বিদ্যুৎ কর্মী নন। অথচ বৈদ্যুতিক চলমান সিঁড়ি রয়েছে তাঁরই দেখভালে। পেশাদারী দক্ষতাহীন ব্যক্তির হাতে এমন দায়িত্ব দেওয়ারই মাসুল গুনেছে গিরিশ পার্ক মেট্রো স্টেশনের চলমান সিঁড়ি। বৃহস্পতিবারের দুর্ঘটনার তদন্তের পরে এমনটাই বলছেন মেট্রোকর্তাদের একাংশ। বিদ্যুৎ পর্ষদের নিয়মে বাণিজ্যিক ভাবে বৈদ্যুতিক যন্ত্র (লিফট, চলমান সিঁড়ি বা রোপওয়ে) চালাতে হলে লাইসেন্সপ্রাপ্ত বিদ্যুৎকর্মী রাখতে হয়। বছর তিনেক আগে মেট্রোর চলমান সিঁড়ি চালানোর পরিবর্তিত নীতিতে সেই প্রাথমিক নিয়ম ভাঙা হয়েছে বলেই মনে করছেন ওই কর্তাদের একাংশ।
ওই রাতে স্টেশনে যাত্রী-বোঝাই একটি চলমান সিঁড়ি আচমকা উল্টো দিকে চলতে থাকে। পড়ে গিয়ে জখম হন ন’জন যাত্রী। ঘটনার তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গড়ে দেন মেট্রোর জেনারেল ম্যানেজার এ কে কপূর।
মেট্রোকর্তাদের বক্তব্য, সিঁড়িটি উল্টো পথে চলার অন্যতম কারণ তা চালানো ও দেখভালের ভার মেট্রোর বিদ্যুৎ দফতরের থেকে অন্য দফতরকে (ট্রাফিক) দেওয়া। এখন যাঁরা সিঁড়িগুলি চালান, তাঁরা ট্রেন চালানো এবং কিছু প্রশাসনিক ও বাণিজ্যিক কাজ করেন। বিদ্যুৎকর্মী না হওয়ায় তাঁরা বুঝতেই পারেননি সিঁড়িটি খারাপ হয়েছে।
মেট্রোর এক কর্তার কথায়, দিনের শুরুতে চাবি দিয়ে সিঁড়ি চালানো ও রাতে বন্ধ করা ছাড়া আর কিছু জানেন না ভারপ্রাপ্ত কর্মীরা। জানার কথাও নয়। বিদ্যুৎ দফতরের কর্মী না থাকায় জোর করে এই দায়িত্ব স্টেশনের ট্রাফিক কর্মীদের উপরে চাপানো হয়েছে দাবি করে মেট্রো মেন্স ইউনিয়নের প্রাক্তন সম্পাদক দিলীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘চলমান সিঁড়ি সম্পর্কে ওঁদের স্বচ্ছ ধারণা না থাকারই কথা। তাই ওই সিঁড়ি আদৌ ঠিক চলছে কি না, তা-ও তাঁরা বলতে পারবেন না।’’
রেলের নিয়মে প্রত্যেক স্টেশনে চলমান সিঁড়ি যাত্রী নিয়ে ওঠানামার সময়ে এক জন বিদ্যুৎ কর্মী থাকা বাধ্যতামূলক। যাতে দুর্ঘটনায় তিনি দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারেন। যাত্রীদের অভিযোগ, রবিবার বা ছুটির দিনে মেট্রো চলাচল শুরুর পরেও অনেক স্টেশনে চলমান সিঁড়ি বন্ধ থাকে। টিকিট কাউন্টারে গিয়ে বললে সেখানকার কর্মী চাবি এনে সেটি চালান। তার পরে সারা দিন আপন খেয়ালেই চলে সিঁড়ি। জবাবে কর্তারা বলছেন, প্রতিটি চলমান সিঁড়ির জন্য এক জন কর্মী রাখা সম্ভব নয়।
মেট্রো সূত্রে খবর, চলমান সিঁড়ির মোটরের কাছে একটি লোহার প্লেট বেল্টের মাধ্যমে সিঁড়িগুলিকে টেনে নিয়ে চলে। তদন্তকারীদের অনুমান, গিরিশ পার্কের সিঁড়ির প্লেটের নাটবল্টু ঢিলে হয়ে বিপত্তি ঘটেছিল। মেট্রোর জনসংযোগ অফিসার ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় শুক্রবার বলেন, ‘‘যে সংস্থা চলন্ত সিঁড়িগুলি মেরামত করে, তাদের একটি দল রাতেই ঘটনাস্থলে আসেন। বিষয়টি আরও ভাল ভাবে দেখতে রবিবার মুম্বই থেকে আর একটি দল আসছে। তার পরে চূড়ান্ত রিপোর্ট তৈরি হবে।’’
মেট্রোর মোট ৭৫টি চলমান সিঁড়ির প্রত্যেকটি বছরে এক বার পুরো ও মাসে এক বার সাময়িক মেরামত করা হয়। ৩০ নভেম্বর গিরিশ পার্কের সিঁড়িটি সাময়িক মেরামত হয়েছে বলে দাবি ইন্দ্রাণীর। তবুও কেন বিপত্তি, খতিয়ে দেখছে তদন্ত কমিটি। তবে এই ঘটনার পরে চলমান সিঁড়ি দেখভালে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান ইন্দ্রাণী। গাফিলতি না মানলেও মেট্রোকর্তারাও মানছেন, চলমান সিঁড়িগুলিতে পেশাদার পর্যবেক্ষণ জরুরি, বিশেষত যেখানে ক্রমেই যাত্রীর ভিড় বাড়ছে।
যাত্রীদের দাবি, কখনও কোনও কর্মীকে ওই সিঁড়িগুলি কেমন চলছে, দেখতে দেখা যায়নি। কোনও চলমান সিঁড়ি খারাপ হলে তা সারাতেও ন্যূনতম ১০-১৫ দিন লাগে। চাঁদনি চকে একটি চলমান সিঁড়িই যেমন সাত দিন হল খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy