Advertisement
E-Paper

স্কুলেই যৌন নির্যাতন, দুই শিক্ষককে চেনাল ছাত্রী, গ্রেফতার

দক্ষিণ শহরতলির রানিকুঠির কাছে বেসরকারি স্কুল জিডি বিড়লা সেন্টার ফর এডুকেশনে ঘটনাটি ঘটে বৃহস্পতিবার। ওই রাতেই পুলিশের কাছে শিশুটির পরিবার তাদের মেয়ের উপরে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ করে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:৫৭
ক্ষোভে ফেটে পড়লেন এক অভিভাবক।

ক্ষোভে ফেটে পড়লেন এক অভিভাবক।

স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পরে মেয়ের পোশাক ছাড়াতে গিয়ে মা দেখেন, ইউনিফর্মে রক্তের দাগ। মাত্র চার বছর বয়স মেয়ের, এ কীসের রক্ত? ভয়ার্ত মুখে শিশুটি জানায়, তার গোপনাঙ্গে যন্ত্রণা হচ্ছে। তড়িঘড়ি তাকে পারিবারিক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান বাবা-মা। চিকিৎসক পরীক্ষা করে জানান, যৌন নির্যাতনের শিকার ওই একরত্তি মেয়েটি।

দক্ষিণ শহরতলির রানিকুঠির কাছে বেসরকারি স্কুল জিডি বিড়লা সেন্টার ফর এডুকেশনে ঘটনাটি ঘটে বৃহস্পতিবার। ওই রাতেই পুলিশের কাছে শিশুটির পরিবার তাদের মেয়ের উপরে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ করে। বাড়ি থেকে বেরোনোর আগে পর্যন্ত শিশুটি সুস্থ ছিল, বাড়ি ফেরে পোশাকে রক্তের দাগ নিয়ে— স্বাভাবিক ভাবেই পুলিশ অনুমান করে, যা কিছু ঘটেছে, স্কুলেই। তাই শুক্রবার সকালে স্কুলের জনা দশেক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীকে যাদবপুর থানায় ডেকে পাঠানো হয়। তাঁদের সঙ্গে কথা বলার ফাঁকেই এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশুটিকে পাঁচ জনের ছবি দেখান পুলিশকর্তারা। সেখানেই দু’জনকে চিহ্নিত করে শিশুটি। তার ভিত্তিতেই শুক্রবার রাতে ‘পকসো’ আইনে গ্রেফতার করা হয় শারীরশিক্ষার দুই শিক্ষক অভিষেক রায় এবং মহম্মদ মফিসউদ্দিনকে।

এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘শিশুরা সরল মনে সত্যি কথা বলে, এটাই ধরে নেওয়া হয়। তাই এ সব ক্ষেত্রে যাচাই করার প্রয়োজন হয় না।’’ মুখ্যমন্ত্রী নবান্ন থেকে বেরোনোর সময়ে বলেন, ‘‘পুলিশ যা ব্যবস্থা নেওয়ার নিয়েছে।’’

অভিভাবকদের প্রশ্ন

• কেন সিসিটিভি ক্যামেরা নেই

• কেন পুরুষ শিক্ষক থাকবেন

• স্কুলের মধ্যে পার্কিং কেন

• স্কুলের পুরনো বাড়িতে ছাত্র-ছাত্রীদের কেন একটি বাথরুম

• ছোট মেয়েরা বাথরুমে গেলে কেন আয়া থাকেন না

• ইউনিফর্মে রক্তের দাগ দেখেও কেন চুপ থাকলেন কর্তৃপক্ষ

• অভিযুক্তদের কেন আড়াল করার চেষ্টা স্কুল-কর্তৃপক্ষের

এসএসকেএমের স্ত্রীরোগ বিভাগের শিশু শল্য চিকিৎসক শিশুটিকে পরীক্ষা করে যে রিপোর্ট দেন, তাতে যৌন নির্যাতনের উল্লেখ রয়েছে। সেই নির্যাতন এতই তীব্র যে এ দিন দুপুর পর্যন্ত তার গোপনাঙ্গে রক্ত জমাট বেঁধে ছিল। ওই রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরে শিশুটির সঙ্গে কথা বলেন তদন্তকারীরা। পুলিশ জানায়, শিশুটি বলেছে, চকলেট দেওয়ার নাম করে তাকে শৌচাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই ঘটে যৌন নির্যাতন। শুক্রবার বিকেলেই অবশ্য শিশুটিকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

মেয়েটি কী বলেছে জানার পরেও ঘটনার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন স্কুলের প্রিন্সিপ্যাল শর্মিলা নাথ। তার জেরে এ দিন সকাল থেকেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে স্কুল চত্বর। অভিভাবকেরা দাবি করেন, প্রিন্সিপ্যালকে সকলের সামনে দাঁড়িয়ে গোটা ঘটনা বিশদে জানাতে হবে। শর্মিলাদেবী উল্টে অভিভাবকদের চ্যালেঞ্জ করে বলেন, ‘‘আমাকে ডাক্তারি রিপোর্ট দেখাতে পারবেন?’’ এমন কথা শুনে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। প্রিন্সিপ্যালের পদত্যাগ ও গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হয়। অনেক রাত পর্যন্ত সেই বিক্ষোভ চলে।

প্রতিবাদ: রানিকুঠির জিডি বিড়লা সেন্টার ফর এডুকেশনে ছাত্রীকে নির্যাতনের ঘটনায় স্কুলের বাইরে অভিভাবকদের বিক্ষোভ।

খবর পেয়ে রাজ্যের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা কলকাতা শিশু কল্যাণ সমিতিকে স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলার নির্দেশ দেন। কিন্তু সমিতির সদস্যদের দীর্ঘক্ষণ স্কুলে বসিয়ে রাখা হয় বলে অভিযোগ। পরে প্রিন্সিপ্যালের সঙ্গে কথা বললেও তাঁর বক্তব্যে খুশি হতে পারেননি বলে জানান সমিতির সদস্যরা। রাজ্যের শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তীও স্কুলে গিয়ে কথা বলেন প্রিন্সিপ্যালের সঙ্গে। অনন্যাও বলেন, ‘‘স্কুল কর্তৃপক্ষের ভূমিকায় আমি একদমই খুশি নই।’’

শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘বর্বরোচিত ঘটনা। নিন্দা করার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।’’ বিকেলে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তিন সদস্যের একটি দল স্কুলে গিয়ে সরেজমিনে সব খতিয়ে দেখেন। আজ, শনিবার তাঁদের রিপোর্ট দেওয়ার কথা।

ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

Sexual Assault জি ডি বিড়লা স্কুল GD Birla School G.D. Birla Centre For Education
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy