণকে সন্ত্রস্ত করিবার জন্য এবং সমস্ত যানবাহন চলাচল বন্ধ করিবার জন্য সমবেত হয়। তাহারা একটি হাতবোমা নিক্ষেপ করে এবং উহার বিস্ফোরণের ফলে অনন্ত নন্দী নামে একজন পথযাত্রী আহত হয়। সমস্ত আসামীকেই ঘটনাস্থলে গ্রেপ্তার করা হয়। আসামীদের পক্ষ হইতে জামিনের আবেদন করা হইলে ম্যাজিস্ট্রেট উহা অগ্রাহ্য করেন এবং আসামীগণকে ২৭শে মে পর্যন্ত পুলিশ হাজতে—রাখিবার নির্দেশ দেন।


এত মুষড়ে পড়ছ কেন? ডেপুটি মন্ত্রীদের তালিকা তো বাকী আছে।

শনিবার, ৯ জ্যৈষ্ঠ, ১৩৭১ (২ জ্যৈষ্ঠ ১৮৮৬) SATURDAY, MAY 23, 1964

শিল্পোলব্ধির সঙ্গে সঙ্গে মানবিক অনুভূতি, চিত্র সমালোচকদের কর্ত্তব্য মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ: মুখ্যমন্ত্রী শ্রীপ্রফুল্লচন্দ্র সেন চিত্র সমালোচনাকালে কোন চিত্রের শিল্পোলাব্ধর সঙ্গে সঙ্গে উহার অপরাপর মানবিক দিকগুলিও উপেক্ষা না করিবার জন্য চিত্র সমালোচকদের পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, কোন এক বিশেষ চিত্র তাহা যতই শিল্পসমৃদ্ধ হোক না কেন, কখনও কখনও উহার কতকগুলি দিক নৈতিকতা, মানবিক সম্পর্ক এবং জন-প্রশাসনের ক্ষেত্রেও ক্ষতিজনক হইতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সেন্সর করা হইলে চিত্র সমালোচকের পক্ষে তাহার সমালোচনা করা সমীচীন হইবে না। শুক্রবার ক্যাথিড্রাল রোডস্থিথ অ্যাকাডেমী অব ফাইন আর্টস ভবনে বঙ্গীয় চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি কর্তৃক ১৯৬৩ সালের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র, শিল্পী এবং টেকনিসিয়ানদের বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ভাষণ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী উক্তরূপ মন্তব্য করেন। তাঁহার এই অনুষ্ঠান উদ্বোধন করিবার কথা ছিল। কিন্তু অসুস্থতার জন্য তিনি উপস্থিত হইতে না পারায় অর্থমন্ত্রী শ্রীশৈলকুমার মুখার্জি উহার উদ্বোধন করেন এবং মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণ পাঠ করেন।

শনিবার, ৯ জ্যৈষ্ঠ, ১৩৭১ (২ জ্যৈষ্ঠ ১৮৮৬) SATURDAY, MAY 23, 1964

দুইজন রাজনৈতিক কর্মী গ্রেপ্তার: আর এসপি’র রাজ্য কমিটির সদস্য শ্রীরামকৃষ্ণ পাঠক এবং কম্যুনিস্ট সদস্য শ্রীযতীন ভট্টাচার্যকে কলিকাতা স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চ পুলিশ শুক্রবার গ্রেপ্তার করে। প্রকাশ তাহাদিগকে ভারতরক্ষা বিধি বলে আটক করা হইয়াছে। এইদিন পুলিশ কলিকাতা কর্পোরেশনের কাউন্সিলার আর এস পি নেতা শ্রীনীলরতন সিংকেও ভারতরক্ষা বিধিবলে গ্রেপ্তার করে। প্রকাশ, শ্রীসিং সন্ধ্যার পর দলের অফিস হইতে বাহির হইয়া যখন গৃহে প্রত্যাবর্তন করিতেছিলেন তখন মৌলানীর মোড়ে তাঁহাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

শনিবার, ৯ জ্যৈষ্ঠ, ১৩৭১ (২ জ্যৈষ্ঠ ১৮৮৬) SATURDAY, MAY 23, 1964

কেনরে বাস রাস্তায় বেরুস না—চালক কেন হাজির হয় না: ডিপোর বাস আছে, কন্ডাক্টর আছে কিন্তু চালকের অনুপস্থিতিতে সবই অচল। কলিকাতা রাস্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার একজন মুখপাত্রের মতে, চালকদের ঘন ঘন অনুপস্থিতি সংস্থার পক্ষে নূতন সঙ্কটের সৃষ্টি করিয়াছে। ফলে যাত্রীদের দুর্ভোগ আর একদফা বাড়িবার আশঙ্কা দেখা দিয়াছে। উক্ত মুখপাত্র অভিযোগ করেন, অধিকাংশ সময়েই চালকরা নাকি অনুপস্থিত থাকার সংবাদ পূর্বে জানান না। অথচ, আগের দিন রাত্রে কন্ডাক্টর চালকদের ডিউটি ঠিক করিয়া রাখিতে হয়। সকালে চালক না আসার জন্য রুটে গাড়ি বাহির হয় না। এইভাবে প্রতিদিনই বাসথাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন রুটে বাসের সংখ্যা হ্রাস করিতে হয়। তিনি বলেন, অনুসন্ধান করিয়া দেখা দিয়াছে; অনুপস্থিত চালকদের অনেকে কাজে বহাল হন। বর্তমানে সংস্থার চালকের সংখ্যাও কম নয়, প্রায় আড়াই হাজার। কিন্তু তাহাদের অনেকের অনুপস্থিতি বাসগুলিকে অচল করিয়া তুলিয়াছে।


শ্বশুরবাড়ীর তত্ত্ব এসেছে হাঁড়ি, কড়াই

শনিবার, ৯ জ্যৈষ্ঠ, ১৩৭১ (২ জ্যৈষ্ঠ ১৮৮৬) SATURDAY, MAY 23, 1964

ছাত্রমিছিল আক্রমণের মামলা: গত ৯ই জানুয়ারী বৈকালে ওয়েলেসলি স্ট্রীট ও ব্রকম্যান স্ট্রীটের সযোগস্থলে সোডার বোতল, ইস্টক ও লাঠি লইয়া ছাত্রদের একটি শোভাযাত্রা আক্রমণ করার অভিযোগে ভারতরক্ষা বিধানের ৪১ ধারার ৫ উপধারায় অভিযুক্ত মহম্মদ মুসা, হাকিম সিকদার, আসরাফ আলি এবং মহম্মদ নিয়ামের মামলার এক দফা শুনানী শুক্রবার প্রেসিডেন্সী ম্যাজিস্ট্রেট শ্রী পি কে আচার্যের আদালতে হইয়া গিয়াছে। অভিযোগের বিবরণে প্রকাশ, পাকিস্তানে হাঙ্গামা সম্পর্কে প্রতিবাদ জানাইবার উদ্দেশ্যে ছাত্রদের একটি বড় মিছিল পাকিস্তান হাই কমিশনের অফিসের দিকে যাইতেছিল। ছাত্র মিছিলটি পূর্বোক্ত স্থানে গেলে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা সকলকে সেখানে সমবেত হইবার জন্য ধ্বনি দেয়। ফলে বহু লোক জড় হইলে আসামীরা তাঁহাদের সঙ্গে মিলিয়া মিছিলটি আক্রমণ করিয়া ঐ অঞ্চলে ভীতি ও শঙ্কার সৃষ্টি করে। সংবাদ পাইয়া স্থানীয় পুলিস দ্রুত সেখানে গিয়া জনতা ছত্রভঙ্গ করিয়া আসামীদের গ্রেপ্তার করে এবং অবস্থা আয়ত্তে আনে।

রবিবার, ১০ জ্যৈষ্ঠ, ১৩৭১ (৩ জ্যৈষ্ঠ ১৮৮৬) SUNDAY, MAY 24, 1964

জলে ডুবিয়া মৃত্যু: সুপ্রকাশ ঘোষ নামে ২২ বছরের এক যুবক শনিবার সকালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে একটি পুকুরে ডুবিয়া মারা যায়। জানা যায়, সুপ্রকাশ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়েরই দ্বিতীয় বার্ষিক শ্রেণীর ছাত্র ছিল। ঐদিন সকালে সে তাহার আর তিনজন বন্ধুর সহিত পুকুরে স্নান করিতে যায় এবং সাঁতার না জানার জন্যই তাহার এই বিপত্তি ঘটে। সুপ্রকাশকে জলে ডুবিয়া যাইতে দেখিয়া তাহার বন্ধুরা তাহাকে জল হইতে উদ্ধারের ব্যর্থ চেষ্টার পর দমকল বাহিনীকে খবর দেয়। দমকল কর্মীরা সুপ্রকাশকে জল হইতে উদ্ধার করিয়া সকাল ৬টা ৪০ মিঃ সময়ে বাঙ্গুর হাসপাতালে পাঠায়। হাসপাতালের পথেই তাহার মৃত্যু ঘটে।

মঙ্গলবার, ১২ জ্যৈষ্ঠ, ১৩৭১ (৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৮৮৬ শক) TUESDAY, MAY 26, 1964

৬৫তম নজরুল জন্ম-জয়ন্তীতে শত শত ভক্তের শ্রদ্ধা নিবেদন: ৬৫তম জন্মদিনে বিদ্রেহী নজরুল এবার আরও শান্ত। আরও ধীর— আরও স্বাভাবিক। জন্মদিনের শ্রদ্ধা জানাইবার জন্য ১১ই জ্যৈষ্ঠ যে শত শত নরনারী কবির ফ্ল্যাটে উপস্থিত হইয়াছিলেন, তাঁহারা দেখিয়াছেন, কবির নীরব অগ্নিবীণা যেন ক্ষণমুহূর্তের জন্য আবার ঝঙ্কার তুলিয়াছে। এবারে তিনি জন্মদিনের উপচার দূরে ঠেলিয়া দেন নাই। দু’ হাত বাড়াইয়া গ্রহণ করিয়াছেন। ভক্তের হাত হইতে লইয়াছেন রজনী গন্ধার স্তবক। সেগুলি যত্নভরে এক পাশে সরাইয়া রাখিয়াছেন। দু’ একবার গান শুনিয়া আপন মনে বলিয়া উঠিয়াছেন— ‘গান’ ‘গান’। গায়ককে আঙুল দিয়া হারমোনিয়াম দেখাইয়া দিয়াছেন। বিকালে শ্রীসিদ্ধেশ্বর মুখোপাধ্যায় গাহিতেছিলেন ‘কেমনে রাখি আঁখি বারি চাপিয়া’। তন্ময় হইয়া কবি শুনিতেছিলেন। দু’ একবার অধৈর্যভাবে মাথা নাড়িতেছিলেন। শূণ্য আয়ত চোখ দুটি জলে ভরিয়া উঠিতেছিল।


জন্মদিনে নজরুলগীতির আলয়ে আত্মহারা কবি নজরুল ইসলাম। —আনন্দ চিত্র।

সকাল হইতে ভক্তদের আনাগোনার বিরাম ছিল না। কৃষ্টোফার রোডে সি আই টি’র ছোট্ট ঘর দুখানিতে জনস্রোত জোয়ারের জলের মত উপছাইয়া পড়িয়াছে। বিকালে মুখ্যমন্ত্রী শ্রীপ্রফুল্ল সেনের আসার কথা ছিল। আসিতে পারেন নাই। কবি পুত্র সব্যসাচী ইসলামকে এজন্য দুঃখ্ প্রকাশ করিয়া চিঠি দিয়াছেন।

রবিবার, ১৭ জ্যৈষ্ঠ, ১৩৭১ (১০ জ্যৈষ্ঠ, ১৮৮৬ শক) SUNDAY, MAY 31, 1964

রণমূর্তি: এক হাতে মুগুর, আর একহাতে ধারাল ব’টি, পরন্তু রণমূর্তি। উত্তর কলিকাতার কাশীপুর অঞ্চলের একটি ফ্ল্যাট বাড়িতে এক উন্মাদের আবির্ভাবে দারুণ আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। তাহাকে নিরস্ত করিতে গিয়া আটজন অল্পবিস্তর জখমও হইয়াছেন। পুলিশ তাহাকে গ্রেপ্তার করার পর সকলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন। কাশীপুর থানার দুইজন পুলিশ অফিসার শ্রীপ্রণব চৌধুরী ও শ্রীসুধাংশু বসু তত্পরতার সহিত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হইয়া তাহাকে গ্রেপ্তার করেন। নহিলে হাঙ্গামা আরও অনেক দূর গড়াইত। পুলিশের পক্ষ হইতে জানান হয়, ধ্বস্তাধ্বস্তির ফলে উন্মাদ লোকটিও আহত হইয়াছে। পরে তাহাকে স্থানীয় নর্থ সুবার্বণ হাসপাতালে ভর্তি করা হইয়াছে।


মা, আমায় ঘোরাবি কত?

সোমবার ১৮ জ্যৈষ্ঠ, ১৩৭১ (১১ জ্যৈষ্ঠ, ১৮৮৬ শক) MONDAY, JUNE 1, 1964

পরলোকে যোগেন্দ্র গুপ্ত: বাঙ্গলার খ্যাতনামা সাহিত্যিক শিশুভারতীর স্রষ্টা শ্রীযোগেন্দ্রনাথ গুপ্ত রবিবার বেলা ১ ঘটিকার চারু এভিনিউস্থিত তাঁহার কন্যার বাসভহনে পরলোকগমন করেন। সন্ধ্যায় কেওড়াতলা শ্মশানে তাঁহার অন্তোষ্টিক্রিয়াসম্পন্ন হইয়াছিল। মৃত্যুকালে তাঁহার বয়স ৮২ বত্সর হইয়াছিল। তাঁহার মৃত্যুসংবাদ পাইয়া তাহার বহু সাহিত্যিক বন্ধু এবং গুণমুগ্ধ নাগরিক উক্ত বাসভবনে বা শ্মশানে গিয়া বাংলার এই কৃতী সাহিত্যিকের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। ঢাকা জেলার বিক্রমপুরের সন্তান শ্রী গুপ্ত দুই খন্ডে বিক্রমপুরের ইতিহাস লিখিয়া সর্বপ্রথম সাহিত্য জগতে স্বীকৃতি লাভ করেন। এই ঐতিহাসিক তথ্যপূর্ণ গ্রন্থ বাঙ্গলার ইতিহাসের অঙ্গ হিসাবে সুধীসমাজ বিশেষ সমাদর লাভ করে।

বুধবার, ২৭ জ্যৈষ্ঠ ১৩৭১ (২০ জ্যৈষ্ঠ, ১৮৮৬ শক) WEDNESDAY, JUNE 10, 1964

অশ্রুজলে মহানায়কের স্মৃতিতর্পণ: লক্ষ লক্ষ কলিকাতাবাসী মঙ্গলবার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে সারা রাত্রি ধরিয়া তাঁহাদের প্রিয়.তম নেতা নেহরুজীর অমর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। উপচার— শুধু চোখের জল, ফুল আর অন্তরের রক্তরাঙা আবেগ। ঐতিহাসিক ময়দান আজ পূণ্যতীর্থে পরিণত। সুদুর দিল্লি হইতে যাহার যাত্রা সুরু কলিকাতা ময়দানে তাহার সামরিক বিরতি। আজ সকালে বারাকপুরে গান্ধীঘাটে পূতসলিলা সঙ্গবদ্ধে নেহরুর সেই চিতাভস্ম বিসর্জিত হইতেছে। তাহারই আগে ব্রিগেড প্যারেড ময়দানে একটি সুসজ্জিত মঞ্চে ঐ পবিত্র চিতাভস্মাধার রাখা হয়। মঙ্গলবার ফুলে ফুলে তাহা ভরিয়া যায়— শ্বেতপদ্ম, রজনীগন্ধা এবং লাল গোলাপে।

বৃহস্পতিবার, ২৮ জ্যৈষ্ঠ ১৩৭১ (২১ জ্যৈষ্ঠ, ১৮৮৬ শক) THURSDAY, JUNE 11, 1964

কলিকাতায় ভস্ম মিছিলের যাত্রাপথে শোচনীয় দুর্ঘটনা: বুধবার সকাল ৬টা ২০ মিনিটে চিত্তরঞ্জন এভেন্যু ও বীডন স্ট্রীটের সংযোগস্থলে একটি জলবাহী লরীর ধাক্কায় চারজন নিহত এবং পাঁচজন আহত হয়। আহতদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। নিহত চারজনের মধ্যে তিনজনের বয়স ছিল ১০ এবং অপরজনের ৩। ইহাদের মধ্যে মুন্নি গুপ্তা (১০) এবং ছটিললাল গুপ্তা (৩) হাসপাতালে লইয়া যাওয়ার পথে এবং বাকী দুইজন- নিমাইচরণ রুদ্র (১০) এবং ভোলানাথ দাস (১০) হাসপাতালে ভর্তি হইবার অল্পক্ষণ পরেই মারা যায়। কান্তা(৪), গৌতমলাল গুপ্তা (১১) এবং ওমপ্রকাশ (৭) বর্তমানে গুরুতররুপে আহত অবস্থায় মেডিকেল কলেজে চিকিত্সাধীন আছে। অপর দুই ব্যক্তিকে প্রাথমিক চিকিত্সার পর ছাড়িয়া দেওয়া হয়। ঐদিন সকাল হইতেই নেহেরুর ভস্মাধারবাহী শোকমিছিলটি দেখিবার জন্য চিত্তরঞ্জন এভেন্যুর দুইধারে জন-সমাবেশ হইতে থাকে। দুর্ঘটনায় নিহত এবং আহতরাও বীডন স্ট্রীটের মোড়ে রেলিংএর উপরে বসিয়াছিল। সেই সময় একটি সেবা প্রতিষ্ঠানের জলের গাড়ী হঠাত্ আসিয়া রেলিংটিতে প্রচন্ডবেগে ধাক্কা মারে।


চিনির দাম জানেন তো? হিমসাগর একটু টক্ হবে না কেন?

মঙ্গলবার, ২ আষাঢ় ১৩৭১ (২৬ জ্যৈষ্ঠ, ১৮৮৬ শক) TUESDAY JUNE 16, 1964

আগামী সোমবার হইতে সরবরাহের সিদ্ধান্ত: সোমবার পশ্চিমবঙ্গ মন্ত্রিসভার বৈঠকে বৃহত্তর কলিকাতার ৬০ লক্ষ বাসিন্দাকে নানা মূল্যের দোকান হইতে চাল ও গম সরবরাহের পুরাপুরি দায়িত্ব গ্রহণের সিদ্ধান্ত হইয়াছে। প্রাপ্তবয়স্কদের প্রত্যেককে সপ্তাহে ১ কে জি চাল ও ১ কে জি গম ও আট বত্সর পর্যন্ত বয়সের ছেলেমেয়েদের প্রত্যেককে আধ কে জি চাল ও আধ কে জি গম দেওয়া হইবে। ২২শে জুন, সোমবার হইতে এই ব্যবস্থা চালু হইতেছে। মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর মুখ্যমন্ত্রী শ্রীপ্রফুল্লচন্দ্র সেন এই সংবাদ জানান। বৃহত্তর কলিকাতার এগারো হাজারের মত ন্যায্যমূল্যের দোকান আছে। এখন পর্যন্ত এই দোকানগুলি হইতে মাত্র তের-চৌদ্দ লক্ষ লোক চাল ও গম পাইতেছে। এ সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রীর একটি বেতার কথিকাও সোমবার রাত্রে আকাশবাণী হইতে প্রচারিত হয়।

বুধবার, ৩ আষাঢ় ১৩৭১ (২৭ জ্যৈষ্ঠ, ১৮৮৬ শক) WEDNESDAY JUNE 17, 1964

কলিকাতায় একলক্ষ ছেলে-মেয়ের প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ নাই: কলিকাতার ছয় হইতে বার বছরের প্রায় তিন লাখ ছেলেমেয়ের মধ্যে প্রায় এক লাখের কোন প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ নাই। ঐ বয়সের ১ লাখ ৯৭ হাজারের মত ছেলেমেয়ে বিভিন্ন অনুমোদিত বিদ্যালয়ে যায়। তাহাদের মধ্যে মাত্র ৫৪ হাজারের পৌর বিদ্যালয়গুলিতে অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ আছে। নগরীর অন্তত এক লাখ ছেলেমেয়ের প্রাথমিক শিক্ষার আশু ব্যবস্থা হওয়া প্রয়োজন বলিয়া শিক্ষাব্রতিরা মনে করেন। কলিকাতা কর্পোরেশন অন্তত দেড় লাখ ছাত্রছাত্রীর অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার এক পরিকল্পনা লইয়া দীর্ঘ দশ বছর ধরিয়া রাজ্য সরকারের সহিত আলোচনা করিতেছেন, কিন্তু এখনও কোন সিদ্ধান্ত হয় নাই। এদিকে কলিকাতা কর্পোরেশন ১৯৫৯ সাল হইতে তাহাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সম্প্রসারণমূলক কাজ বন্ধ করিয়া দিয়াছেন। কোন নুতন প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলেন নাই।

বৃহস্পতিবার, ৪ আষাঢ় ১৩৭১ (২৮ জ্যৈষ্ঠ, ১৮৮৬ শক) THURSDAY JUNE 18, 1964

রাইটার্স বিল্ডিং-এর আয়ু ফুরাইল?: রাইটার্স বিলিন্ডিং ভাঙ্গিয়া সেই জায়গায় আকাশ-ছোঁয়া ইমারত তৈরীর প্রস্তাব বিবেচনা করা হইতেছে বলিয়া নির্ভরযোগ্যসুত্রে জানা গিয়াছে। কারণ, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের খাস দপ্ততরে স্থানাভাব। প্রস্তাবটি উঠিয়াছে বেসরকারী তরফে। প্রকাশ, মুখ্যমন্ত্রী শ্রীপ্রফুল্লচন্দ্র সেন তাহা খুটিনাটি বিবেচনার জন্য রাজ্যের অর্থদপ্তরকে নির্দেশ দিয়াছেন। প্রস্তাব অনুসারে ক্ষেপে ক্ষেপে তিনবারে রাইটার্স বিল্ডিং ভাঙ্গিয়া নূতন ইমারত নির্মাণের কছা হইয়াছে।

ওল্ড কোর্ট হাউস স্ট্রীটে ব্যাঙ্কের জন্য দশতলা বাড়ী তৈরী হইতেছে। সেই বাড়ীর কাল শেষ হইলে রাইটার্ বিল্ডিংয়ের অফিসগুলির তিন ভাগের এক ভাগ সেখানে স্থানান্তরের প্রস্তাব দেওয়া হইয়াছে। বলা হইয়াছে, সেই অবসরে রাইটার্স বিল্ডিংয়ের তিন-ভাগের এক ভাগ ভাঙ্গিয়া নূতন ইমারতের একাংশ নির্মাণ করা যাইতে পারে। এইভাবে আরও দুই ক্ষেপে বাকী অংশও দিউ শতাব্দীর ইতিহাস।

শুক্রবার, ৫ আষাঢ় ১৩৭১ (২৯ জ্যৈষ্ঠ, ১৮৮৬ শক) FRIDAY JUNE 19, 1964

চার হাজার খণ্ড সাধারণ্যে বিক্রয়ের ব্যবস্থা: চার খণ্ডে ‘ভারতকোষ’ নামে বাংলা ভাষায় রচিত আধুনিক কোষ-গ্রন্থটি প্রকাশিত হইলে চার হাজার প্রাক প্রকাশন গ্রাহক ছাড়া জনসাধারণও চার হাজার ‘সেট’ গ্রন্থ কিনিবার সুযোগ পাইবেন। তবে প্রথমোক্তদের জন্য পুরো সেটের মূল্য ৪০ টাকা, অন্যান্যদের জন্য ৮০ টাকা। প্রকাশক বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের এক মুখপাত্র বলেন, নানা কারণে দেরী হইয়া গেলেও ভারতকোষের প্রথম খণ্ডটি আগামী সেপ্টেম্বর মাস নাগাদ প্রকাশিত হইবার সম্ভাবনা আছে। প্রায় সাতশত পৃষ্ঠার এই খণ্ডটিতে ‘অ’ হইতে ‘ঔ’ পর্যন্ত স্বরবর্ণের আদ্যাক্ষর যুক্ত বিভিন্ন বিষয়ে সংক্ষিপ্ত তথ্য নিবন্ধাদি থাকিবে। ইতিমধ্যেই ৪৫৬ পৃষ্ঠা ছাপা হইয়া গিয়াছে। অন্যান্য খণ্ডের জন্য তথ্যাদি সংগৃহিত হইতেছে। চারখণ্ডে মোট প্রায় ৩২০০ পৃষ্ঠা থাকিবে।


এ বাড়ীতে নিশ্চয়ই ধান আছে।

শুক্রবার, ৫ আষাঢ় ১৩৭১ (২৯ জ্যৈষ্ঠ, ১৮৮৬ শক) FRIDAY JUNE 19, 1964

রকবাজদের বিরুদ্ধে পুলিশী অভিযান: রাজপথের রকবাজ রোমিওদের বিরুদ্ধে এন্টালি থানা এলাকার ব্যাপক অভিযান সুরু হইয়াছে। অভিযানের ফল শুভ। দিন-দুয়েকের মধ্যে প্রায় ২৫ জন রকবাজ পুলিশের হাতে ধরা পড়িয়া ‘মুচলেকা’ দিয়াছে। মুচলেকাগুলি বিচিত্র। একজন রকবাজ লিখিতেছে: আমি অমুক রাস্তার ধারে বসিয়া অন্যান্য ছেলেদের সহিত মেয়েদের স্কুলের সময় আড্ডা মারিতেছিলাম। ইহার জন্য আমাকে থানায় আসিতে হইয়াছে। এজন্য আমি অনুতপ্ত ও দুঃখিত। আমি প্রতিজ্ঞা করিতেছি, ভবিষ্যতে ঐরূপ আচরণ করিব না। সুসভ্য নাগরিক হিসাবে বসবাস করিব। এবারের মত আমাকে ক্ষমা করা হউক। একজন অভিভাবক তাঁহার ছেলের হইয়া মুচলেকা দিয়াছেন। আমি আপনার কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হইতেছি, আমার পুত্র শ্রীমান অমুক কখনও কোন অসত্ কাজে লিপ্ত হইবে না। যদি কখনও লিপ্ত হয় তাহা হইলে—ইত্যাদি ইত্যাদি। এন্টালি থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার বলিলেন: রকবাজ রোমিওদের অধিকাংশই মধ্যবিত্ত ও শিক্ষিত পরিবারের সন্তান। পুলিশী অভিযানের ফল শুভই হইতেছে। কিন্তু অভিভাবকেরা যদি সন্তানদের বিপথে যাইতে দেন, তাহা হইলে পুলিশ একা কি করিবে? রকবাজদের প্রিয় পোশাকের নাম ‘নর্দমা প্যান্ট’—ড্রেন পাইপেরবঙ্গানুবাদ, কারিবিয়ান শার্ট, কেড়ে আঙ্গুলি বেল্ট আর পয়েন্টেড সু।

শুক্রবার, ৫ আষাঢ় ১৩৭১ (২৯ জ্যৈষ্ঠ, ১৮৮৬ শক) FRIDAY JUNE 19, 1964

বর্ষার আগমনী: বৃহস্পতিবারও কলিকাতায় বর্ষার ধারাবর্ষণ শুরু হয় নাই। অবশ্য মাঝে মাঝে এখানে ওখানে পশলা বৃষ্টি হইয়া গিয়াছে। পূর্বাভাস ছিল এইদিনই মহানগরীতে বর্ষার শুভাগমন হইবে। কিন্তু আবহাওয়া অপিসের মতে ঐ পূর্বাভাস মোটের উপর মিলিয়াছে। তাঁহাদের বক্তব্য: মৌসুমী বায়ু কলিকাতা ও গাঙ্গেয় বাঙলার উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে আগ্রসর হইয়াছে। ফলে এই সকল এলাকায় বৃষ্টি মোটামুটি ব্যাপক হইয়াছে, কোথাও কোথাও বেশ নিবিড় ধারায়। ঐদিন সকালে শ্রীনিকেতন (বীরভূম) ৮.২৪ সেন্টিমিটার এবং বহরমপুরে (মুর্শিদাবাদ) ৪.০৪ সেন্টিমিটার পরিমাণ বৃষ্টি হয়।

শনিবার, ৬ আষাঢ়, ১৩৭১ (৩০ জৈষ্ঠ্য, ১৮৮৬ শক) SATURDAY, JUNE 20, 1964

পাঁচ রাউণ্ড গুলীবর্ষণ: সাতজন গ্রেপ্তার: বুধবার রাত্রে খিদিরপুর রিমাউন্ট রোডে একদল সশস্ত্র দুর্বৃত্ত এবং পোর্ট পুলিশের এক সংঘর্ষকালে পুলিশ আত্মরক্ষার্থ পাঁচ রাউন্ড গুলী চালায়। কেহ হতাহত হওয়ার খবর পাওয়া যায় নাই। পুলিশ পরে ঘটনাস্থলের নিকটে একটি বস্তী হইতে সাত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। প্রকাশ, রাত প্রায় সাড়ে দশটায় বন্দরে প্রহরারত দুইজন কনস্টেবল দেখিতে পায় যে তিন-চারজন লোক দুর্গাপুর ইয়ার্ডের দিক হইতে একটি বস্তা কাঁধে করিয়া লইয়া যাইতেছে। এই বস্তায় চিনি ছিল বলিয়া যানা যায়। কনস্টেবল তাহাদের চ্যালেঞ্জ করিলে তাহারা প্রাচীর টপকাইয়া পোর্টকমিশনার্সের বস্তির ভিতর দিয়া পলাইয়া যায়। কিছুক্ষণ পর ২০-২৫ লোক লাঠি, ছোরা, তরোয়াল ইত্যাদি অস্ত্রসজ্জিত হইয়া ঐ দুইজন কনস্টেবলের দিকে অগ্রসর হয় এবং তাহাদের আটক চিনির বস্তা ফেরত দিতে বলে। অন্যথায়, তাহাদের আক্রমণ করা হইবে বলিয়া ভয় দেখানো হয়। একজন কনস্টেবল থানায় খবর দিবার জন্য দৌড়াইয়া যায়। ইতিমধ্যে ঐ দুর্বৃত্তদল অপর কনস্টেবলের দিকে অগ্রসর হয় এবং ইটপাটকেল ছুঁড়িতে সুরু করে। তখন উক্ত কনস্টেবল পাঁচ রাউন্ড গুলী চালায়। পরে নিকটবর্তী একটি বস্তিতে হানা দিয়া পুলিশ সাতজনকে গ্রেপ্তার করে।

শনিবার, ৬ আষাঢ়, ১৩৭১ (৩০ জৈষ্ঠ্য, ১৮৮৬ শক) SATURDAY, JUNE 20, 1964

ওয়াগানের উপর হেলিকপ্টার: আজ (শনিবার) সকালে হাওড়া স্টেশনের গুডস ইয়ার্ডে একটি হেলিকপ্টার সরাসরি ওয়াগনের উপর অবতরণ করিবে বলিয়া জানা গিয়াছে। আকাশে উড়িয়া সরাসরি ওয়াগনের উপর হেলিকপ্টার অবতরণের সংবাদ, এইটিই ভারতে প্রথম বলিয়া অনুমিত হয়। বেহালা হইতে এই হেলিকপ্টারটি সকালে ছাড়িবে এবং বেলা ৮টা হইতে ১১টার মধ্যে হাওড়া স্টেশনের গুডস ইয়ার্ডে সরাসরি একটি মার্কিন বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানের এই হেলিকপ্টারটি ওয়াগনে করিয়া হায়দরাবাদে লইয়া যাওয়া হইবে। রেল ইয়ার্ডে নিরাপত্তা ব্যবস্থা হিসাবে উহা অবতরণের সময় সকলের চলাচল নিষিদ্ধ করা হইয়াছে এবং আরও অন্যান্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা অবলম্বন করা হইয়াছে বলিয়া জানা গিয়াছে।

শনিবার, ৬ আষাঢ়, ১৩৭১ (৩০ জৈষ্ঠ্য, ১৮৮৬ শক) SATURDAY, JUNE 20, 1964

এসপ্লানেড হইতে পার্ক স্ট্রীট পর্যন্ত রাস্তার নামকরণ: এসপ্ল্যানেড হইতে পার্ক স্ট্রীট পর্যন্ত চৌরঙ্গী রোডের নাম এখন হইতে জওহরলাল নেহরু রোড। পার্ক স্ট্রীট হইতে এলগিন রোড পর্যন্ত রাস্তাটুকু চৌরঙ্গী রোডই থাকিবে। শুক্রবার বহু বিতর্কের পর কর্পোরেশনের সভায় এই প্রস্তাবটি গৃহীত হইয়াছে। এইদিন বাদুড়বাগান স্ট্রীটের নাম পরিবর্তন করিয়া ‘বিপ্লবী পুলিন দাস’ স্ট্রীট রাখিবার প্রস্তাবও গৃহীত হয়। চৌরঙ্গী রোডের কিছু অংশের নাম পাল্টাইয়া জওহরলাল নেহরু রোড রাখিবার প্রস্তাবটি আনেন শ্রীমিহিরলাল গাঙ্গুলী। বিরোধী পক্ষের একাধিক কাউন্সিলর ও নাথ সম্প্রদায়ের ধর্মগুরু চেরাগ বাবার স্মৃতি জড়িত’ এবং ‘কলিকাতার অস্তিত্বের সঙ্গে জড়িত’ চৌরঙ্গী রোডের নাম পাল্টাইবার বিরোধিতা করেন। তাঁহারা বলেন, এই একই কারণে রবীন্দ্রনাথের নামে চৌরঙ্গী রোডের নামকরণ করার এক প্রস্তাব আগেই পরিত্যক্ত হইয়াছিল। অনেক সদস্য এই কারণে আপত্তি জানান যে, শ্রী নেহরু ছিলেন গরীব দুঃখী সাধারণ মানুষের বন্ধু। তবে কেন চৌরঙ্গীর মত ধনী এলাকার নামের সহিত তাঁহার নাম জড়ান হইতেছে। অনেকে ব্যারাকপুর ট্রাঙ্ক রোড ও জাতীয় সড়কের নাম শ্রী নেহরুর নামে রাখার দাবি জানান। বিতর্কের পর শ্রী গাঙ্গুলীর প্রস্তাবটি ২৮-১০ ভোটে গৃহীত হয়। শ্রী নেহরুর স্মৃতিরক্ষাকল্পে কলিকাতায় একটি জাতীয় স্মারক ভবন গড়িয়া তোলার জন্য ডঃ কে পি ঘোষের একটি প্রস্তাবও এইদিন গৃহীত হয়।


ফাঁকতালে বিয়ে করে ফেললাম দাদা, লোক খাওয়াবার ঝামেলা নেই

শনিবার, ৬ আষাঢ়, ১৩৭১ (৩০ জৈষ্ঠ্য, ১৮৮৬ শক) SATURDAY, JUNE 20, 1964

পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে গোপন রিপোর্ট: কলিকাতা পুলিশের আর একজন এসিট্যান্ট কমিশনার কর্তৃক একটি বিরাট অট্টালিকা নির্মাণ সংক্রান্ত বিভিন্ন অভিযোগের তদন্ত করিয়া দুর্নীতি দমন দপ্তর একটি গোপন রিপোর্ট স্বরাষ্ট্র দপ্তরে পেশ করিয়াছেন। দক্ষিণ কলকাতার একটি অতি অভিজাত পল্লীতে উক্ত অফিসার এই অট্টালিকা নির্মাণের টাকা কোথায় পাইলেন সেই বিষয়ে তদন্ত করা হইয়াছিল। তদন্তের রিপোর্টটি রাজ্য সরকার বিচার বিভাগীয় একজন অফিসারের বিবেচনার জন্য পাঠাইয়া ছিলেন। প্রকাশ, উক্ত অফিসার রিপোর্ট বিবেচনার পর মন্তব্য করিয়াছেন, যেহেতু এই বাড়ী নির্মাণের কিছু কিছু বিল এখনও শোধ করা হয় নাই, সেইজন্য মোট কত টাকা ব্যয় করা হইয়াছে তাহা নির্দিষ্ট বোঝা যাইতেছে না। যাহা হউক, এসিস্ট্যান্ট কমিশনারটি ইহার পর নিয়ম অনুযায়ী যখন তাঁহার সম্পত্তির হিসাব সরকারের নিকট দাখিল করিবেন তখন বিষয়টির উপর লক্ষ্য রাখিতে হইবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

looking back firey dekha 1964 may june news
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE